২৫ জানুয়ারি, ১৯৮৮ তারিখে গুজরাটের রাজকোটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের অনেক পূর্ব থেকেই তাঁকে বিখ্যাত ব্যাটসম্যান রাহুল দ্রাবিড়ের যোগ্য উত্তরাধিকারীরূপে চিত্রিত করা হতো। দেশের অন্যতম সেরা উদীয়মান প্রতিভাবান হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়। রাহুল দ্রাবিড়ের ন্যায় ফুরফুরে মেজাজ ও কৌশল অবলম্বন করে অগ্রসর হন। অসম্ভব মনোযোগ ও প্রতিপক্ষীয় বোলারদের মোকাবেলায় সক্ষমতার কারণে তিনি সফল হয়েছেন। উইকেটের দুই পার্শ্বেই সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন ও নিজেকে দীর্ঘ সংস্করণের খেলার উপযোগী করেছেন।
পিতা অরবিন্দ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে সৌরাষ্ট্রের পক্ষে রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। এরফলে শুরু থেকেই তাঁর মাঝে পর্যাপ্ত ক্রিকেটীয় গুণাবলী স্বাক্ষর রাখতে দেখা যায়। শৈশবকাল থেকেই বয়সভিত্তিক প্রত্যেক স্তরের ক্রিকেটে ব্যাট হাতে দারুণ খেলেছেন। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরূপে খেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথমবারের মতো নিজের পরিচিত ঘটান। ২১১ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলেছিলেন। ঐ খেলায় ভারত দল ইনিংস ও ১৩৭ রানের ব্যবধান জয়লাভ করেছিল।
২০০৬ সালে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অন্যতম তারকা খেলোয়াড় ছিলেন। এ প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড় হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০০৭-০৮ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় দারুণ খেলার সুবাদে ২০০৮ সালের ইন্ডিয়ান টি২০ লীগের উদ্বোধনী আসরে কলকাতার পক্ষে খেলেন। এরপর, ব্যাঙ্গালোর দলের সদস্য হন। দুই বছর পর ভারতের পক্ষে সাদা-বলের ক্রিকেটে অংশ নেন।
২০০৫-০৬ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে সৌরাষ্ট্র এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ার, নটিংহ্যামশায়ার ও ডার্বিশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ারের ৬৪৩ নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে দলে অন্তর্ভুক্ত হন। এছাড়াও, চেন্নাই সুপার কিংস, কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব, কলকাতা নাইট রাইডার্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের পক্ষে খেলেছেন। ১৭ ডিসেম্বর, ২০০৫ তারিখে রাজকোটে সৌরাষ্ট্র বনাম বিদর্ভের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।
২০১০ সাল থেকে ভারতের পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১০-১১ মৌসুমে নিজ দেশে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৯ অক্টোবর, ২০১০ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ২০৭ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ধাবিত থাকা অবস্থায় ৮৯ বল থেকে ৭২ রান তুলেন। এর পূর্বে প্রথম ইনিংসে ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন ও একটি রান-আউটের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে, শচীন তেন্ডুলকরের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কারণে খেলায় তাঁর দল ৭ উইকেটে জয়লাভ করে ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয় পায়।
২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের পূর্বে ঘরোয়া ক্রিকেটে তারকা খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছিলেন। দ্বি-শতক ও ত্রি-শতক করে ৬০-এর অধিক গড়ে রান পেয়েছেন। ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০৬ রানের অপরাজিত ইনিংসসহ ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০৪ রান তুলেছিলেন।
২০১৩-১৪ মৌসুমে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭০ ও ৩২ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ডেল স্টেইনের শিকারে পরিণত হন। তবে, ডেল স্টেইনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয় পায়।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১১ সালের পুরোটা বছর হাঁটুর আঘাতের কারণে খেলতে পারেননি। ব্যাপক রান সংগ্রহের কারণে খ্যাতি লাভ করেন। ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে কয়েকটি ত্রি-শতক হাঁকান। সফররত ইংরেজ দলের বিপক্ষে কয়েকটি শতক হাঁকিয়ে নিজেকে দলের স্থায়ী সদস্যে পরিণত করেন। ওডিআই দলেও নিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন। লিস্ট-এ ক্রিকেটে কয়েকটি দারুণ ইনিংস খেলে দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন।
রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে তৃতীয় দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাত্র ৮৪ ইনিংস থেকে ৪০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ সময়ে তাঁর গড় ৫৩-এর অধিক ছিল। তুলনামূলকভাবে একদিনের আন্তর্জাতিকে খুব কমই খেলার সুযোগ পেয়েছেন। ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাঁর ওডিআই অভিষেক হয়।
২০১৩ সালে ২৫ বছর বয়সে নয়জন ব্যাটসম্যানের অন্যতম হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনটি ত্রি-শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। শুরুতে আইপিএলে কেকেআরের পক্ষে অংশ নেন। এরপর, আইপিএলে নিজস্ব চতুর্থ বছরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর কর্তৃপক্ষ তাঁকে কিনে নেয়। ২০১১ সালে হাঁটুতে আঘাত পেলে ঐ মৌসুমের বাদ-বাকী সময় খেলা থেকে দূরে থাকেন।
২০১৫ সালে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২৮ আগস্ট, ২০১৫ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। মনোমুগ্ধকর ১৪৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ১১৭ রানে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজ দেশে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১৮ রানে পৌঁছানোকালে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৬২ ও ৭৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, রবীন্দ্র জাদেজা’র অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৯৭ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০১৭ সালে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২৬ জুলাই, ২০১৭ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১৫৩ রানের মনোরম শতক হাঁকান। এ পর্যায়ে দ্বিতীয় উইকেটে শিখর ধবনের (১৯০) সাথে ২৫৩ রানের জুটি গড়েন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫ রান সংগ্রহসহ খেলায় একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, শিখর ধবনের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে সফরকারীরা ৩০৪ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ৩ আগস্ট, ২০১৭ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৩৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৫৩ রানে জয়ে পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
২০১৭-১৮ মৌসুমে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টে দলের প্রথম ইনিংসের এক পর্যায়ে ৭৯ মিনিট কোন রান সংগ্রহ করতে পারেননি। খেলায় তিনি ৫০ ও ১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। তবে, ভুবনেশ্বর কুমারের অসাধারণ অল-রাউন্ড কৃতিত্বে সফরকারীরা ৬৩ রানে জয়লাভ করলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০২২-২৩ মৌসুমে কেএল রাহুলের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে বাংলাদেশ সফরে যান। এ সিরিজে অপূর্ব খেলেন। ২২ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ২৪ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেন। তবে, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা তিন উইকেটে জয় পায় ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। ঐ সিরিজে ২২২ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২৩ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের চূড়ান্ত খেলায় অংশ নিতে রোহিত শর্মা’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৭ জুন, ২০২৩ তারিখে লন্ডনের ওভালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হন। ১৪ ও ২৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলায় তাঁর দল ২০৯ রানে পরাজয়বরণ করে।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখে রাজকোটে পূজা পবরী নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির অদিতি নাম্নী এক কন্যা রয়েছেন। ২০১৪ সালে গুজরাত রাজ্যের ‘ব্র্যান্ড এম্বাসেডর’ হিসেবে মনোনীত হন।