২৪ মার্চ, ১৯৬১ তারিখে ভিক্টোরিয়ার কোবার্গ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম-পেস কিংবা অফ-ব্রেক বোলিং করতে পারতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
ভিক্টোরিয়ার মাউন্ট ওয়াভার্লি হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ৬ ফুট (১.৮২ মিটার) উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। ১৯৮১-৮২ মৌসুম থেকে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়া এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ার ও ডারহামের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তন্মধ্যে, ১৯৯৬ সালে ডার্বিশায়ারের ক্যাপ লাভ করেন। একই বছর দলের অধিনায়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন ও ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৮৪ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৫২ টেস্ট ও ১৬৪টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে কিম হিউজের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ গমন করেন। ২২ বছর বয়সে ১৬ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ঐ খেলায় তিনি ৪৮ ও ৫ রান তুলেছিলেন। অ্যালান বর্ডারের অসাধারণ ব্যাটিং সাফল্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৮৬ সালে মাদ্রাজের খ্যাতনামা টাই টেস্টের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। ঐ টেস্টে ২১০ রানের দ্বি-শতক হাঁকিয়েছিলেন। ঐ ইনিংসের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছিল।
১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। এছাড়াও, ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে নিজ দেশে রঞ্জন মাদুগালে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টটিতে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১০২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ শতকে ইনিংস ও ১০৮ রানের ব্যবধানে শ্রীলঙ্কা দলের শোচনীয় পরাজয় ঘটেছিল। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৯-৯০ মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে হোবার্টে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৩ ও ১১৮* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে স্টিভ ওয়াহ’র (১৩৪*) সাথে পঞ্চম উইকেটে ২৬০ রানের নিরবচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। তবে, অরবিন্দ ডি সিলভা’র প্রাণান্তঃকর ব্যাটিং স্বত্ত্বেও স্বাগতিকরা ১৭৩ রানে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
১৯৮৯-৯০ মৌসুমে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৫ মার্চ, ১৯৯০ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ ও ০ রান সংগ্রহ করেন। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক জন রাইটের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পায়।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ২৮ আগস্ট, ১৯৯২ তারিখে কলম্বোর আরপিএসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৭৭ ও ১০০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। টেস্টগুলো থেকে ৪৬.৫৫ গড়ে ১১ শতক সহযোগে ৩৬৩১ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
৬ এপ্রিল, ১৯৯৪ তারিখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তারপরও খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। অতঃপর, ১৯৯৮ সালে সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে বিদেয় নেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ঝুঁকে পড়েন। অক্টোবর, ২০১৭ সালে আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে মনোনীত হন। এছাড়াও, ধারাভাষ্যকারের দায়িত্ব পালন করতেন। আইপিএলের ধারাভাষ্য দলের মনোনীত সদস্য ছিলেন।
১৯৮৭ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার ও ১৯৯০ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ২০০৬ সালে রাণীর জন্মদিনের সম্মাননা হিসেবে অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া পদবীতে ভূষিত হন। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। জেন জোন্স নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির ইসাবেলা জোন্স ও ফোবি জোন্স নাম্নী দুই কন্যা এবং কোবি জোন্স নামীয় পুত্র সন্তান রয়েছে। ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে ভারতের মুম্বইয়ে হৃদযন্ত্রক্রীয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৫৯ বছর ১৮৪ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। করাচী কিংসের প্রধান কোচ ছিলেন। তাঁর দেহাবসানের ফলে হার্শেল গিবসকে এ দায়িত্বের জন্যে মনোনীত করা হয়। তাঁর সম্মানার্থে খেলোয়াড়েরা এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। চা বিরতি চলাকালে তাঁর কন্যা উইকেটের স্ট্যাম্পের কাছে ব্যাট রাখে। সিডনি হার্বার ব্রিজে পতাকা অর্ধ-নমিত রাখা হয়।
