৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
বিপজ্জ্বনক আউট-সুইঙ্গারের পাশাপাশি পেস বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম দ্রুততম গতিদানবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। দৃশ্যতঃ রিচার্ড হ্যাডলি’র উপযুক্ত উত্তরসূরী ছিলেন।১৯৮০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৯০-এর দশকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড দলের প্রধান বোলিং চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, ইয়র্কার ও ধীরগতিতে কাটার প্রয়োগ করতে পারতেন। কার্যতঃ ওডিআইয়ে অধিক কার্যকর ভূমিকা রাখতেন। তবে, ব্যাটিংয়ে মোটেই সুবিধের ছিলেন না।
১৯৮৫-৮৬ মৌসুম থেকে ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ড এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৮৭-৮৮ মৌসুম থেকে ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৪৮ টেস্ট ও ৯৬টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ৩১ অক্টোবর, ১৯৮৭ তারিখে নাগপুরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। অল্প কিছুদিন পর ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে জেফ ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমনের জন্যে মনোনীত হন। ৪ ডিসেম্বর, ১৯৮৭ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৪/৮৬ ও ০/৩২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ডেভিড বুনের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
জনি হেস ও বেভান কংডনের পর তৃতীয় নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটার হিসেবে একই টেস্টে বোলিং ও ব্যাটিং উদ্বোধন করার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে ভারতের বিপক্ষে এ কীর্তিগাথায় নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া ঐ সিরিজে তিনবার পাঁচ-উইকেটের সন্ধান পেয়েছিলেন। সিরিজ থেকে ২৭.৮৭ গড়ে ১৬ উইকেট লাভ করেন। এ সংগ্রহটি রিচার্ড হ্যাডলি’র চেয়ে চারটি বেশী ছিল।
ট্রান্স-তাসমান ট্রফিতে অপূর্ব বোলিংশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ওয়েলিংটনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭/৮৯ লাভ করেন। নিজের সেরা দিনগুলোয় বলকে বেশ উঁচুতে ফেলতে পারতেন। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিউজিল্যান্ডের পক্ষে দারুণ বোলিং করেন।
১৯৯০ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর জন রাইটের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ৭ জুন, ১৯৯০ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৯৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। মাইক অ্যাথার্টনের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯০-৯১ মৌসুমে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মার্টিন ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে পাকিস্তান সফরে যান। ১০ অক্টোবর, ১৯৯০ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে জাভেদ মিয়াঁদাদকে বিদেয় করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। বল হাতে নিয়ে ২/৮৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৪ ও ০ রান তুলে উভয় ক্ষেত্রে ওয়াসিম আকরামের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। শোয়েব মোহাম্মদের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৪৩ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ৩১ জানুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে ওয়েলিংটনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/১৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, দলীয় অধিনায়ক মার্টিন ক্রো’র অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নিজ দেশে জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২ জানুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/৬৯। খেলায় তিনি ৩/৪২ ও ৫/৪১ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৩* ও ০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ওয়াসিম আকরামের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩৩ রানে পরাজিত হয়।
ব্যাট হাতে নিয়ে মোটেই সুবিধে করতে পারেননি। ব্যাঙ্গাত্মকভাবে তাঁকে ‘দ্য ডাকম্যান’ নামে পরিচিতি ঘটানো হতো। অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলো থেকে ২৪বারই শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন ও তৎকালীন অমর্যাদাকর বিশ্বরেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। তাসত্ত্বেও ব্যাট হাতে নিয়ে সর্বশেষ চমক দেখান।
১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে কেন রাদারফোর্ডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪/৭০ ও ১/২৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২৪* ও ১২ রান সংগ্রহ করেন। তন্মধ্যে, খেলার প্রথম দিন শেন থমসনের সাথে নবম উইকেটে ৬৬ রানের জুটি গড়েন। ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্সের চমৎকার অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ২৭ এপ্রিল, ১৯৯৬ তারিখে সেন্ট জোন্সে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে নিজস্ব ২৪তম শূন্য রানের সন্ধান পান। এরফলে, টেস্টে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। খেলায় তিনি ০ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/১২৪ ও ৫/৬১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক অ্যাথার্টনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৯৭ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬* ও ১৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, শেষ দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে নাথান অ্যাশলে’র সাথে শেষ উইকেটে ১৬৬ মিনিটে ১০৬ রানের নিরবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে প্রতিপক্ষের জয় মধ্যাহ্নভোজনের পর থেকে নস্যাৎ করে দেন। এ পর্যায়ে নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডের মধ্যকার নতুন রেকর্ড গড়েন। এরফলে, ১৯৪৯ সালে লিডসে এফএলএইচ মুনি ও জে কাউয়ি’র মধ্যকার ৫৭ রানের পূর্বেকার রেকর্ড ম্লান হয়ে যায়। এছাড়াও, টেস্টের ইতিহাসে ত্রয়োদশ ঘটনা হিসেবে শেষ উইকেটে শতরানের জুটি হিসেবে চিত্রিত হয়। সর্বশেষ, ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে সিএল হুপার ও সিএ ওয়ালশ অ্যান্টিগুয়ায় পাকিস্তানের বিপক্ষে শতরানের জুটি গড়েছিলেন। ১৯৭২-৭৩ মৌসুমে অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তানের মধ্যকার খেলায় বিএফ হ্যাস্টিংস ও আরও কলিঞ্জ দশম উইকেটে সর্বোচ্চ ১৫১ রানের জুটি গড়েছিলেন। সর্বোপরি, তাঁদের শতরানের জুটিটি নিউজিল্যান্ডের পক্ষে তৃতীয় ঘটনা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তিনি ১৩৩ বল মোকাবেলা করে ১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন ও নাথান অ্যাশলে ১০২ রানে অপরাজিত ছিলেন। পাশাপাশি, ৩/১০৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, ৩১ বছর বয়সী ড্যানি মরিসনের এটিই সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয় ও দল থেকে বাদ পড়েন।
সব মিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে ১৬০ উইকেট দখল করেছিলেন। ১৯৯০ সালে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট অ্যালমেনাক কর্তৃক বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে প্রত্যাখ্যাত হলেও ১৯৯৭ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত অকল্যান্ডের পক্ষে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। অবসর গ্রহণের পর ফক্স স্পোর্টসে ধারাভাষ্যকার ও বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অসাধারণ বাগ্মীতা ও উত্তেজনা নিয়ে তাঁর ধারাভাষ্য বিশ্বব্যাপী বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত টি২০ লীগে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে।
১৯৯৭ সালে ‘ম্যাড অ্যাজ আই ওয়ানা বি’ শীর্ষক স্বীয় আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইতিবাচকতা আসলেও নিউজিল্যান্ডের ধারাভাষ্যকার রিচার্ড হুইটিং গ্রন্থটির বিষয়বস্তু মানসিক হিসেবে চিত্রিত করেন। পরবর্তীতে ‘ড্যানি মরিসন জুনিয়র ক্রিকেট ডাইরি’ শীর্ষক গ্রন্থ লেখেন। তাঁর বোন আত্মহত্যা করে। কুইন্সল্যান্ডে বসবাস করতে থাকেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। কিম নাম্নী এক রমণীকে বিয়ে করেন। টেলা ও জ্যাকব নামীয় দুই সন্তান রয়েছে। ক্রিকেটের বাইরে বিচ ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে নিউজিল্যান্ড বিচ ক্রিকেট দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
