১৪ এপ্রিল, ১৯৬৫ তারিখে কুইন্সল্যান্ডের রেসভিউ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন।
‘বিলি’ ডাকনামে ভূষিত ক্রেগ ম্যাকডারমট ১.৯১ মিটার উচ্চতার অধিকারী। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুম থেকে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন সরব রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে কুইন্সল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। প্রায় দুই বছর দলের দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
১৯৮৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৭১ টেস্ট ও ১৩৮টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে নিজ দেশে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২২ ডিসেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। মারে বেনেটের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৩/১১৮ ও ৩/৬৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ম্যালকম মার্শালের বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। অ্যান্ড্রু হিলডিচের ব্যাটিং সাফল্যের খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। একই সফরের ৬ জানুয়ারি, ১৯৮৫ তারিখে মেলবোর্নে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।
২০ বছর বয়সে ১৯৮৫ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে তাঁকে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে মনোনীত করা হয়। ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩০ উইকেট দখল করেছিলেন। ১ আগস্ট, ১৯৮৫ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি ৮/১৪১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে শূন্য রানে জন এম্বুরি’র বলে বিদেয় নেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলী প্রদর্শন করলেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে।
পরবর্তী বসন্তকালে অর্থাৎ ১৯৮৬ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৯৮৭ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা বিজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ২২ বছর বয়সে তিনি এ প্রতিযোগিতার শীর্ষ বোলারে পরিণত হন। তবে, শারীরিক সচেতনতার অভাবে পরের বছরই টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন।
১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে নিজ দেশে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২২ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ঐ টেস্টে দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। জন ব্রেসওয়েলের প্রাণান্তঃকর অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও স্বাগতিকরা ৪ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ৩০ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে ওয়াকায় অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন ৩৫ রানের সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৩৬ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৬৬ ও ০/২৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, রিচার্ড হ্যাডলি’র অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর বদৌলতে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে পরাজিত হলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
একই মৌসুমে ফিরতি সফরে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ তারিখে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৮০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ১৩ মার্চ, ১৯৮৬ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২/৪৭ ও ০/২৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঘটনাবহুল এ টেস্টে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে দলের ৯৪তম ওভারটি পাঁচ-বলে শেষ করেছিলেন। এছাড়াও, ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ ও ৬ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে জন ব্রেসওয়েলের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। জন ব্রেসওয়েলের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নিজ দেশে মার্টিন ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১২ নভেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। খেলার তৃতীয় দিন নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে কেন রাদারফোর্ডের দ্বিতীয় উইকেট লাভ করে টেস্টে ব্যক্তিগত ২০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৩/১২৭ ও ১/৪০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৩৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অ্যান্ড্রু জোন্সের অসাধারণ ব্যাটিংনৈপুণ্যে বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯৪-৯৫ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে ৩২ উইকেট দখল করে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৫ জানুয়ারি, ১৯৯৬ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/৮১ ও ০/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, স্টিভ ওয়াহ’র অসাধারণ অল-রাউন্ড সাফল্যে স্বাগতিকরা ১৪৮ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ করায়ত্ত্ব করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
টেস্টগুলো থেকে ২৮.৬৩ গড়ে ২৯১ উইকেট দখল করেছিলেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। অস্ট্রেলিয়ার সেন্টার অব এক্সিলেন্সে কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলে বোলিং কোচ হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়া দিবসের সম্মাননায় তাঁকে অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া পদকে ভূষিত করা হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে প্রমিলা ক্রিকেটার শ্যারন ট্রিড্রিয়া’র সাথে অস্ট্রেলিয়া হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।
গোল্ড কোস্ট ডলফিন্স ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় কুইন্সল্যান্ডে আবাসন শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। এসি ম্যাকডারমট ও বিআর ম্যাকডারমট নামীয় সন্তানদ্বয়ের জনক।
