ক্রিস কেয়ার্নস
১৩ জুন, ১৯৭০ তারিখে মার্লবোরার পিকটনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে সবিশেষ পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেয়ার পাশাপাশি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে ডানহাতে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে বিপজ্জ্বনক মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। তাঁর পিতা ল্যান্স কেয়ার্নস নিউজিল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
৬ ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুম থেকে ২০০৬ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি ও নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টস এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। হক কাপে নর্থল্যান্ডের পক্ষে খেলেছেন। এছাড়াও, ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে চণ্ডীগড় লায়ন্সের পক্ষে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন।
১৮ বছর বয়সে যুব বৃত্তি নিয়ে নটিংহ্যামশায়ারের যোগ দেন। ঐ গ্রীষ্মে তিনি তিনটি প্রথম-শ্র্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। এরফলে, নিউজিল্যান্ডে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণের পথ সুগম হয়। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টসের পক্ষে খেলেন। ১৯৮৯ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে ফিরে আসেন। তবে, ঐ গ্রীষ্মে মূলতঃ দ্বিতীয় একাদশের খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডে কেবলমাত্র একটি উল্লেখযোগ্য ইনিংস খেলার পরই ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলার উদ্দেশ্যে তাঁকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ পর্যায়ে ১৯৯২ সালে নটসের প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে তাঁকে দলে রাখা হয়।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রিকেট খেলাসহ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৯ থেকে ২০০৬ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৬২ টেস্ট, ২১৫টি ওডিআই ও দুইটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে জন রাইটের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৪ নভেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে পার্থের ওয়াকা গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তবে, অভিষেক টেস্টে তেমন সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে নয় বল মোকাবেলান্তে ১ রান ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৭ বল মোকাবেলায় ২৮ রান তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৬০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। অবশ্য খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
১৯৯০-৯১ মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেন। ঐ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১ মার্চ, ১৯৯১ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। বেশ কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে সিপি সেনানায়াকেকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ০/৬০। এরপর, শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে জিএফ ল্যাব্রয়কে বিদেয় করে এ সাফল্যের পুণরাবৃত্তি ঘটান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৪/১৩৬। এ পর্যায়ে টেস্টে প্রথমবারের মতো পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। বল হাতে নিয়ে ৪/১৩৬ ও ৫/৭৫ পান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১৭ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, অরবিন্দ ডি সিলভা’র অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও ফলাফলবিহীন অবস্থায় সিরিজটি শেষ হয়।
ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন। ব্যাট হাতে তেমন সফলতা না পেলেও নয় ওভারে ২/৪১ পান। ২০০০ সালের আইসিসি নক-আউট ট্রফি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় ভারতের বিপক্ষে ১০২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। একই বছর আরও একটি স্মরণীয় ইনিংস খেলেন। বিখ্যাত স্পিনার শেন ওয়ার্নের বল থেকে কয়েকটি ছক্কা হাঁকান ও ব্যাসিন রিজার্ভের বাইরে ফেলেন। ২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আরও একটি বড় ধরনের ইনিংস খেলেন। ১৭২ বল মোকাবেলা ১৫৮ রান তুলেছিলেন।
১৯৯১-৯২ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রাহাম গুচের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১৮ জানুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২৮ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৬১ ও ০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/১১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ফিল টাফনেলের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে ঐ টেস্টে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৪ রানে পরাজয়বরণ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ৩০ জানুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ডিআর প্রিঙ্গলকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/৭৫। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৬/৫২ ও ২/৮৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১ ও ২৪ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ফিল টাফনেলের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। প্রতিপক্ষীয় দলনায়কের অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ১৬৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে মার্টিন ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১২ নভেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৬২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৭৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/১১৩ ও ০/১২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, অ্যান্ড্রু জোন্সের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ১৮ অক্টোবর, ১৯৯৫ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৫ ও ২৩ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/৪৪ ও ০/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঐ টেস্টে তাঁর দল ৮ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৩ জানুয়ারি, ১৯৯৬ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৪/৫৬ ও ২/৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, উভয় ইনিংস ৭ রান করে সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে আঘাত তাঁর নিত্যসঙ্গী ছিল। এরফলে, নিজের সেরা খেলা প্রদর্শনে স্বাভাবিক ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখতে পারতেন না। এরফলে, ৫৫টি টেস্ট খেলা থেকে বঞ্চিত হন। টেস্টের ঊনিশজন শীর্ষ অল-রাউন্ডারের অন্যতম হিসেবে ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী। টেস্টে সর্বাধিক ছক্কা হাঁকানোর বিশ্বরেকর্ড গড়েন। পরবর্তীতে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট তাঁর এ সাফল্যকে ছাঁপিয়ে যান। এছাড়াও, ৭৫ বলে দ্রুততম শতক হাঁকানোর নিউজিল্যান্ডীয় রেকর্ড গড়েন। পরবর্তীকালে কোরে অ্যান্ডারসন মাত্র ৩৬ বলে রেকর্ড গড়ে তাঁর সাফল্যকে ম্লান করে দেন।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ২৮ নভেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তান দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৯ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/১৩৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এক পর্যায়ে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত হন। এরফলে তাঁর ম্যাচ ফি’র ৫০% জরিমানা ধার্য্য করা হয়। তবে, মোহাম্মদ জাহিদের অনবদ্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
একই মৌসুমে নিজ দেশে মাইক অ্যাথার্টনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৯৭ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত ৫ ও দলীয় সংগ্রহ ৮৪.১ ওভারে ২২০/৫ থাকাকালে এডি মুলালি’র বলে ডি গফ ফেলে দেন। খেলায় তিনি ৬৭ ও ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/১০৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে সফরে যান। ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫/৫০ ও ০/৪৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১২ ও ৭১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারের অপরূপ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯৮ সালে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ১০ জুন, ১৯৯৮ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে পিএ ডি সিলভা’র তৃতীয় উইকেট লাভ করে টেস্টে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৫/৬২ ও ১/৭৫ লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৬ ও ২৬ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। রমেশ কালুবিতরানা’র ব্যাটিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ১৬৪ রানে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। প্রসঙ্গতঃ টেস্টের ইতিহাসে পঞ্চম ঘটনা হিসেবে কোন দল প্রথম টেস্টে পরাজিত হলেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজ জয় করে নেয়। পূর্ববর্তী চার মৌসুমে এটি চতুর্থ ঘটনা ছিল ও প্রথম দল হিসেবে শ্রীলঙ্কা দুইবার এ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ড প্রথম দল হিসেবে প্রথম টেস্ট জয়ের পর তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে দুইবার পরাজয়বরণ করে।
১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ষষ্ঠ উইকেটে সিডি ম্যাকমিলানকে (৭৪*) সাথে নিয়ে ১৩৭ রানের জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডীয় রেকর্ড গড়েন। এরফলে, ১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত টেস্টে জেডব্লিউ গাই ও এআর ম্যাকগিবনের সংগৃহীত ৮৭ রানের রেকর্ড ম্লান হয়ে পড়ে। খেলায় তিনি ৩ ও ৬১ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৬৯ ও ০/৬৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, সায়মন ডৌলের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৪ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৯৯ সালে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২২ জুলাই, ১৯৯৯ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৬/৭৭ ও ২/৬৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৩১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ম্যাট হর্নের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ১৯ আগস্ট, ১৯৯৯ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি ৫/৩১ ও ১/৫০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১১ ও ৮০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮৩ রানে পরাজয়বরণ করলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।
১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে ব্রায়ান লারা’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৯ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে এফএ রোজের দ্বিতীয় উইকেট লাভ করে টেস্টে ১৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। বল হাতে নিয়ে ৫/৪৪ ও ২/২৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ৩১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ম্যাথু সিনক্লেয়ারের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১০৫ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
একই মৌসুমে নিজ দেশে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৪ মার্চ, ২০০০ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে টেস্টে নিজস্ব তৃতীয় শতক হাঁকান। ব্যাট হাতে ১০৯ ও ৬৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/১১০ ও ১/৪৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। মাইকেল স্ল্যাটারের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
২০০০-০১ মৌসুমে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ১২ সেপ্টেম্বর, ২০০০ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ২/৭৭ ও ৫/৩১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৩৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পল ওয়াইজম্যানের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০০০ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন ও ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৭১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১২৪ ও ১৯* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৩৩ ও ২/৮০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০১-০২ মৌসুমে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৮ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৫/১৪৬ ও ১/২৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৬১ ও ৪৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ব্রেট লি’র প্রাণান্তঃকর অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
২০০২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার পর টেস্ট ক্রিকেটকে বিদেয় জানান। ব্যাট হাতে সাফল্য না পেলেও বল হাতে নিয়ে ২৩ ওভার বোলিং করে ৫ ওভার মেইডেন নিয়ে পাঁচ উইকেট পান। ২২ জানুয়ারি, ২০০৬ তারিখে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আর কোন ওডিআইয়ে অংশগ্রহণ না করার কথা ঘোষণা করেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের সর্বশেষ ওডিআইয়ে তাঁর দল পরাজয়বরণ করেছিল। ইডেন পার্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টি২০আই খেলায় অংশ নেন। এ খেলায় ব্যাট হাতে অংশ নেননি ও বল হাতে নিয়ে উইকেট শূন্য অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৮ মার্চ, ২০০৪ তারিখ থেকে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১০৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১২৬ রান অতিক্রম করেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টে খেলার তৃতীয় দিন জ্যাকব ওরামকে (৯০) সাথে নিয়ে সপ্তম উইকেটে ২২৫ রান সংগ্রহ করে দ্বি-পক্ষীয় নতুন রেকর্ড গড়েন। পাশাপাশি, নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সপ্তম উইকেটে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় যুক্ত হয়। এদিন তিনি ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ টেস্ট রান সংগ্রহ করেন। খেলার পঞ্চম দিন ষষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে ৩০০০ রান ও ২০০ উইকেট লাভের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী হন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫৮ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ১/৫৮ ও ৩/৬৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ক্রিস মার্টিনের দূর্দান্ত বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পায়। এরফলে, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট জয় করে। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্টে মাত্র ১৭২ বল মোকাবেলান্তে ১৫৮ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলেন। কেবলমাত্র ব্যাটিংয়েই সফলতা পাননি; বল হাতে নিয়েও ক্ষীপ্রতার পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৯৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৭/২৭ লাভ করেন।
একই বছর স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১০ জুন, ২০০৪ তারিখে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে ১২ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। বল হাতে নিয়ে ৫/৭৯ ও ৪/১০৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, গ্রাহাম থর্পের অসামান্য ব্যাটিংয়ের কল্যাণে চার উইকেটে পরাজিত হলে সফরকারীরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। এ টেস্ট শেষে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০০০ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেট বিশ্লেষকদের কাছে তাঁর স্থান নিয়ে দ্বিধায় ভুগলেও রিচার্ড হ্যাডলি’র তুলনায় তিনি শ্রেয়তর। তবে, উভয় ক্রিকেটারের রেকর্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রিচার্ড হ্যাডলি খুবই ভালোমানের বোলার; অন্যদিকে তিনি কিছুটা ভালোমানের ব্যাটসম্যান।