১৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৬ তারিখে গায়ানার জর্জটাউনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়েও সবিশেষ দক্ষতার ছাঁপ প্রকাশ করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্যাট ও বল – উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর মাঝে আলস্যতা বিরাজমান ছিল। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে গায়ানা এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্ট ও ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুম থেকে ২০০৪-০৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। তিনজন খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে আঠারোটি ভিন্ন ভিন্ন ইংরেজ কাউন্টি দলের বিপক্ষে শতক হাঁকানোর কৃতিত্বের অধিকারী।
১৯৮৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ১০২ টেস্ট ও ২২৭টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৮ মার্চ, ১৯৮৭ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন।
১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ভারত গমন করেন। ১১ ডিসেম্বর, ১৯৮৭ তারিখে বোম্বের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
কলকাতায় নিজস্ব দ্বিতীয় টেস্টে শতক হাঁকান। তবে, পরবর্তী বছরগুলোয় বেশ অগোছালো খেলেন।
১৯৯০-৯১ মৌসুমে ডেসমন্ড হেইন্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান সফরে যান। ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯০ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। বিখ্যাত ক্রিকেটার ব্রায়ান লারা’র অভিষেক ঘটা টেস্টে দূর্দান্ত খেলেন। অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ব্যাট হাতে ১৩৪ ও ৪৯* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে নিয়ে ১/৩৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কারণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও ১-১ ব্যবধানে সিরিজটি শেষ হয়। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯১ সালে দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। লর্ডসে দলের সংগ্রহ ১০২/২ থাকা অবস্থায় চার নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১১ রান তুলে লর্ডস অনার্স বোর্ডে ঠাঁই করে নেন। ১৪টি চার ও একটি ছক্কার সাহায্যে ইনিংসটি খেলে ডেরেক প্রিঙ্গলের বলে অ্যালান ল্যাম্বের কট আউটে বিদেয় নেন। তবে, খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নিজ দেশে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১ মে, ১৯৯৩ তারিখে সেন্ট জোন্সে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১৭৮* ও ২৯* রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ১/৯৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড নৈপুণ্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।
১৯৯৭ সালে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২০ জুন, ১৯৯৭ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৮১ ও ৩৪ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/২৬ ও ০/২১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ব্রায়ান লারা’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। স্মর্তব্য যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ – দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার এটিই প্রথম টেস্ট ছিল। ২৬ নভেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথম ইনিংসে অধিকাংশ সময় ও দ্বিতীয় ইনিংসের পুরোটা সময় রানারের সহায়তা নিয়ে ব্যাটিং করেছিলেন। এরফলে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ফিল্ডিংয়ে নামেননি। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ৪৪ ও ৩৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। শন পোলকের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৪ উইকেটে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০০০-০১ মৌসুমে নিজ দেশে শন পোলকের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৯ এপ্রিল, ২০০১ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। খেলার প্রথম দিন প্রথম ইনিংসে ১৯ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২৫ ও ৫ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪১ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলীয় সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড গড়ে। এছাড়াও, ১/৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। রিডলি জ্যাকবসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩০ রানে জয় পেলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
অধিনায়ক হিসেবে গড়পড়তা ভূমিকা রেখেছেন। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলের শোচনীয় ফলাফলের প্রেক্ষিতে তাঁকে এ দায়িত্ব থেকে সড়ে আসতে হয় ও ব্রায়ান লারা তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।
২০০২-০৩ মৌসুমে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ভারত সফরে যান। ৩০ অক্টোবর, ২০০২ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্ট খেলেন। দলকে নেতৃত্ব দিয়ে খেলায় তিনি ১/৩৬ ও ০/৬৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাট হাতে নিয়ে ১৯ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। শচীন তেন্ডুলকরের অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
সর্বাপেক্ষা প্রতিভাবান হিসেবে ক্রিকেটে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। স্টিভ ওয়াহ ও শেন ওয়ার্ন তাঁকে ১৯৯০-এর দশকের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে চিত্রিত করেছিলেন। তন্মধ্যে, শেন ওয়ার্ন তাঁকে নিজের সময়কালের সেরা ১০০ ক্রিকেটারের তালিকায় ঠাঁই দিয়েছেন।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। অ্যাডিলেডভিত্তিক স্থানীয় ক্লাবে প্রশিক্ষণ দেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষদিক থেকে অ্যাডিলেডে বসবাস করছেন। ২০১১ সালে বার্বাডোসের সাজিকর হাই পারফরম্যান্স সেন্টারের ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। ১৯ জুন, ২০১৫ তারিখে গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্সের কোচ হিসেবে মনোনীত হন। এরপর, ১০ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
১৯৯৮ সালে ওয়াল্টার লরেন্স ট্রফি লাভ করেন।
