১৮ মার্চ, ১৮৭৭ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হিন্ডমার্শ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাশাপাশি, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
পরিবারের ১৬ সন্তানের অন্যতম ছিলেন। পিতা এইচ. জে. হিল অ্যাডিলেড ওভালে প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ছিলেন। ১৬ বছর বয়সে অ্যাডিলেডে আন্তঃকলেজের খেলায় ৩৬০ রানের ইনিংস খেলে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখেন।
১৮৯২-৯৩ মৌসুম থেকে ১৯২২-২৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮ বছর শেষ করার পর ১৮৯৫ সালে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সদস্যরূপে এ. ই. স্টডার্টের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের বিপক্ষে ১৫০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। শক্ত পিচে নিজেকে দূর্দান্ত ব্যাটসম্যানের পরিচিতি ঘটাতেন। শেফিল্ড শীল্ডের খেলাগুলো থেকে ৫২.২৮ গড়ে ৬৩৭৪ রান তুলেছিলেন। পরবর্তীতে, স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান তাঁর এ রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলে নিজের করে নেন। ডিসেম্বর, ১৯০০ সালে অ্যাডিলেডে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ৩৬৫ রান তুলেন। ঐ মৌসুমে ১০৩.৩৩ গড়ে রান পেয়েছিলেন।
১৮৯৬ থেকে ১৯১২ পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৪৯ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৮৯৬ সালে হ্যারি ট্রটের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২২ জুন, ১৮৯৬ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। চার্লস ইডি ও জেমস কেলি’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ১ ও ৫ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৮৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ড্রু স্টডার্টের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২৯ জানুয়ারি, ১৮৯৮ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১৮৮ রানের দর্শনীয় খেলা উপহার দেন। অস্ট্রেলিয়ার ৬/৫৮ সংগ্রহের ন্যায় নড়বড়ে অবস্থানে নেমে এ সাফল্য পান। অন্যতম সেরা ইনিংস খেলে দলের আট উইকেটের বিজয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন ও স্বাগতিকরা ৩-১ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। এছাড়াও, ৯৯, ৯৮ ও ৯৭ রানের উপর্যুপরী ইনিংস খেলেন যা পরবর্তীতে আর পুণরাবৃত্তি ঘটাতে পারেননি।
১৯০১-০২ মৌসুমের জানুয়ারি, ১৯০২ সালে অ্যাডিলেড টেস্টে ৯৮ ও ৯৭ রান তুলে উভয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। এর পূর্বে এমসিজিতে ৯৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ১৯০২ সালে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক পঞ্জিকাবর্ষে সহস্র রান সংগ্রহের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
১৯০২-০৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জো ডার্লিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১১ অক্টোবর, ১৯০২ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৭৬ ও ১৪২ রান সংগ্রহ করে উভয় ক্ষেত্রে জিমি সিনক্লেয়ারের শিকারে পরিণত হন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯১০-১১ মৌসুমে নিজ দেশে পার্সি শারওয়েলের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৯ ডিসেম্বর, ১৯১০ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৮৮ রান অতিক্রম করেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১৯১ রান সংগ্রহ করেন। এ পর্যায়ে ওয়ারেন বার্ডসলি’র (১৩২) সাথে তৃতীয় উইকেটে ১৪৪ রানের জুটি গড়েন। সফরকারীরা ইনিংস ও ১১৪ রানে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
পরের মৌসুমে জে. ডব্লিউ. এইচ. টি. ডগলাসের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের বিপক্ষেও দলকে নেতৃত্ব দেন। ১৯১১-১২ মৌসুমে নিজ দেশে জনি ডগলাসের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯১২ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ২২ ও ১১ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ইনিংস ও ২২৫ রানে জয়লাভ করে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
এরপর, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯১২ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ২০ ও ৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৭০ রানে পরাজিত হলে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
নীল হার্ভের উত্থানের পূর্ব-পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ বামহাতি ব্যাটসম্যানরূপে গণ্য করা হতো। অংশগ্রহণকৃত ৪৯ টেস্টের মধ্যে ৪১ টেস্টই খেলেছেন অ্যাশেজ সিরিজে। বাদ-বাকী ৮ টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেছেন। বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়কালে অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ৩৪১২ রান তুলে ঐ সময়ে সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী হিসেবে খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে অন্যতম সেরা দক্ষ খেলোয়াড় ছিলেন। ঐ সময়ে ৩৯ গড়ে সাত শতক সহযোগে ৩৪১২ রান তুলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসেবে খেলা থেকে সড়ে দাঁড়ান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অধিক সফল ছিলেন ও নিজের রেকর্ডকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। যে-কোন স্থানে থেকে বলকে পুল করার যোগ্যতা রাখতেন। অনেকগুলো বড় ধরনের রান সংগ্রহ করেছেন। সব মিলিয়ে চারবার ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৯০০ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন।
৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫ তারিখে ভিক্টোরিয়ার পার্কভিল এলাকায় ৬৮ বছর ১৭১ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
