২ মার্চ, ১৯৮৯ তারিখে ওয়ারউইকশায়ারের বার্মিংহামে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী। ইংল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। শুরু থেকেই প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওয়ারউইকশায়ার এবং নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ওয়েলিংটনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, দিল্লি ক্যাপিটালস, কলকাতা নাইট রাইডার্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর, সিডনি থান্ডার, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব, ইংল্যান্ড লায়ন্স, ইংল্যান্ড পারফরম্যান্স প্রোগ্রাম, হিয়ারফোর্ডশায়ারের পক্ষে খেলেছেন। ২ আগস্ট, ২০০৬ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে ওয়ারউইকশায়ারের সদস্যরূপে তাঁর প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটে। খেলায় তিন উইকেট পান ও প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত হন।
দুই বছর পর ২০০৮ সালে ২০.৫৭ গড়ে ৪২ উইকেট নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে সাড়া জাগান। সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে ২০০৯ সালের আইসিসি বিশ্ব টি২০ চ্যাম্পিয়নশীপের প্রাথমিক তালিকায় জায়গা পান। একই বছরের শেষদিকে ইংল্যান্ড লায়ন্সের সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে ৬/৪৩ পান। এছাড়াও, ভালোমানের কৌশল গ্রহণে ব্যাটসম্যান হিসেবেও সফলতা লাভ করেন। হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে জোনাথন ট্রটকে নিয়ে নবম উইকেটে ২২২ রানের জুটি গড়েছিলেন। কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন।
২০১১ সাল থেকে ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১০-১১ মৌসুমে দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১২ জানুয়ারি, ২০১১ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০আইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। একই সফরের ২৩ জানুয়ারি, ২০১১ তারিখে সিডনিতে ওডিআইয়ে প্রথম খেলেন। এক সপ্তাহ পর ব্রিসবেনে অজিদের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৬/৪৫ লাভ করেন।
২০১৩ সালে নিজ দেশে মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২১ আগস্ট, ২০১৩ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। সায়মন কেরিগানের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। আঘাতপ্রাপ্ত টিম ব্রেসনানের পরিবর্তে তিনি খেলার সুযোগ পান। তবে, তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি। খেলায় তিনি ২৫ ও ১৭* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৯৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। শেন ওয়াটসনের দূর্দান্ত ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে স্বাগতিকরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
২০১৬ সালে নিজ দেশে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে দারুণ খেলেছিলেন। ঐ খেলায় ১১ উইকেটের সন্ধান পেয়েছিলেন। এছাড়াও, উভয় ইনিংসেই বেশ ভালোমানের ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। এ পর্যায়ে খেলায় বিরাট প্রভাব ফেলেন। এরপর থেকে তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তাসত্ত্বেও ঐ টেস্টে তাঁর দল পরাজিত হয়।
১১ আগস্ট, ২০১৬ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তান দলের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ৪৫ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৩/৮২ ও ০/১১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ইউনুস খানের দূর্দান্ত ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে পরাজিত হলে ২-২ ব্যবধানে অমিমাংসিত অবস্থায় সিরিজটি শেষ হয়। ১৭৭ রান সংগ্রহসহ ২৬ উইকেট দখল করে প্রতিপক্ষীয় দলনেতা মিসবাহ-উল-হকের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী ইংল্যান্ড দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। দলের বোলিং আক্রমণ পরিচালনা করেন ও নিরাশ করেননি। পুরো প্রতিযোগিতায় বেশ ধারাবাহিকভাবে ও সফলতার সাথে বোলিং করে গেছেন। সেমি-ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
২০২০ সালে নিজ দেশে আজহার আলী’র নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৫ আগস্ট, ২০২০ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ২/৪৩ ও ২/১১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৯ ও ৮৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২৩ সালে নিজ দেশে প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ২৭ জুলাই, ২০২৩ তারিখে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি ৩৬ ও ১ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে মিচেল স্টার্কের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৬১ ও ৪/৫০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৪৯ রানে জয় পেলে সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে শেষ করতে সক্ষম হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। পাশাপাশি, পুরো সিরিজে ৭৯ রান সংগ্রহসহ ১৯ উইকেট দখল করে মিচেল স্টার্কের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
