|

ডেল হ্যাডলি

৬ জানুয়ারি, ১৯৪৮ তারিখে ক্রাইস্টচার্চের রিকার্টন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার ছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

পেস বোলিং করতেন। দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলিং না করলেও ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হতেন। এছাড়াও, বলকে সুইং করাতে পারতেন। শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে পারতেন না। ক্রমাগত পিঠের আঘাতের ফলে পেসের উপর জোড় দেননি। এরপর থেকে আর একইমানের বোলার হিসেবে আবির্ভূত হননি। তবে, বলে আরও নিয়ন্ত্রণ আনেন। বিখ্যাত ক্রিকেটার ওয়াল্টার হ্যাডলি’র পাঁচ সন্তানের অন্যতম এবং কিংবদন্তীতূল্য তারকা স্যার রিচার্ড হ্যাডলি’র জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা তিনি। তবে, খেলোয়াড়ী জীবনে সহোদরের সাফল্যে বেশ ম্লান হয়ে পড়েন।

১৯৬৬-৬৭ মৌসুম থেকে ১৯৮৩-৮৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারির প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৬৯ থেকে ১৯৭৮ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ২৬ টেস্ট ও ১১টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালে গ্রাহাম ডাউলিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৪ জুলাই, ১৯৬৯ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। হ্যাডলি হাওয়ার্থ ও কেন ওয়াডসওয়ার্থের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ১/৪৮ ও ১/৪৩ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১ ও ১৯ রান সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ২৩০ রানে পরাজয়বরণ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে যায়।

১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে বেভান কংডনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৩ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৪/১০২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২ ও ৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দল ইনিংস ও ২৫ রানের ব্যবধানে জয় তুলে নিলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই মৌসুমের ফিরতি সফরে নিজ দেশে ইয়ান চ্যাপেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১ মার্চ, ১৯৭৪ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ইয়ান ডেভিসের দ্বিতীয় উইকেট লাভ করে টেস্টে নিজস্ব ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২/১০৭ ও ২/১০৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৯ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রেগ চ্যাপেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৭ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৩৭* ও ৮* রান সংগ্রহ করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বেভান কংডনের সাথে নিরবচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলের নিশ্চিত পরাজয় ঠেকান। শেষ ৫২ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে বীরোচিত ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/১৩০ ও ১/২৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

আঘাতের কারণে বেশ আগেভাগেই ৩০ বছর বয়সে তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করতে হয়। ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে নিজ দেশে জিওফ বয়কটের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১ ও ২ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ০/৪৭ ও ০/০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঐ টেস্টে নিউজিল্যান্ড দল প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে পরাভূত করেছিল। ৭২ রানে জয়লাভ করে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর আরও পাঁচ-ছয় বছর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। সাড়ে তিন শতাধিক উইকেট পান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্বল্প সময় অবস্থান করলেও ওডিআইয়ে যথেষ্ট ভালো ফলাফল করেছিলেন।

খেলোয়াড়ী জীবন শেষে কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। নিউজিল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর, বোলিং কোচের দায়িত্ব পান। দুবাইভিত্তিক আইসিসি’র গ্লোবাল ক্রিকেট একাডেমিতে যুক্ত হন।

Similar Posts

  • | | |

    ওয়াসিম আকরাম

    ৩ জুন, ১৯৬৬ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হতেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘সুইংয়ের সুলতান’ নামে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেন। স্বপ্নবাজ ক্রিকেটার হিসেবেও সবিশেষ সুনাম কুড়ান। স্বর্ণালী সময়ে অধিকাংশ তরুণ বোলারের স্বপ্নের তারকা…

  • | | |

    এভারটন উইকস

    ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৫ তারিখে বার্বাডোসের পিকউইক গ্যাপ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, রেফারি ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। সেন্ট লিওনার্ডস বয়েজ স্কুলে অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে, হোটেল ম্যানেজম্যান্ট বিষয়ে পড়াশুনো করেছেন। তবে,…

  • |

    বিলি নিউহাম

    ১২ ডিসেম্বর, ১৮৬০ তারিখে শ্রপশায়ারের হলি ক্রস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ফুটবলার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৮৮০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। আর্ডিংলিতে পড়াশুনো করেছেন। ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত ঐ কলেজে শিক্ষকতা করেন। সর্বক্রীড়ায় দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮৮১ থেকে ১৯০৫ সময়কালে…

  • |

    আলফ্রেড আর্চার

    ৬ ডিসেম্বর, ১৮৭১ তারিখে সারের রিচমন্ড-আপোন-টেমস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৮৯০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। হেইলিবারিভিত্তিক বিদ্যালয় দলের প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ পাননি। তবে, ওরচেস্টারশায়ার কোল্টসের পক্ষে এক খেলায় অংশগ্রহণকারী জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হুবার্টের তুলনায় ভালো খেলতেন। ১৮৯৮-৯৯ মৌসুম থেকে ১৯০৩ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর…

  • | |

    হিউ ম্যাসি

    ১১ এপ্রিল, ১৮৫৪ তারিখে ভিক্টোরিয়ার বেলফাস্টের কাছাকাছি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৮৮০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রতিনিধিত্ব করতেন। ১৮৭৭-৭৮ মৌসুম থেকে ১৮৯৫ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ১৮৮১…

  • | |

    ডেভ হোয়াটমোর

    ১৬ মার্চ, ১৯৫৪ তারিখে সিলনের কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। খুবই ছোটবেলা অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। কার্যকর ব্যাটসম্যান ও অসাধারণ ফিল্ডার হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুম থেকে ১৯৮৮-৮৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন সরব রেখেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়া…