৮ নভেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ওলংগং এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
‘বিং’ ডাকনামে ভূষিত ব্রেট লি ৬ ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৭ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। সন্দেহাতীতভাবে অন্যতম গতিসম্পন্ন বোলার হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম থেকে ২০০৯ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন সরব রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস এবং নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ওটাগো ও ওয়েলিংটনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব, কলকাতা নাইট রাইডার্স ও সিডনি সিক্সার্সের পক্ষে খেলেছেন। টি২০ ক্রিকেটের শেষ ওভারে হ্যাট্রিক করেছিলেন।
১৯৯৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৭৬ টেস্ট, ২২১টি ওডিআই ও ২৫টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে শচীন তেন্ডুলকরের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৯ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। দূর্দান্ত খেলে অভিষেক পর্বকে স্মরণীয় করে রাখেন। খেলায় তিনি ৫/৪৭ ও ২/৩১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের প্রাণান্তঃকর ব্যাটিং প্রয়াস সত্ত্বেও স্বাগতিকরা ১৮০ রানে জয়লাভ করে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
একই মৌসুমে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৩১ মার্চ, ২০০০ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৫/৭৭ ও ৩/৪৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৬ উইকেটে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৮ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৫/৬৭ ও ১/৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৬১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর প্রাণান্তঃকর অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০২ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৩/৪০ ও ০/৫৫ লাভ করেন। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ৪* রান তুলেন। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩৬০ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০০০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার স্বর্ণালী সময়ে অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে বিবেচিত হতেন। নিজের স্বর্ণালী সময়ে অন্যতম দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলারের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। দূরন্ত গতিপণার সাথে উইকেট সংগ্রহে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। তবে, সমসাময়িক গতিসম্পন্ন খেলোয়াড়দের তুলনায় তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিবেগে বোলিং করে বিশ্বব্যাপী ব্যাটসম্যানদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করেন।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে পাকিস্তানের শোয়েব আখতারের ঘণ্টাপ্রতি ১৬১.৩ কিলোমিটারের পর বিশ্বের দ্বিতীয় গতিদানবের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। ২০০৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৬১.৮ কিলোমিটার গতিবেগের রেকর্ড ধারন করা হয়। তবে, চ্যানেল নাইন পরবর্তীতে এ সংখ্যা সংশোধন করে বিবৃতি দেয় যে ভুলের কারণে এটি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি ২০০৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬১.১ কিলোমিটার গতিবেগে বোলিং করেছেন।
ওডিআইয়ে সেরা গতিসম্পন্ন বোলার হিসেবে চিত্রিত হয়েছেন। তবে, একই সফলতা টেস্ট পর্যায়ে ধরে রাখতে পারেননি। তাসত্ত্বেও, দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় ঠিকই তিন শতাধিক উইকেট লাভে স্বীয় সক্ষমতা প্রদর্শন করেছিলেন। স্পষ্টতঃই আঘাতের কারণে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন বাঁধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। কিন্তু, ৫০-ওভারের খেলাতেই অধিক উপভোগ করেছেন।
২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৬ নভেম্বর, ২০০৪ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। জাস্টিন ল্যাঙ্গারের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা খেলায় ২১৩ রানে পরাজয়বরণসহ ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
একই মৌসুমে ফিরতি সফরে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৮ মার্চ, ২০০৫ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। আবারও দলের দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
২০০৫-০৬ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৫ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫/৯৩ ও ১/৮৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৯* ও ৩২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ব্রাড হজের দূর্দান্ত প্রয়াস সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অগ্রসর হতে থাকে।
২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে মাহেলা জয়াবর্ধনে’র অধিনায়কত্বে শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ খেলেছিলেন। ৮ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৪/২৬ ও ৪/৮৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, দলের একমাত্র ইনিংসে তাঁকে ব্যাটিং করতে হয়নি। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৪০ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই সফরের ১৬ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে হোবার্টে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৪/৮২ ও ৪/৮৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলী কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯৬ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, এ সিরিজে ১৬ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে অনিল কুম্বলে’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ২৪ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩/১০১ ও ২/৭৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। বিখ্যাত ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকরের অসামান্য ব্যাটিংয়ের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। এ সিরিজে ৮৬ রান সংগ্রহসহ ২৪ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৮-০৯ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০০৮ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ০/৬৮ ও ০/৪৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২১ ও ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ডেল স্টেইনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ টি২০ ক্রিকেট লীগে জন্টি রোডস, বীরেন্দ্র শেহবাগ, তিলকরত্নে দিলশান, শচীন তেন্ডুলকর, ব্রায়ান লারা’র সাথে অংশ নেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। লনা অ্যান্ডারসন নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।
