২৯ নভেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে সলসবারিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে ম্যাশোনাল্যান্ড, মাতাবেলেল্যান্ড ও ম্যাশোনাল্যান্ড কান্ট্রি ডিস্ট্রিক্টসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, হারারেভিত্তিক ওল্ড গ্রিগোরিয়ান্সের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৯০-৯১ মৌসুম থেকে ২০০৩-০৪ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। তন্মধ্যে, ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে ম্যাশোনাল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২৪ দলের পক্ষে খেলেন। এছাড়াও, ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম থেকে ম্যাশোনাল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ৩ অক্টোবর, ১৯৯০ তারিখে হারারে সাউথ কান্ট্রি ক্লাবে অনুষ্ঠিত জিম্বাবুয়ে ‘বি’ বনাম পাকিস্তান ‘বি’ দলের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।
‘মগি’ কিংবা ‘ম্যাগো’ ডাকনামে পরিচিতি পেয়েছেন। দীর্ঘদেহ, মোটাসোটা গড়নের অধিকারী। রুজয়ি স্কুল ও ফ্যালকন কলেজে অধ্যয়ন করেন। রুজয়ি বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক ব্রায়ান কার্টিসের কাছ থেকে বড় ধরনের অনুপ্রাণিত হন। এছাড়াও, হারারের কাছাকাছি পারিবারিক খামারে পিতার কাছ থেকেও উজ্জ্বীবিত হয়েছিলেন। দশ বছর বয়সে হারারেতে অনুষ্ঠিত রুজয়ি বনাম সেন্ট জোন্স স্কুলের মধ্যকার খেলায় প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেন।
প্রতিভাবান ক্রিকেটার হলেও শৃঙ্খলাবিহীন জীবনযাপন করেছেন। নিজেকে পূর্ণাঙ্গভাবে মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে এবড়ো-থেবড়ো খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। জিম্বাবুয়ের অন্যতম হতাশাচ্ছন্ন ক্রিকেটারে পরিণত হন। তবে, ৩২ বছর বয়সে এসেও নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট ছিলেন। মার্চ, ২০০০ সালে বুলাওয়ে অ্যাথলেটিক ক্লাবে মাতাবেলেল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেন। জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে যে-কোন জুটিতে নতুন রেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। ডির্ক ভিলজোয়েনের সাথে ৩৩০ রান তুলেন। নিজে করেন ১৫৩ রান। এ রানটি তৎকালে তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ প্রথম-শ্রেণীর রান ছিল। এরফলে, ম্যাশোনাল্যান্ড প্রথম ইনিংসে এগিয়ে যায়। তারপর, ৪/৫ লাভ করে দলকে ২৭৬ রানে জয় এনে দেন।
যে বয়সে অধিকাংশ জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটার নিজেদেরকে খেলা থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন সেখানে এসে তিনি তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের তুঙ্গে অবস্থান করেছেন। ২০০২ সালের লোগান কাপের চারটি খেলার প্রত্যেকটিতেই মাতাবেলেল্যান্ডের পক্ষে শতক হাঁকান। তন্মধ্যে, মনিকাল্যান্ডের বিপক্ষে ২৭৪ বল মোকাবেলায় ২১০ রানের ইনিংস উপহার দেন। এ পর্যায়ে দল ৩০০ রানে পিছিয়ে থেকে ফলো-অনের কবলে পড়লেও খেলায় তাঁর দল ৭৩ রানে জয়লাভ করতে সমর্থ হয়। এরপর, বল হাতে নিয়ে ৬/৩৭ লাভ করেন। এরপর, হারারে স্পোর্টস ক্লাবে মিডল্যান্ডসের বিপক্ষে ১৬৩ রান তুলেন।
১৯৯২ থেকে ২০০৩ সময়কালে জিম্বাবুয়ের পক্ষে তিনটিমাত্র টেস্ট ও ৫৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে অ্যালাস্টেয়ার ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ে দলের সাথে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে কলম্বোর আরপিএসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অ্যান্ড্রু হুইটলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ইনিংস ও ৭৭ রানে তাঁর দল পরাজয়বরণ করলে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। ০/২৭ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এর চার বছর পূর্বে ২৫ অক্টোবর, ১৯৯২ তারিখে হারারেতে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়েতে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে প্রথম অংশ নেন। একমাত্র খেলাটিতে তিনি ২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে কেবলমাত্র সীমিত-ওভারের উপযোগী ক্রিকেটার ছিলেন। ১৯৯৬ সালের পূর্ব-পযন্ত একদিনের দলে নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ পাননি। ঐ বছরের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় জিম্বাবুয়ে দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ঐ প্রতিযোগিতায় তেমন সুবিধে করতে পারেননি। তবে, আগস্ট, ১৯৯৬ সালে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সিঙ্গার ওয়ার্ল্ড সিরিজে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগ্রাসী ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করে ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। পাঁচ মাস পর জানুয়ারি, ১৯৯৭ সালে ৪০ ও ৪৩ রানের ঝুঁকিপূর্ণ ইনিংস খেলেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ওয়ান-ডে সিরিজে ভারতের বিপক্ষে তিন উইকেটে জয় এনে দেন।
কিছুকাল দলে নিয়মিত খেলার পর পুণরায় ব্যাট ও বলে খরা আসে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলের বাইরে থাকেন। এ পর্যায়ে দুইটি টেস্ট ও ৪৯টি ওডিআই থেকে একটিমাত্র অর্ধ-শতক ও ১৯ উইকেট নিজ নামের পার্শ্বে যুক্ত করেছিলেন। অগোছালো ও প্রতিভাবান খেলোয়াড় হলেও নিজের শক্তিমত্তার বহিঃপ্রকাশ না ঘটানোর বিষয়ে বেশ আলোচনা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে দৃশ্যতঃ তাঁর আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি আশঙ্কা দেখা দেয়। তাসত্ত্বেও, ঘরোয়া ক্রিকেটে নব দৃষ্টিকোণে পূর্ণাঙ্গতা আনয়ণে সচেষ্ট হন। কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন ও এর ইতিবাচক ফলাফল পান।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিজের উপযোগী করে তুলেন। এ প্রতিযোগিতার পূর্বে ব্যাট হাতে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ২০০২-০৩ মৌসুমের শুরুতে আরও একটি শতক হাঁকিয়ে দল নির্বাচকমণ্ডলীর আস্থা অর্জন করেন। ৩৩ বছর বয়সে সফররত পাকিস্তান দলের বিপক্ষে ওডিআই দলে তাঁকে রাখা হয়। পাকিস্তান দল ৩০২/৪ তুলে। এর জবাবে দলের সংগ্রহ ৩২/৪ হলে মাঠে নামেন ও অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের সাথে ১৩৫ রানের জুটি গড়েন। দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যেতে থাকা অবস্থায় রান-আউটের শিকার হন।
এরপর থেকে দূর্দশার কবলে পড়েন। তিন ইনিংসে ব্যর্থ হলে দল থেকে বাদ পড়েন। বিশ্বকাপে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে, ঐ বছরের শেষদিকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৯ অক্টোবর, ২০০৩ তারিখ থেকে শুরু হওয়া পার্থ টেস্টে সফরকারীরা ইনিংস ও ১৭৫ রানে পরাজিত হয়। এভাবে তাঁর আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপণ ঘটে। ২২ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
ক্রিকেটের বাইরে গল্ফার হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। এছাড়াও, জিম্বাবুয়ের পক্ষে রাগবি ইন্টারন্যাশনালে ফুলব্যাক অবস্থানে খেলেছেন। পেশাগত জীবনে তামাক নিলামকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ব্রাড ইভান্স নামীয় পুত্র সন্তানের জনক।
