১০ ডিসেম্বর, ১৯৭৪ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
নিখুঁত নিশানা বরাবর বল ফেলে পেস বোলিং করতেন ও সিম আনয়ণে ব্যাটসম্যানের সমীহের পাত্রে পরিণত হতেন। ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার কারণেও তিনি সবিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। ফলশ্রুতিতে, ‘ফ্যান্টম’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে ২০১২-১৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ড ও ক্যান্টারবারি এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওয়ারউইকশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, স্কটল্যান্ডের হেরিয়টস এফপি ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে এক মৌসুম ক্লাব ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এরপর, ২০০৮ সালে ওয়ারউইকশায়ারে যোগ দেন।
২০০০ থেকে ২০১৩ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৭১ টেস্ট, ২০টি ওডিআই ও ছয়টিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বাধিক শূন্য রান সংগ্রাহকে পরিণত হয়েছেন। অংশগ্রহণকৃত ১০৪ ইনিংসের ৩৬টিতেই কোন রান সংগ্রহ ছাড়াই মাঠ থেকে তাঁকে ফিরে আসতে হয়েছিল। তবে, কোর্টনি ওয়ালস ৪৩বার শূন্য রান তুলে এ অমর্যাদাকর রেকর্ডের সাথে নিজেকে জড়ালেও তাঁর তুলনায় অনেক ইনিংস বেশী খেলেছিলেন। তবে, উভয় ইনিংসে সর্বাধিকসংখ্যক সাতবার শূন্য রানে বিদেয় নিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।
২০০০-০১ মৌসুমে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৭ নভেম্বর, ২০০০ তারিখে ব্লুমফন্তেইনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্রুক ওয়াকারের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৩/৮৯ ও ১/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৭ ও ০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, জ্যাক ক্যালিস ও মাখায়া এনটিনি’র অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ৩০ নভেম্বর, ২০০০ তারিখে জিকিবার্হায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে অ্যালান ডোনাল্ডের উইকেট লাভ করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা সাফল্য ছিল ৩/৮৯। খেলায় তিনি ৪/১০৪ ও ১/৩২ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৫* ও ০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, নীল ম্যাকেঞ্জি’র অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় সফরকারীরা ৭ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
২০০১-০২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। এ স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৩০ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে পার্থে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ওয়াকায় অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় কোন ইনিংসেই তাঁকে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে হয়নি। বল হাতে নিয়ে ১/৮৮ ও ০/৫১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে ফলাফলবিহীন অবস্থায় সিরিজের সমাপ্তি ঘটে।
২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৮ মার্চ, ২০০৪ তারিখ থেকে অকল্যান্ডে শুরু হওয়া সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। নিজের সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ব্যক্তিগতভাবে বেশ সফল ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে এম এনটিনিকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/৭১। এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে নিকি বোয়ে’র প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ২০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলায় ১১ উইকেট নিয়ে ব্ল্যাক ক্যাপসকে নয় উইকেটের জয় এনে দিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখেন ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি প্রথম ইনিংসে ৬/৭৬ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/১০৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে শন পোলকের বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। ঘটনাবহুল খেলার চতুর্থ দিন উপর্যুপরী নয়বার ইনিংসে রান সংগ্রহ না করে নতুন টেস্ট রেকর্ড গড়েন। এ পর্যায়ে নিউজিল্যান্ড – দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার খেলায় তিনি সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। দূর্দান্ত বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই সফরের ২৬ মার্চ, ২০০৪ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে এমভি বাউচারের পঞ্চম উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৫/৫৫ ও ২/৬৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে উভয় ইনিংসে ১* রান করে সংগ্রহ করেছিলেন। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে ঐ খেলায় তাঁর দল ৬ উইকেটে পরাজিত হলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে মারভান আতাপাত্তু’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১১ এপ্রিল, ২০০৫ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা সাফল্য ছিল ৬/৭৬। ৬/৫৪ ও ১/৫০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ল্যু ভিনসেন্টের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩৮ রানে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ১২ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫/৬৫ ও ২/৩৫ লাভ করেন। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন। তবে, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩৭ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।
২০০৮ সালের শুরুরদিকে ডুনেডিনে সফরকারী বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ১২ রানের ইনিংস খেলেন। সবকটি রানই বাউন্ডারির মারে সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ খেলায় তাঁর দল নয় উইকেটে জয় পেয়েছিল। স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বে খেলতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।
২০১০-১১ মৌসুমে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অধিনায়কত্বে কিউই দলের সাথে প্রথমবারের মতো ভারত গমন করেন। ৪ নভেম্বর, ২০১০ তারিখে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। বল হাতে নিয়ে ১/৭৫ ও ৫/৬৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, হরভজন সিংয়ের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
২০১১-১২ মৌসুমে রস টেলরের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ১ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে কেএম জার্ভিসের প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ২০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২/৭৪ ও ১/৮৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে রে প্রাইসের বলে শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরৎ যান। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসাধারণ অল-রাউন্ড সাফল্যে স্বাগতিকরা ৩৪ রানে পরাজয়বরণ করে।
২০১২-১৩ মৌসুমে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০* ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৬৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ভার্নন ফিল্যান্ডারের বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ২৭ রানে পরাজয়বরণ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
৩ জুলাই, ২০১৩ তারিখে সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। অবসরগ্রহণকালীন তিনি নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট লাভকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ৩৩.৮১ গড়ে ২৩১ উইকেট পেয়েছেন। কেবলমাত্র স্যার রিচার্ড হ্যাডলি ৪৩১ ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ৩৬১ উইকেট নিয়ে তাঁর তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন। তাঁর বাজে ব্যাটিংয়ের কারণে ‘লার্ন টু ব্যাট লাইক ক্রিস মার্টিন’ শীর্ষক ভিডিও ইউটিউবে দেখা যায়। অ্যারোস্পোর্টের সাথে ব্যাট নিয়ে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর পরের মাসেই কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। ২০১৩-১৪ মৌসুমের প্রথমার্ধে ক্যান্টারবারি দলকে পরিচালনা করেন। এছাড়াও, পালমারস্টোন নর্থে ব্যবসায়িক জগতের সাথে যুক্ত হন।
