১ জানুয়ারি, ১৯০২ তারিখে নরওয়ের অ্যালসান্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
কিশোর অবস্থায় দূর্ঘটনায় এক চোখ নষ্ট হয়ে যায় তাঁর। ১৯২০-২১ মৌসুম থেকে ১৯৩৬-৩৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯২০-এর দশকের শেষদিকে ম্যাটিং উইকেটে কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানদের কাছে মৃত্যুদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। এ ধরনের উইকেটে অপূর্ব শিল্পসত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। তবে, ঘাসাচ্ছাদিত উইকেটে সাধারণমানের বোলারে পরিণত হতেন। ম্যাটিং উইকেটে অন্যতম সেরা বোলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
১৯২০-২১ মৌসুমে ট্রান্সভালের পক্ষে প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন। ১৯২১ সালে ট্রান্সভালের সদস্যরূপে সফররত অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে ৬/৮৯ লাভ করে সর্বপ্রথম দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
১৯২১ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ১৭ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯২১-২২ মৌসুমে নিজ দেশে হার্বি কলিন্সের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৫ নভেম্বর, ১৯২১ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। চার্লি ফ্রাঙ্ক, এরিক মার্ক্স ও উইলিয়াম লিংয়ের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ১/৪২ ও ১/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৬ ও ০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯২২-২৩ মৌসুমে নিজ দেশে ফ্রাঙ্ক মানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২৩ ডিসেম্বর, ১৯২২ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। বেশ কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২২ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ০ ও ২৩ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। পাশাপাশি, ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে এডব্লিউ কারকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ১/৪২। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি ১/৫৮ ও ৫/৫৩ পান। স্বাগতিকরা ১৬৮ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯২৪ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর হার্বি টেলরের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৪ জুন, ১৯২৪ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৬৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ইনিংস ও ১৮ রানে পরাজিত হলে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৯২৪-২৫ মৌসুমে সম্মানীয় এল.এইচ. টেনিসনের নেতৃত্বাধীন দলের বিপক্ষে ম্যাটিং উইকেটে স্মরণীয় সাফল্য পান। চারটি প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় অংশ নিয়ে ১১.৪৫ গড়ে ৩৭ উইকেট পান। ১৯২৪ সালে দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। নিজ দেশে দারুণ খেলার সুবাদে স্বভাবতঃই তাঁর সাফল্যের দিকেই সকলের মনোযোগ ছিল। কিন্তু, পিঠের আঘাতের কবলে পড়েন। তবে, সুস্থ হলেও ঘাসাচ্ছাদিত পিচে তাঁর বোলিংয়ে অকার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয়। এরপর, আর কখনও বিদেশ সফরে যাননি। এ সফরে দুই টেস্টে অংশ নিয়ে ব্যাট হাতে চার গড়ে রান তুলেন ও ১৫৭ রান খরচায় মাত্র এক উইকেট পেয়েছিলেন। তন্মধ্যে, এজবাস্টনে তাঁর দল ৩০ রানের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ দাঁড় করায়।
১৯২৭-২৮ মৌসুমে নিজ দেশে রনি স্ট্যানিফোর্থের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯২৭ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২৩ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৩৯* ও ১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, ০/১০ ও ১/৯০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ৮৭ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
এরপর, ২১ জানুয়ারি, ১৯২৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৩৯ রান অতিক্রম করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে এ সফলতাকে আরও ছাঁপিয়ে যান। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৫১ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৫১ ও ৬৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/৯৪ ও ১/২৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫/৮৩ ও ১/১৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৯ ও ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে ২-২ ব্যবধানে সিরিজ শেষ করতে সক্ষম হয়।
১৯৩০-৩১ মৌসুমে নিজ দেশে পার্সি চ্যাপম্যানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৩০ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে জি ডাকওয়ার্থকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/৫৩। ঐ টেস্টে ১৫০ রান খরচায় ১১ উইকেট পেয়েছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৮৭ নিয়ে দলের বিজয় নিশ্চিত করেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে যথার্থ ভূমিকা রাখেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৫/৬৩ ও ৬/৮৭ পান। এছাড়াও, ০ ও ১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। স্বাগতিকরা ২৮ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। তবে, দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘাসাচ্ছাদিত পিচে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ও পঞ্চম টেস্টে তাঁকে মাঠের বাইরে রাখা হয়।
একই সফরের ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩১ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্ট খেলেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৬/৮৭। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৩/১৪৮ ও ৬/৪৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, উভয় ইনিংসে ১১* রান করে সংগ্রহ করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৩৫-৩৬ মৌসুমে নিজ দেশে ভিক রিচার্ডসনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৬ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ডব্লিউএএস ওল্ডফিল্ডের প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১/৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ইনিংস ও ১৮৪ রানে পরাজিত হলে স্বাগতিকরা ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
১৯৩৩ সালে এক্স-রেতে গুরুতর সমস্যা ধরা পড়লে তিনি এক পর্যায়ে বোলিং করাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। টেস্টগুলো থেকে ৩৫.৭৬ গড়ে ৫০ উইকেট দখল করেছিলেন। ২৯ জানুয়ারি, ১৯৭৭ তারিখে ট্রান্সভালের জোহানেসবার্গে ৭৫ বছর ২৮ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
