চণ্ডীকা হাথুরুসিংহা
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৮ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৯০-এর দশকে শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
নিবিড় ধাঁচ অবলম্বন ও অটল প্রকৃতি নিয়ে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। রোশন মহানামা’র সাথে অদমনীয় জুটি গড়তে সচেষ্ট ছিলেন। পরিস্থিতির সাথে মিল রেখে দীর্ঘ ইনিংস খেলতে পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছিলেন। বিচিত্র স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি নিয়ে তাঁর ইনিংস গড়ে উঠতো। কার্যকর মিডিয়াম-পেস বোলার হিসেবে বলকে শূন্যে ভাসিয়ে ঘুরানোয় দক্ষ ছিলেন।
১৯৮৮-৮৯ মৌসুম থেকে ২০০৪-০৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে মুরস স্পোর্টস ক্লাব এবং তামিল ইউনিয়ন ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিক ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০১-০২, ২০০২-০৩ ও ২০০৩-০৪ মৌসুমে বর্ষসেরা প্রিমিয়ার টুর্নামেন্ট খেলোয়াড়ের সম্মাননা লাভ করেন।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৯ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ২৬ টেস্ট ও ৩৫টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯০-৯১ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। সনথ জয়সুরিয়া’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এ পর্যায়ে আঘাতপ্রাপ্ত রোশন মহানামা’র স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। ২৩ ও ৮১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/১৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
প্রথম তিন টেস্ট থেকে তিনটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। পরবর্তী সিরিজগুলোয়ও কিছু উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। তবে, দক্ষিণ আফ্রিকানদের পেস বোলিং আক্রমণে কঠিন সময় অতিবাহিত করেন ও নিজেকে দলের বাইরে নিয়ে যান।
কিছুকাল দলের বাইরে থাকার পর ঐ অবস্থানে অন্য কোন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে স্থায়ীভাবে পাওয়া যায়নি। ফলশ্রুতিতে, পাকিস্তান গমনার্থে তাঁকে পুণরায় শ্রীলঙ্কা দলে ফিরিয়ে আনা হয়। এ সফরে দূর্দান্ত সিরিজে অংশ নেন। তবে, অস্ট্রেলিয়া গমনার্থে উদীয়মান সনথ জয়াসুরিয়া’র উত্থানে পুণরায় তাঁকে দলের বাইরে রাখা হয়।
শ্রীলঙ্কা দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অল-রাউন্ডারের ঘাটতি থাকায় তাঁকে মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান ও মিডিয়াম-পেস বোলার হিসেবে নবপরিচয়ে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ পর্যায়ে ইংল্যান্ড গমন করেন ও এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে অংশ নেন। কিন্তু এ ধরনের পরীক্ষা স্বল্পকাল টিকে থাকে।
১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে হাসান তিলকরত্নে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান সফরে যান। ৪ মার্চ, ১৯৯৯ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের তৃতীয় খেলায় অংশ নেন। ০/২৯ ও ০/৪১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে শহীদ আফ্রিদি’র বলে শূন্য রানে এলবিডব্লিউতে বিদেয় নেন। তবে, ওয়াজাহাতুল্লাহ ওয়াস্তি’র জোড়া শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও শ্রেয়তর রান-রেটে শ্রীলঙ্কান দল চূড়ান্ত খেলায় ভারতের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্যে শ্রীলঙ্কা দলের সদস্য হন। কিন্তু, ঐ প্রতিযোগিতার কোন খেলায় তাঁকে খেলানো হয়নি। দল নির্বাচকমণ্ডলীর তরুণ খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণের নীতি অবলম্বনের ফলে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ২০০৫ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের কোচ ছিলেন। ১৯ জুলাই, ২০২০ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ব্যাটিং কোচ হিসেবে পুণরায় যুক্ত হন।