ড্যানিয়েল ভেট্টোরি
২৭ জানুয়ারি, ১৯৭৯ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
৬ ফুট ৩ ইঞ্চি (১.৯১ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনেই খেলাকালীন চশমা পরিধান করে খেলতেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে ২০১৪-১৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টস, ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ার ও ওয়ারউইকশায়ার এবং অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে কুইন্সল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, জ্যামাইকা তল্লাজ ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের পক্ষে খেলেছেন।
১৯৯৭ থেকে ২০১৫ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ১১৩ টেস্ট, ২৯৫টি ওডিআই ও ৩৪টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। টেস্ট অভিষেককালীন নিউজিল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। পাশাপাশি ১১২ টেস্টে অংশ নিয়ে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বাধিক খেলায় অংশগ্রহণের কৃতিত্বের অধিকারী হন। টেস্টের ঊনিশজন শীর্ষ অল-রাউন্ডারের অন্যতম হিসেবে ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক অ্যাথার্টনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরফলে, ১৮ বছর বয়স নিয়ে নিউজিল্যান্ডের কনিষ্ঠ টেস্ট অভিষেকধারীর মর্যাদা লাভ করেন। খেলায় তিনি ৩* ও ২* রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ২/৯৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। গ্রাহাম থর্পের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৬৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৪ মার্চ, ১৯৯৭ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার সাথে নিজেকে জড়ান। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৪/৯৭। এরপর, শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে এম মুরালিধরনকে বিদেয় করে এ সাফল্যকে আরও ছাঁপিয়ে যান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৪/৪৬। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি ৪/৪৬ ও ৫/৮৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৪ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১২০ রানে জয় পেয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২৯ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৯০ ও ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, প্রথম ইনিংসে ক্রিস হ্যারিসকে সাথে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে অষ্টম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১২ রানের জুটি গড়েন। ১৯৭১-৭২ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে কংডন ও কুনেছের সংগৃহীত ১৩৬ রান সর্বোচ্চ জুটির মর্যাদা পাচ্ছে। এছাড়াও, তাঁদের সংগৃহীত রান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়াসিম আকরাম ও সাকলাইন মুশতাকের সংগৃহীত ৩১৩ রান অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের মর্যাদা পাচ্ছে। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/১৬৯ ও ২/৬৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। গাই হুইটলের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে ঐ টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৭ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৪ ও ০ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৪৬ ও ২/৮৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক মার্ক টেলরের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ১৮৬ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৯৯৮ সালে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ১০ জুন, ১৯৯৮ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে এমআরসিএন বন্দরাতিলেকেকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/৮৪। এ পর্যায়ে এইচপি তিলকরত্নের চতুর্থ উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১/৫২ ও ৬/৬৪ লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ৩ রান সংগ্রহ করে উভয়ক্ষেত্রেই মুত্তিয়া মুরালিধরনের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। রমেশ কালুবিতরানা’র ব্যাটিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ১৬৪ রানে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। প্রসঙ্গতঃ টেস্টের ইতিহাসে পঞ্চম ঘটনা হিসেবে কোন দল প্রথম টেস্টে পরাজিত হলেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজ জয় করে নেয়। পূর্ববর্তী চার মৌসুমে এটি চতুর্থ ঘটনা ছিল ও প্রথম দল হিসেবে শ্রীলঙ্কা দুইবার এ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ড প্রথম দল হিসেবে প্রথম টেস্ট জয়ের পর তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে দুইবার পরাজয়বরণ করে।
১৯৯৯ সালে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২২ জুলাই, ১৯৯৯ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৫২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৬২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ম্যাট হর্নের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
২০০১-০২ মৌসুমে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৩০ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ওয়াকায় অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় ২ ও ৩ রান তুলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৬/৮৭ ও ২/১৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে ফলাফলবিহীন অবস্থায় সিরিজের সমাপ্তি ঘটে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে ইনজামাম-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০০৩ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে তৌফিক উমরের প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ১৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১/৪৭ ও ১/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৪৪ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। শোয়েব আখতারের অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয়লাভ করলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে লর্ডসে ৫/৩০ পান। এরফলে, ওডিআই অনার্স বোর্ডসে নিজের নাম লেখান। ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের চূড়ান্ত খেলাটিতে নিউজিল্যান্ড দল জয় পেয়েছিল। ৪৯.২ ওভারে নিউজিল্যান্ড দল ২৬৬ রান তুললে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমে আত্মবিশ্বাসী ছিল। তবে, ব্রায়ান লারা, শিবনারায়ণ চন্দরপল, ডিজে ব্র্যাভো, ডোয়েন স্মিথ ও রিকার্ডো পাওয়েলের উইকেটসহ দুইটি রান-আউটের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখে ক্রিকেটের স্বর্গভূমিতে দেশের শিরোপা বিজয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন।
২০০৪-০৫ মৌসুমে বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। এ মৌসুমে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে বাংলাদেশ সফরে যান। ১৯ অক্টোবর, ২০০৪ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। বল হাতে নিয়ে ২/২৬ ও ৬/২৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, দলের একমাত্র ইনিংসে ২৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ৯৯ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই মৌসুমে নিজ দেশে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১০ মার্চ, ২০০৫ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ২৪* ও ২৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৫/১০৬ ও ১/৫৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, অ্যাডাম গিলক্রিস্টের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারী ৯ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০০৫-০৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ১৫ এপ্রিল, ২০০৬ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৫৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৮১ ও ৩৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৪৪ ও ২/৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। মাখায়া এনটিনি’র অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ১২৮ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০০৬-০৭ মৌসুমে নিজ দেশে মাহেলা জয়াবর্ধনে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৬ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। বল হাতে নিয়ে ৩/৫৩ ও ৭/১৩০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ০ ও ৫১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, চামারা সিলভা’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২১৭ রানে পরাজিত হলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ১২ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১/১০ ও ০/৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ৯৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩৭ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৮ সালে কিউই দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ইংল্যান্ড সফরে যান। ১৫ মে, ২০০৮ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ড্র হওয়া টেস্টে দারুণ খেলেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক এমপি ভনের পঞ্চম উইকেট লাভের মাধ্যমে টেস্টে ২৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত ঐ খেলায় ৫/৬৯ নিয়ে লর্ডস অনার্স বোর্ডে স্বীয় নাম অন্তর্ভুক্ত করার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। এর পূর্বে নিউজিল্যান্ড দল প্রথম ইনিংসে ২৭৭ রান তুলে। এক পর্যায়ে ইংল্যান্ড দলকে দ্রুত রান তুলতে তৎপর হতে দেখা যায়। তবে, ছন্দে থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষের সমীহের পাত্রে পরিণত হন। কেভিন পিটারসনের উইকেট নেয়ার মাধ্যমে সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে সচেষ্ট হন। এরপর একে-একে মাইকেল ভন, টিম অ্যামব্রোস, পল কলিংউড ও মন্টি পানেসর তাঁর শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৪৮ ও ০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অধিনায়কোচিত অল-রাউন্ড নৈপুণ্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। দারুণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের কারণে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।
২০০৮-০৯ মৌসুমে কিউই দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ গমন করেন। ১৭ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কোচিত ভূমিকা রাখেন ও অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ৫৫* ও ৭৬ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/৫৯ ও ৪/৭৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৩ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৯ সালে কিউই দলকে নেতৃত্ব দিয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ২৬ আগস্ট, ২০০৯ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। ২৩ ও ১৪০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে কুমার সাঙ্গাকারা’র দ্বিতীয় উইকেট লাভ করে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। বল হাতে নিয়ে ৩/১০৪ ও ২/৬২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মাহেলা জয়াবর্ধনে’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯৬ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
২০০৯-১০ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১১ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে নেপিয়ারে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ০/৩৫ ও ২/৯৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৩৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে অমিমাংসিত অবস্থায় সিরিজটি শেষ হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১০-১১ মৌসুমে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে কিউই দলকে নিয়ে ভারত গমন করেন। ৪ নভেম্বর, ২০১০ তারিখে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৩৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। একবার ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পেয়ে ৪১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/১১৮ ও ২/৮১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, হরভজন সিংয়ের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
২০১১-১২ মৌসুমে রস টেলরের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ১ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন ও ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে সিবি এমপফু’র পঞ্চম উইকেট লাভ করে টেস্টে ৩৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৫/৭০ ও ৩/৭১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৪০ ও ৩১ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ক্রিস এমপফু’র শিকারে পরিণত হন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড সাফল্যে স্বাগতিকরা ৩৪ রানে পরাজয়বরণ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১২ সালে রস টেলরের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ২৫ জুন, ২০১২ তারিখে নর্থ সাউন্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ১৭ ও ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/১২৪ ও ০/৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সুনীল নারাইনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৯ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০১৪-১৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যান। ২৬ নভেম্বর, ২০১৪ তারিখে শারজায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৪১ ও ১/৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, মার্ক ক্রেগের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে নিউজিল্যান্ড দল ইনিংস ও ৮০ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। রয়্যাল লন্ডন কাপে বার্মিংহাম ফোনিক্সের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্পিন পরামর্শক হিসেবে মনোনীত হন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। মেরি ও’ক্যারল নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।