|

চামারা সিলভা

১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭৯ তারিখে পানাদুরায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে বাসনাহীরা সাউথ, ব্লোমফিল্ড ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিক ক্লাব এবং সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ডেকান চার্জার্স, কন্দুরাতা ম্যারুনস ও পানাদুরা স্পোর্টস ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন।

প্রথিতযশা ও কার্যকর ব্যাটসম্যান। ছোটখাটো গড়নের অধিকারী। ব্যাটিংকালে পিঠ বাঁকানো অবস্থায় রাখতেন ও কভার ড্রাইভেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে বিখ্যাত ক্রিকেটার অরবিন্দ ডি সিলভা’র সাথে তুলনা করা হতে থাকে।

১৯৯৯ থেকে ২০১১ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সবমিলিয়ে ১১ টেস্ট, ৭৫টি ওডিআই ও ১৬টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। দুইবার বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কার পক্ষে অংশ নেন। ১৯ বছর বয়সে ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। ঐ সময়কার জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি সিদাথ ওয়েতিমুনি’র যুব নীতি গ্রহণের আলোকে শ্রীলঙ্কা দলের সদস্যের মর্যাদা প্রাপ্ত হন।

২৬ আগস্ট, ১৯৯৯ তারিখে কলম্বোর আরপিএসে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। শেন ওয়ার্নের বলে স্ট্যাম্পিং হবার পূর্বে নিখুঁত ৫৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। দূর্দান্ত প্রতিভাবান খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও ১৯৯৯ সালে শারজাহ ও জিম্বাবুয়ে, ২০০০ সালে পাকিস্তান এবং ২০০২ সালে ইংল্যান্ড গমনে দলে নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।

ইংল্যান্ড সফর শেষে দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে যান। সেখানে পানাদুরা ক্রিকেট ক্লাবের অধিনায়কত্ব করেন। পরবর্তী চার বছর নিয়মিতভাবে রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। বিশেষতঃ ২০০৪-০৫ মৌসুমে সেবাস্টিয়ানিটেসের পক্ষে খেলাকালীন স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন।

দলে হিমশিম খেতে থাকেন ও স্থায়ীভাবে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। এক পর্যায়ে কোচ টম মুডি’র পরিচালনায় শ্রীলঙ্কা দলে পুণরায় ফিরে আসেন। দ্রুত তাঁকে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলে যুক্ত করা হয়। ভারতে সফলতম সফর শেষ হলে দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন।

২৭ বছর বয়সে ২০০৬-০৭ মৌসুমে মাহলা জয়াবর্ধনে’র নেতৃত্বাধীন নিউজিল্যান্ড গমনার্থে বিস্ময়করভাবে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৭ ডিসেম্বর, ২০০৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তবে, সূচনা পর্বটি মোটেই সুখকর ছিল না। উভয় ইনিংসে শূন্য রানে বিদেয় নেন ও শ্রীলঙ্কা দল শেন বন্ডের অসাধারণ বোলিংয়ের কল্যাণে পাঁচ উইকেটে পরাজিত হয়। এরফলে, দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায়।

তাসত্ত্বেও, দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর উপর ভরসা রাখেন। ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৬ তারিখে ওয়েলিংটনে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁদের আস্থার প্রতিদান দেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৬১ রান তোলার পর দ্বিতীয় ইনিংসে অসাধারণ অপরাজিত ১৫২ রানের ইনিংস খেলেন। এ পর্যায়ে ৬১ রানে পৌঁছানোকালে পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। এছাড়াও, এ ইনিংসে ব্যক্তিগত প্রথম টেস্ট শতক হাঁকান। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২১৭ রানে পরাজিত হলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

এরপর, বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার তিন সপ্তাহ পূর্বে ভারতের মাটিতে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান।

২০০৭-০৮ মৌসুমে মাহেলা জয়াবর্ধনে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ৩ এপ্রিল, ২০০৮ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৭৬ ও ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, রামনরেশ সারওয়ানের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ করতে সমর্থ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

২২ আগস্ট, ২০১১ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ওডিআইয়ে ৫১ বলে অর্ধ-শতক হাঁকান। ২০ মার্চ, ২০১২ তারিখে কলম্বোয় ইংল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে ডেভেলপম্যান্ট একাদশের সদস্যরূপে কভার ড্রাইভে শতরানের ইনিংস খেলেন। ১৬৩ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলে প্রতিপক্ষের বিপর্যস্ত দিন অতিবাহনে বিরাট ভূমিকা রাখেন। টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৫২ রান ও ওডিআইয়ে অপরাজিত ১০৭ রান তুলেছিলেন।

Similar Posts