১২ জুলাই, ১৯৪৩ তারিখে ক্যান্টারবারির তিমারু এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। পাশাপাশি, বামহাতে কার্যকর ব্যাটিং করতেন। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ১৯৭০-এর দশকের সূচনাকাল পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড দলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
৬ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। বল হাতে নিয়ে উভয় দিক দিয়ে বোলিং আক্রমণে অংশ নিতেন। এছাড়াও, মারকুটে ভঙ্গীমায় ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন।
১৯৬৪-৬৫ মৌসুম থেকে ১৯৭৯-৮০ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি ও ওয়েলিংটনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে চিত্রিত হয়েছিলেন। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৩ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৩০ টেস্ট ও দুইটিমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন।
নিউজিল্যান্ড দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত হবার পরপরই ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে ভারত অভিমুখে জন রিডের নেতৃত্বাধীন দলের সাথে যাত্রা করেন। ৫ মার্চ, ১৯৬৫ তারিখে গ্রাহাম ডাউলিংয়ের সাথে তাঁর স্বপ্নীল টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতকের সন্ধান পান। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১০৫ রানের দূর্দান্ত শতক হাঁকান। এছাড়াও, ভারতের প্রথম ইনিংসে প্রথমবারের মতো টেস্টে পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। বল হাতে নিয়ে ৫/৮৬ লাভ করে নিউজিল্যান্ডীয় রেকর্ড গড়েন। পরবর্তীতে, ১৯৯৮ সালে পল ওয়াইজম্যান শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ৫/৮২ লাভ করে রেকর্ডটি নিজের করে নেন। এ পর্যায়ে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট অভিষেকে শতক হাঁকানোর পাশাপাশি ইনিংসে পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্বের অধিকারী হন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। এছাড়াও, ঐ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তিনি আরও একবার পাঁচ-উইকেট লাভ করেছিলেন।
১৯৬৫ সালে জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে ইংল্যান্ড সফরে যান। ১৭ জুন, ১৯৬৫ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫১ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/৬৬ ও ০/৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৬৫-৬৬ মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মাইক স্মিথের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১১ মার্চ, ১৯৬৬ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে ১৮ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৪৬ ও ২/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় শেষ হয়।
১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে নিজ দেশে গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৬৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ টেস্টে নিজস্ব দ্বিতীয় শতরানের ইনিংস খেলেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১০৫ রান অতিক্রম করেন। ১২৪ রান তুলেছিলেন। তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শের জন্যে তাঁকে মাত্র ৮৩ বল মোকাবেলা করতে হয়েছিল। ৩৬ বছর তাঁর এ দ্রুততম অর্জনের কৃতিত্বটি টিকেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/৪৮ ও ১/৫৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ৫ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৬৯ সালে গ্রাহাম ডাউলিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২১ আগস্ট, ১৯৬৯ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে এপিই নটের প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৪/৪৭ ও ০/১১ লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ০ ও ৪ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ডেরেক আন্ডারউডের শিকারে পরিণত হন। ৮ উইকেটে জয় পেলে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
ফলশ্রুতিতে দলে তাঁর অবস্থান পাকাপোক্ত হয়। বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে আট নম্বর অবস্থানে মাঠে নামতেন। তবে, অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, তিনি যদি আরও উপরে খেলার সুযোগ পেতেন তাহলে আরও নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারতেন। আক্রমণাত্মক ধাঁচের কারণেই মূলতঃ বড় ধরনের সংগ্রহের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারেননি।
১৯৭১-৭২ মৌসুমে গ্রাহাম ডাউলিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ২০ এপ্রিল, ১৯৭২ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চূড়ান্ত ও পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। ৩/৭৪ ও ৫/৪১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২৬ ও ৪২* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। অবশ্য, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় শেষ হয়।
১৯৭২-৭৩ মৌসুমে নিজ দেশে ইন্তিখাব আলমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক ইন্তিখাব আলমের চতুর্থ উইকেট লাভ করে টেস্টে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৪/৮৬ ও ২/৬৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।
১৯৭৩ সালে বেভান কংডনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৫ জুলাই, ১৯৭৩ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২০ ও ১ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/১১১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
২৬.৬০ গড়ে ১১১ টেস্ট উইকেট দখল করেন। উইকেট সংগ্রহের দিক দিয়ে তিনি নিউজিল্যান্ডের সেরাদের তালিকায় দ্বাদশ স্থানে অবস্থান করছেন। এছাড়াও, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭/৭৪ পান। বোলার হিসেবে তাঁর এ সাফল্যটি নিউজিল্যান্ডীয় বোলারদের সেরা তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে।
১৯৭৩ সালে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রবর্তনের পর দুইটিমাত্র খেলায় অংশ নিয়ে অবসর গ্রহণ করেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ঘরোয়া ও জাতীয় পর্যায়ে দল নির্বাচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডুনেডিনভিত্তিক জন ম্যাকগ্লাশান কলেজে $৩৬৮,০০০ মার্কিন ডলার আত্মসাতের ২২টি অভিযোগে দোষী হলে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে এক বছর কারাভোগ করতে হয়।
জীবনের শেষদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কবলে পড়েন। ২০১৬ সালে গ্যাংগ্রিনে তাঁর পা কেটে ফেলতে হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তারিখে ৭৭ বছর ২০৯ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
