|

দাত্তু ফাড়কর

১২* ডিসেম্বর, ১৯২৫ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম কিংবা ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

১৯৪২-৪৩ মৌসুম থেকে ১৯৫৯-৬০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলা, হিন্দু, মহারাষ্ট্র, বোম্বে ও রেলওয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। দলের ভারসাম্য বজায় রাখতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। অমর সিংয়ের উত্তরসূরী ও কপিল দেবের পূর্বসূরী হিসেবে নিজেকে ভারতের প্রকৃত মানসম্পন্ন অল-রাউন্ডারে পরিণত করেন।

১৯৪৭ থেকে ১৯৫৯ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৩১ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে লালা অমরনাথের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ডন ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে ভারত দল ৪-০ ব্যবধানে পরাজিত হলেও তিনি তাঁর অল-রাউন্ড দক্ষতা প্রদর্শনে সচেষ্ট ছিলেন। বিনু মানকড় বিশ্বমানসম্পন্ন অল-রাউন্ডারের গুণাবলীর অধিকারীকে চিহ্নিত করেছিলেন। ১২ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। আট নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নামেন। ব্যাটিং অনুপযোগী পীচে দলের সংগ্রহ ৯৫/৬ থেকে ১৮৮ রানে নিয়ে যান। তিনি ৫১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। স্বাগতিক দল ব্যাটিংয়ে নামলে ১০ ওভারে ১৪/৩ লাভ করেন। তবে, বিজয় হাজারে’র অনবদ্য বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া দল ১০৭ রানে গুটিয়ে যায়। বৃষ্টির কারণে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল এবং স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত পরবর্তী টেস্টের মাধ্যমে ভারতের একাধারে তিন খেলায় পরাজিত হয়। ৮০/১ পেলেও তিনি তারকা ক্রিকেটার ডন ব্র্যাডম্যানকে ১৩২ রানে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বিদেয় করেন। এরপর, ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা তাঁকে অবলোকন করতে হয়।

অ্যাডিলেড টেস্টে সাত নম্বরে নেমে ১২৩ রান তুলেন। এ পর্যায়ে বিজয় হাজারে’র সাথে ১৮৮ রানের জুটি গড়েন। এরপর, মেলবোর্নে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে ৫৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। সিরিজ শেষে ৫২.৩৩ গড়ে ৩১৪ রান তুলে গড়ের দিক দিয়ে শীর্ষে আরোহণ করেন। এছাড়াও, ৩১.৭৫ গড়ে আট উইকেট দখল করেছিলেন। ভারত দল আরেকজন প্রকৃত অল-রাউন্ডারের সন্ধান পায়। ব্যাটিংকালে তিনি মারকুটে ভঙ্গীমায় অগ্রসর হতেন ও বলকে দুই দিক দিয়েই ফেলতে পারতেন।

তাঁর উচ্চমানের ক্রীড়াশৈলী সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে দেখা যায়। দিল্লিতে ৪১, বোম্বেতে ৭৪ রানের ইনিংস খেলার পর মাদ্রাজে ব্যাট হাতে ৪৮ রান সংগ্রহসহ বল হাতে ৭/১৫৯ পান। তবে, বোম্বেতে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে চিত্তাকর্ষক খেলা উপহার দেন। ৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও অল্পের জন্যে স্বাগতিক দল জয় পায়নি। ৩৬১ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে ভারত দল ৩৫৫/৮ করতে পেরেছিল।

১৯৫১-৫২ মৌসুমে ইংল্যান্ড দল ভারত সফরে আসলেও তিনি স্বর্ণালী সময়ে অবস্থান করছিলেন। কলকাতায় ১১৬ রানের নিজস্ব দ্বিতীয় শতক হাঁকান। এছাড়াও, চার উইকেট পেয়েছিলেন। মাদ্রাজে ভারত দল তাদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জয় পায়। এ খেলায়ও তিনি ৬১ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন। এ সময়ে তাঁর পরিসংখ্যানগুলো বিশ্বের যে-কোন সেরা অল-রাউন্ডারের সাথে তুলনা করা হতো। ১২ টেস্ট থেকে ৪৩.৭০ গড়ে ৭২৯ রান এবং ৩১.৪৪ গড়ে ২৯ উইকেট পেয়েছিলেন।

১৯৫২ সালে অস্টার্লি পার্কে ইন্ডিয়ান জিমখানা ক্লাবের বিপক্ষে ১৫৮ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলেছিলেন। ১৯৫২ সালে ইংল্যান্ডে শোচনীয় ফলাফল করে ভারত দল। ৭০ গড়ে তিনি মাত্র তিন উইকেটের সন্ধান পেয়েছিলেন। তবে, ৬৪ রানের আরও একটি দারুণ ইনিংস খেলেছিলেন। এ সফরে সাত ইনিংস থেকে মাত্র ১২২ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। বিস্ময়করভাবে তাঁর সুইং বোলিং ইংরেজ পরিবেশের সাথে খাঁপ খায়নি।

১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে নিজ দেশে জেরি আলেকজান্ডারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৫৮ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। একমাত্র ইনিংসে ১৭৩ রান খরচ করেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। এছাড়াও, ৩ ও ৩৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ইনিংস ও ৩৩৬ রানে জয়লাভ করে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

১৭ মার্চ, ১৯৮৫ তারিখে ৫৯ বছর ৯৫ দিন বয়সে তামিলনাড়ুর মাদ্রাজে তাঁর দেহাবসান ঘটে। সাতজন খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে বিসিসিআই থেকে মরণোত্তর সম্মাননাপ্রাপ্ত হন।

Similar Posts

  • |

    সিড ও’লিন

    ৫ মে, ১৯২৭ তারিখে কেপ প্রভিন্সের অটশুর্ন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। এছাড়াও, বামহাতে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ১৯৬০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। জন্মসনদে তাঁকে সিডনি ও’লিনস্কি নামে পরিচিতি ঘটানো হয়েছিল। ১৯৪৫-৪৬ মৌসুম থেকে ১৯৬৫-৬৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ…

  • | | |

    অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার

    ২৮ এপ্রিল, ১৯৬৮ তারিখে কেপ প্রদেশের কেপটাউন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে বামহাতে ইনিংসে উদ্বোধনে নামতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ফ্লাওয়ার ভ্রাতৃদ্বয়ের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ। ‘পেটালস’ ডাকনামে পরিচিত অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী।…

  • | |

    অ্যালান ডসন

    ২৭ নভেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে কেপ প্রভিন্সের কেপটাউনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুম থেকে ২০০৫-০৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে কেপ কোবরাস…

  • |

    নাসির হোসেন

    ৩০ নভেম্বর, ১৯৯১ তারিখে রংপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলছেন। মাঝারিসারিতে নিচেরদিকে ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। নিজের সেরা দিনগুলোয় বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এছাড়াও, দলের পঞ্চম বোলার হিসেবে ব্যবহৃত হন।…

  • | |

    সাদিক মোহাম্মদ

    ৩ মে, ১৯৪৫ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের গুজরাতের জুনাগড়ে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও আম্পায়ার। মূলতঃ ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৬০-৬১ মৌসুম থেকে ১৯৮৪-৮৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে করাচী, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স ও…

  • |

    অন্তাও ডি’সুজা

    ১৭ জানুয়ারি, ১৯৩৯ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের গোয়ায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। পাকিস্তানের ক্রিকেটের ইতিহাসের শুরুরদিকের অন্যতম ফাস্ট বোলার। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুম থেকে ১৯৬৬-৬৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…