ক্রিস হ্যারিস
২০ নভেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। বামহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘লাগস’ ডাকনামে পরিচিতি পান। কিউই তারকা ব্যাটসম্যানের খ্যাতি অর্জন করেন। প্রথম নিউজিল্যান্ডীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওডিআইয়ে দুই সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন ও প্রথম কিউই হিসেবে ২৫০টি ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জনের অধিকারী হন। সচরাচর সাত নম্বর অবস্থানে মাঠে নামতেন ও ৬২ ইনিংসে অপরাজিত অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করেন। নিউজিল্যান্ডের সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ওডিআইয়ে সর্বাধিক ২৯টি কট এন্ড বোল্ড করে যৌথভাবে মুত্তিয়া মুরালিধরনের সাথে রয়েছেন। রিচার্ড হ্যাডলি ও ক্রিস কেয়ার্নসের পর নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় সেরা অল-রাউন্ডারের মর্যাদা পান। ব্যাটসম্যান হিসেবে ইনিংসের মাঝামাঝি ওভারগুলোয় চাতুর্য্যতার সাথে এক-দুই রান নিয়ে ইনিংসের চাকা সচল রাখতেন ও শেষদিকে মারকুটে ব্যাটিংকর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। দৃশ্যতঃ জয়সূচক রান তুলে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন। সাধারণমানের বোলিংয়েও ধূর্ততার পরিচয় দিতেন। প্রায়শঃই প্রতিপক্ষের থিতু হয়ে আসা জুটি ভেঙ্গে তৎপরতা দেখাতেন। এছাড়াও, ফিল্ডিংয়েও বেশ সফল ছিলেন।
কিশোর অবস্থায় প্রকৃত মানসম্পন্ন পেস বোলিং করতেন। পরবর্তীতে মিডিয়াম-পেস বোলিংয়ের দিকে ধাবিত হন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুম থেকে ২০০৯-১০ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি, ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ার ও গ্লুচেস্টারশায়ার এবং জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে মাউন্টেনিয়ার্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, হায়দ্রাবাদ হিরোজ, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব এবং সাউদার্ন রক্সের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ক্যান্টারবারির পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। নিজস্ব প্রথম মৌসুমে ১০ খেলা থেকে ৪২.৫৫ গড়ে ৪৬৮ রান তুলেন ও ২৮.৯৪ গড়ে ১৭ উইকেট দখল করেছিলেন।
১৯৯০ থেকে ২০০৪ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ২৩ টেস্ট ও ২৫০টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ওডিআই অভিষেকে কিউই দলের পক্ষে ১৭ রান তুলেন। ২৯ নভেম্বর, ১৯৯০ তারিখে সিডনিতে বেনসন এন্ড হেজেস বিশ্ব সিরিজ প্রতিযোগিতায় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসরকালীন এ রান তুলেন। তবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বল থেকেই সফল হয়েছিলেন। নিচেরসারিতে গুরুত্বপূর্ণ রান তুলে খেলা শেষ করতে ভূমিকা রাখতেন ও মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট লাভ করতেন।
দুই বছর পর ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে মার্টিন ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ২৭ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে মোরাতুয়ায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। মাইকেল ওয়েন্স ও জাস্টিন ভনের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখেন। ৫৬ ও ০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৬৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। রোশন মহানামা’র অসাধারণ শতক সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২ জানুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬ ও ৯ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ওয়াকার ইউনুসের বলে বিদেয় নিয়েছিলেন। ওয়াসিম আকরামের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩৩ রানে পরাজিত হয়।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে কেন রাদারফোর্ডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ২৬ নভেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে হোবার্টে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ০ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসেই টিম মে’র শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। মার্ক ওয়াহ’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২২২ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৫৬ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৭১ ও ১২* রান সংগ্রহসহ চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তন্মধ্যে, প্রথম ইনিংসে ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে সাথে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে অষ্টম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১২ রানের জুটি গড়েন। ১৯৭১-৭২ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে কংডন ও কুনেছের সংগৃহীত ১৩৬ রান সর্বোচ্চ জুটির মর্যাদা পাচ্ছে। এছাড়াও, তাঁদের সংগৃহীত রান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়াসিম আকরাম ও সাকলাইন মুশতাকের সংগৃহীত ৩১৩ রান অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের মর্যাদা পাচ্ছে। পাশাপাশি, বল হাতে নিয়ে ০/১৩ ও ১/৪১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। গাই হুইটলের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে ঐ টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
একই মৌসুমে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২০ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। স্টিভ ওয়াহ’র দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৭০ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে নিজ দেশে হ্যান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৮ মার্চ, ১৯৯৯ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৪২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৬৮ ও ৪১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৬৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, স্টিভ এলোয়ার্দি’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে পরাভূত হলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০০০-০১ মৌসুমে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০০০ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ক্রিস কেয়ার্নসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে নাসের হুসাইনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ৩০ মার্চ, ২০০২ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৭১ রান তুলে পূর্বতন সর্বোচ্চ রানের সমকক্ষ হন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ড্যারিল টাফি’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৭৮ রানে পরাজিত হলে অমিমাংসিত অবস্থায় সিরিজটি শেষ হয়।
২০০২ সালে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ২৮ জুন, ২০০২ তারিখে গ্রেনেডার সেন্ট জর্জেসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৪০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ক্রিস গেইলের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ঐ টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হলে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর স্বীকৃতিবিহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে হায়দ্রাবাদ হিরোজের পক্ষাবলম্বন করেন। এরপর, ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন। ক্রিকেটের বাইরে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের দায়িত্ব পালন করেছেন।