|

দানিশ কানেরিয়া

১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮০ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। লেগ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

পাকিস্তানের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্পিনার ছিলেন। শারীরিক গড়নের কারণে চমৎকার বাউন্স করতে পারতেন। বলকে তেমন শূন্যে না ভাসালেও উল্লেখযোগ্যভাবে বলকে বাঁক খাওয়াতে পারতেন। তবে, গুগলিতে অতিরিক্ত সফলতা পেয়েছিলেন। ভালোমানের অধিনায়ক বা অপর প্রান্তে সহযোগী বোলারের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাননি। বিশেষতঃ উপযুক্ত উইকেট-রক্ষকের অভাবে পর্যাপ্ত সফলতা লাভ করা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন।

পাঁচজন খ্রিস্টান, দুইজন হিন্দু ও একজন পার্সি ধর্মাবলম্বীর মধ্যে অন্যতম অ-মুসলিম হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছিলেন। শ্রী প্রভাশঙ্করভাই লালজিভাই কানেরিয়া ও শ্রীমতি ববিতাবেন প্রভাশঙ্করভাই কানেরিয়া দম্পতির সন্তান। কাকাতো ভাই অনিল দলপতের পর দ্বিতীয় হিন্দু হিসেবে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ধর্মিতা কানেরিয়া নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির পারিসা কানেরিয়া নাম্নী কন্যা ও দানিশ কানেরিয়া জুনিয়র নামীয় পুত্র রয়েছে। ভারতের রাজস্থানের ব্যবসায়িক সমাজের মারোয়াড়ী হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য তিনি। সাংস্কৃতিক প্রভাবে কথার মাঝে ‘ইনশাল্লাহ’ বলে থাকেন। সুরাটের কাছাকাছি এলাকায় পারিবারিক গোড়াপত্তন ঘটা সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। ২০০৫ সালে ভারত সফরে দ্য টেলিগ্রাফে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, ‘যথাসম্ভব আমি মন্দির পরিদর্শন করি ও প্রার্থনা জানাই।’ এছাড়াও তিনি ধর্মশালায় মন্দির পরিদর্শনে যান।

৬ ফুট ১ ইঞ্চি (১.৮৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুম থেকে ২০১১-১২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, পাকিস্তান ন্যাশনাল শিপিং কর্পোরেশন ও পাকিস্তান রিজার্ভস এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৯৮ সালে ন্যাশনাল শিপিং কর্পোরেশনের সদস্যরূপে এইচবিএলের বিপক্ষে খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে বারোবার খেলায় দশ বা ততোধিক উইকেট ও ৭১বার পাঁচ-উইকেট পেয়েছেন। ২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ইংরেজ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে এসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০৫ সালে সাতটি খেলা থেকে ৩২ উইকেট দখল করেছিলেন।

২০০০ থেকে ২০১০ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সব মিলিয়ে ৬১ টেস্ট ও ১৮টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২০০০-০১ মৌসুমে নিজ দেশে নাসের হুসাইনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২০ বছর বয়সে ২৯ নভেম্বর, ২০০০ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ইকবাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক পর্বটিকে বেশ স্মরণীয় করে রেখেছিলেন। ব্যাটিং উপযোগী পিচে নিজস্ব দ্বিতীয় বলে মার্কাস ট্রেস্কোথিকের উইকেট লাভের কৃতিত্ব দেখান। অধিনায়ক মঈন খানের পরামর্শক্রমে গুগলি বোলিং করে স্ট্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে এ সফলতা পান। প্রথম ইনিংসে ২/৮৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়লেও দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট লাভে ব্যর্থ হন। খেলায় তিনি ১১৯ রান খরচ করে দুই উইকেটের সন্ধান পেয়েছিলেন। টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। এছাড়াও, সিরিজের বাদ-বাকী খেলাগুলোয়ও তেমন সফলতা পাননি। সব মিলিয়ে ঐ সিরিজে ৫৪.২৫ গড়ে চার উইকেট পেয়েছিলেন।

এরপর থেকে ক্রমাগত সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত খেলে দলে স্বীয় স্থান পাকাপোক্ত করতে সমর্থ হন। প্রতিকূল পরিবেশেও প্রতিপক্ষীয় ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হন।

২০০১-০২ মৌসুমে ওয়াকার ইউনুসের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে বাংলাদেশ সফরে যান। ১৬ জানুয়ারি, ২০০২ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৪/৬২ ও ০/৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, মোহাম্মদ ইউসুফের দ্বি-শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১৬৯ রানে জয় পেয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ করে নেয়। ১৩ উইকেট দখল করে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

একই মৌসুমে নিজ দেশে ফিরতি সফরে নাইমুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ২৯ আগস্ট, ২০০১ তারিখে মুলতানে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত বোলিংশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ৬/৪২ ও ৬/৫২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৬৪ রানে জয় পায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

টেস্ট অভিষেকের এক বছর পর ৩১ অক্টোবর, ২০০১ তারিখে শারজাহ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অভিষেক ঘটে। সচরাচর দলে দুইজন স্পিন অল-রাউন্ডারকে নেয়ায় মাত্র ১৮টি ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুতে নিজেকে মেলে ধরতে কিছুটা সময় নেন। একবার সফলতা পাবার পর থেকে পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। পরবর্তীতে বিদেশের মাটিতেও সফলতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন।

২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১ মে, ২০০২ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, খেলায় তিনি ১/১৯ ও ৫/১১০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ইনজামাম-উল-হকের অসাধারণ ত্রি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩২৪ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

২০ মে, ২০০৩ তারিখে ক্ষুদ্রতর সংস্করণের খেলায় সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ডাম্বুলায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে ৩/৩১ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। পরবর্তীকালে এটিই তাঁর সেরা বোলিং বিশ্লেষণে পরিণত হয়। নিম্নমূখী রান সংগ্রহের ঐ খেলায় পাকিস্তান দলকে জয় এনে দেন।

২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিং বকসের মুখোমুখি হন। অক্টোবর, ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নাকানিচুবানী খাওয়ান। ১৭ অক্টোবর, ২০০৩ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৪৬ বোলিং করে দলের বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ২/৬৫ বোলিং বিশ্লেষণ গড়েন। এছাড়াও, তৌফিক ওমরের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। তৌফিক ওমরের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে মারভান আতাপাত্তু’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৮ অক্টোবর, ২০০৪ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। খেলায় দশ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৭/১০৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান ও দলকে ছয় উইকেটের জয় এনে দেন। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ৩/৭২ পেয়েছিলেন। এরফলে, স্বাগতিকরা সিরিজ ড্র করতে সক্ষম হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

এ বছরের পর থেকে স্পিন বোলিংয়ের মাধ্যমে পাকিস্তানের বিজয়ে অন্যতম অনুসঙ্গে পরিণত হন। তবে, প্রায়শঃই জয়ের এ ধারা উপমহাদেশীয় পিচেই পেয়েছিলেন। বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার রিচি বেনো মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি অন্যতম সেরা গুগলি বোলার। কিন্তু, দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার কারণে নিষেধাজ্ঞার কবলে নিপতিত হন ও চমৎকার খেলোয়াড়ী জীবনের যবনিকাপাত ঘটে ‘ন্যানি-ড্যানি’ ডাকনামে খ্যাত দানিশ কানেরিয়ার।

২০০৪ সালের পর থেকে সেরা সময় অতিবাহিত করতে থাকেন। এ পর্যায়ে শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে বেশ সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। পাকিস্তানের পক্ষে শেষ বছর খেলাকালীন তাঁর স্ট্রাইক রেট বেশ বেড়ে গিয়েছিল। ২০০৫ সালে অনবদ্য খেলা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল কর্তৃক বর্ষসেরা আইসিসি টেস্ট প্লেয়ারের জন্যে মনোনীত হন। একবার বিবিসিতে ‘লেগ-ব্রেকের মাধ্যমে খেলা বিজয়ী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

অক্টোবর, ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে দূর্দান্ত খেলেন। খেলায় তিনি দশ-উইকেট দখল করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৭/১১৮ বোলিং করেছিলেন। এরফলে, করাচীতে অনুষ্ঠিত টেস্টে পাকিস্তান দল ছয় উইকেটের ব্যবধানে জয়লাভে সক্ষম হয় ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সমতা আনে। এরপর, এসেক্সের বিপক্ষে দুই বছর মেয়াদে চুক্তি নবায়ণ করেন।

ডিসেম্বর, ২০০৪ সালে আরও উইকেটের সন্ধান পেলেও আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি। উপমহাদেশের বাইরে প্রথমবারের মতো পাঁচ-উইকেটের সন্ধান পান। এমসিজিতে প্রায় ৪০ ওভার বোলিং করে ৫/১২৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। তাসত্ত্বেও, পাকিস্তান দল নয় উইকেটের ব্যবধানে পরাভূত হয়েছিল। এরপর, এসসিজিতে স্পিনবান্ধব উইকেটে ৭/১৮৮ লাভ করেছিলেন। তবে, অতিরিক্ত আবেদনের কারণে ম্যাচ ফি’র সমূদয় অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।

মার্চ, ২০০৫ সালে ভারতের মাটিতে চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ৩১.৫২ গড়ে ১৯ উইকেট নিয়ে সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের মর্যাদা পান। দুইবার পাঁচ-উইকেটের সন্ধান পান। তন্মধ্যে, ব্যাঙ্গালোরে পাঁচ-উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে সিরিজে সমতায় আনতে সহায়তা করেছিলেন। জুন, ২০০৫ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন। সাবিনা পার্কে ৫/৪৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে সমতা আনেন। স্মর্তব্য যে, ১৯৮৮ সালের পর ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এটিই পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট জয় ছিল।

সেপ্টেম্বর, ২০০৫ সালে এসেক্সের বীরে পরিণত হন। দশটি একদিনের খেলায় অংশ নিয়ে ১৬ উইকেট দখল করেন। ন্যাশনাল লীগ ডিভিশনের প্রথম বিভাগে এসেক্সের শিরোপা বিজয়ে অংশ নেন। অথচ, তখনও তিনি পাকিস্তানের ওডিআই দলে আসা-যাবার পালায় অবস্থান করছিলেন।

জানুয়ারি, ২০০৭ সালে আবারও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ২০০৬ সালে তেমন সুবিধে করতে না পারলেও নতুন বছরে দূরন্ত সূচনা করেন। পোর্ট এলিজাবেথে অনুষ্ঠিত টেস্টে ১৪১ রান খরচায় ৭ উইকেট দখল করেছিলেন। ঐ টেস্টে পাকিস্তান দল পাঁচ উইকেটে জয় পায়। প্রথম ইনিংসে ৩/৩৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে প্রতিপক্ষকে ১২৪ রানে গুটিয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন। ফলশ্রুতিতে, বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় পাকিস্তান দলের সদস্যরূপে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অক্টোবর, ২০০৭ সালে ২০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। নিজ দেশে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্টে তিনি এ সফলতা পান। এরফলে, ২০০০ সালের পর দেশের শীর্ষ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন।

২০০৯ সালে ইউনুস খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২০ জুলাই, ২০০৯ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৫/৬২ ও ২/১১৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, কুমার সাঙ্গাকারা’র ব্যাটিং সাফল্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয় পায়।

ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে নিজের প্রতিভা বিকাশে সোচ্চার হন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্ট থেকে ১৩ উইকেট পেয়েছিলেন। পুণরায় তিনি পাকিস্তানের স্পিনারদের আতঙ্করূপে নিজেকে পুণঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। জানুয়ারি, ২০১০ সালে সিডনিতে পাঁচ উইকেট লাভ করেন। এ পর্যায়ে কামরান আকমল তাঁর বলে অনেকগুলো ডিসমিসাল ঘটাতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে, পরাজয়ের কবলে পড়ে তাঁর দল।

দৃশ্যতঃ ২০১০ সালে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। এ পর্যায়ে তাঁর বয়স ছিল ৩০ বছর। টেস্টগুলো থেকে ৩৪.৭৯ গড়ে ২৬১ উইকেট দখল করেন। ইনিংসে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ৭/৭৭। ২৯ আগস্ট, ২০০১ তারিখ মুলতানে শুরু হওয়া এশিয়ান টেস্টে চ্যাম্পিয়নশীপের খেলায় ৯৪ রান খরচায় ১২ উইকেট দখল করেছিলেন। উভয় ইনিংসেই ছয়-উইকেট লাভ করেছিলেন। উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের বিপক্ষে এ সফলতা পান ও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

ওয়াসিম আকরামের ৪১৪, ওয়াকার ইউনুসের ৩৭৩ ও ইমরান খানের ৩৬২ উইকেট লাভের পর পাকিস্তানের সর্বকালের সর্বোচ্চ উইকেটধারীর তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন। অপরদিকে, কিংবদন্তী স্পিনার আব্দুল কাদিরের ২৩৬, সাকলাইন মুশতাকের ২০৮ ও মুশতাক আহমেদের ১৮৫ উইকেটকে পাশ কাটিয়ে পাকিস্তানের স্পিনারদের সর্বকালের তালিকায় নিজেকে শীর্ষে নিয়ে যান। এছাড়াও, ইংল্যান্ড ছাড়া প্রত্যেক টেস্টভুক্ত দেশের বিপক্ষে পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্ব দেখান।

দূর্ভাগ্যজনকভাবে খেলা গড়াপেটায় জড়িয়ে পড়েন। ফলশ্রুতিতে, দোষী সাব্যস্ত হলে অকালে খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ২০০৯ সালের ইংরেজ ঘরোয়া মৌসুমের ন্যাটওয়েস্ট প্রো৪০ প্রতিযোগিতায় এসেক্স বনাম ডারহামের মধ্যকার খেলার ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। ধারনা করা হয় যে, তিনি এসেক্সের দলীয় সঙ্গী মারভিন ওয়েস্টফিল্ডকে বাজে বোলিং করার বিপরীতে £৬০০০ পাউন্ড-স্টার্লিং প্রদানের প্রস্তাবনা দেন। এপ্রিল, ২০১০ সালে এসেক্স পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটনার তদন্তে নামে। এসেক্স পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। মে, ২০১১ সালে পিসিবি থেকে গঠিত স্বচ্ছতাবিষয়ক কমিটির মুখোমুখি হবার তাগিদ দেয়া হয়। তবে, কমিটিকে সহায়তা না করায় বিষয়টি আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫ এপ্রিল, ২০১২ তারিখে ইসিবি থেকে অভিযোগ আনা হয়। পাতানো খেলা বিতর্কে দানিশ কানেরিয়া ও মারভিন ওয়েস্টফিল্ডের সম্পৃক্ততায় আইনী পদক্ষেপ নেয়া হয়। দুই বছর পর ২২ জুন, ২০১২ তারিখে মারভিন ওয়েস্টফিল্ড দোষ স্বীকার করলে ইসিবি থেকে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মারভিন ওয়েস্টফিল্ডকে চার মাস কারাভোগ করতে হয়, দানিশ কানেরিয়াকে অপরাধের কারণে যে-কোন ধরনের ক্রিকেটে অংশগ্রহণের উপর আজীবন নিষেধাজ্ঞা প্রদানসহ £১০০,০০০ পাউন্ড-স্টার্লিং জরিমানা দেয়া হয়। ইসিবি’র নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানার বিরুদ্ধে £২৮,০০০ পাউন্ড-স্টার্লিং ফি দিয়ে তিনি আবেদন করেন ও তা বলবৎ থাকলে অন্যান্য খরচের ব্যয়সহ এ জরিমানা £২৫০,০০০ পাউন্ড-স্টার্লিংয়ে চলে যায়। অবশেষে, ১৮ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে দোষী সাব্যস্ত হন।

Similar Posts

  • |

    মাইক ম্যাকাউলি

    ১৯ এপ্রিল, ১৯৩৯ তারিখে নাটালের ডারবানে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে মিডিয়াম কিংবা স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ভ্রমণপ্রিয় ক্রিকেটার হিসেবে সম্যক পরিচিতি পান। পাঁচটি রাজ্য দলের পক্ষে খেলেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে…

  • | | | |

    মাইক গ্যাটিং

    ৬ জুন, ১৯৫৭ তারিখে মিডলসেক্সের কিংসবারি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী তিনি। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘গ্যাট’ ডাকনামে পরিচিতি পান। ইংল্যান্ডের তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান। দ্রুত পদচালনায় অগ্রসর হওয়াসহ স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে বেশ আগুয়ান ছিলেন। ঘরোয়া…

  • | | |

    জেরেমি কোনি

    ২১ জুন, ১৯৫২ তারিখে ওয়েলিংটনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মজবুত গড়নের অল-রাউন্ডার ছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডিংয়ে সবিশেষ পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলে স্বল্প সময়ের জন্য অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করলেও বেশ সফল ছিলেন। গড়পড়তা নিউজিল্যান্ডীয় বালকদের সাথে তাঁর শৈশবকালও তেমন বৈচিত্র্যময় ছিল না। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে রাগবি খেলায় জড়িয়ে…

  • |

    খালিদ ওয়াজির

    ২৭ এপ্রিল, ১৯৩৬ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৫০-এর দশকে পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দীর্ঘদেহী ও মজবুত গড়নের অধিকারী ছিলেন। আগ্রাসী ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। মিডিয়াম-পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডার হিসেবেও…

  • | | |

    ডেসমন্ড হেইন্স

    ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ তারিখে বার্বাডোসের হোল্ডার্স হিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ‘ডেসি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোস, ইংরেজ কাউন্টি…

  • | |

    ফ্রান্সিস ম্যাককিনন

    ৯ এপ্রিল, ১৮৪৮ তারিখে লন্ডনের প্যাডিংটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন তিনি। ১৮৭০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। হ্যারোভিয়ান হিসেবে প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ পাননি। এক পর্যায়ে কেমব্রিজের অধীনে সেন্ট জোন্স কলেজে দারুণ খেলে ব্লু আদায় করে নিতে সক্ষম হন। ১৮৭০ সালে অক্সফোর্ডের…