৫ জুলাই, ১৯৮৪ তারিখে লন্ডনডেরি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি নিচেরসারিতে বামহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। আয়ারল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলেছেন।
‘বয়ডো’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছেন। স্ট্রাব্যান গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন শেষে হার্পার অ্যাডামস ইউনিভার্সিটি কলেজে পড়াশুনো করেছেন। ২০০৭-০৮ মৌসুম থেকে ২০১৯ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর আইরিশ ক্রিকেটে নর্থ-ওয়েস্ট ওয়ারিয়র্স এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ার, এসেক্স, মিডলসেক্স ও ওয়ারউইকশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ইংল্যান্ড লায়ন্স ও কলকাতা টাইগার্সের পক্ষে খেলেছেন। ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ তারিখে আবুধাবিতে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।
২০০৭ সাল থেকে ২০২০ সময়কালে তিনটিমাত্র টেস্ট, ৭৫টি ওডিআই ও ৫০টি টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার সুপার-এইট পর্বে আয়ারল্যান্ডের উত্তরণে অসম্ভব ভূমিকা রেখে প্রথমবারের মতো সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হন। ৬ ফুট ৭ ইঞ্চির দীর্ঘকায় শারীরিক গড়ন নিয়ে অনুপযোগী পিচেও বাউন্স প্রদানে সক্ষমতা দেখিয়েছেন। এছাড়াও, দেরীতে বল ঘোরার ফলে যে-কোন ব্যাটসম্যানই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যহীনতার কবলে পড়তো। ঐ প্রতিযোগিতায় ১২ উইকেট লাভ করেছিলেন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে দলের উল্লেখযোগ্য সাফল্যে বিরাট ভূমিকা রাখেন।
পাঁচ বছর পর ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট খেলার স্বপ্নে বিভোঁড় থাকায় আয়ারল্যান্ড দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না। এরফলে স্বদেশ কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। তবে, গৃহীত দেশের সীমিত-ওভারের খেলায় আশাব্যঞ্জক খেলা উপহার দেয়ার ফলে ২০১৩-১৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে অ্যালাস্টেয়ার কুকের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত হন। ৩ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। এরফলে, ইয়ন মর্গ্যানের ন্যায় তিনিও আইরিশ হিসেবে ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট খেলার সুযোগ পান। স্বপ্ন স্বার্থক হলেও তেমন সুবিধে করতে পারেননি ও দল থেকে বাদ পড়েন। গ্যারি ব্যালেন্সের সাথে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১৩ ও ০ রানে বিদেয় নেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৩৪ ও ১/৪৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঐ টেস্টে তাঁর দল ২৮১ রানে পরাজয়বরণ করে ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৫-০ ব্যবধানে পরাজিত হয়।
২০১৫ সালে পুণরায় আয়ারল্যান্ড দলে যুক্ত হন। ইংল্যান্ডের পক্ষে একটিমাত্র টেস্ট, সাতটিমাত্র ওডিআই ও দুইটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। উঁচু স্তরের ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ডের পক্ষে আরও দুই টেস্ট খেলেন।
মিডলসেক্স দলে কিছুটা সময় ব্যয় করলেও প্রথম একাদশে ঠাঁই পাননি। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় সাফল্য লাভের পর ডার্বিশায়ারের সদস্য হন। এরপর, ২০০৭ সালের শেষদিকে ওয়ারউইকশায়ারে চলে যান। তবে, উপর্যুপরী আঘাতের কারণে স্বাভাবিক খেলা প্রদর্শন করতে পারেননি। ২০০৯ সালে ফুরফুরে মেজাজে ও শারীরিকভাবে সুস্থ থেকে নিজের সম্ভাব্যতা তুলে ধরতে সচেষ্ট হন। ১১ বছর ঐ ক্লাবে খেলে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপ, দুইবার ৫০-ওভারের প্রতিযোগিতা ও ২০১৪ সালের টি২০ ব্ল্যাস্টের শিরোপা বিজয়ে অংশ নেন।
২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় আয়ারল্যান্ডের সদস্য ছিলেন। ব্যাঙ্গালোরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলের জয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। এরপর কাউন্টি দলের পক্ষে এক মৌসুমে ৫০টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। মার্কাস ট্রেস্কোথিকের শরীর বরাবর বেশ কয়েকবার বোলিং করেন। সমারসেটের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মার্কাস ট্রেস্কোথিক ঐ মৌসুমে ফাস্ট বোলার হিসেবে তাঁর ভূমিকার প্রশংসা করেন। ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারা ও শারীরিক সুস্থতা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে, দলে অন্তর্ভুক্তির ফলে অন্যান্য বোলারের সহায়তায় পেস, বাউন্স ও বলে বাঁক খাওয়ানোর দক্ষতা প্রদর্শনে যে-কোন ব্যাটসম্যানের স্বাচ্ছন্দ্যহীনতার বিষয়ে খুব কমই সন্দেহের মুখোমুখি হতেন।
২০১১ সালে ইংল্যান্ড লায়ন্সের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষে প্রথম খেলেন। একই বছরের শেষদিকে ইংল্যান্ড পারফরম্যান্স প্রোগ্রামের জন্যে নির্বাচিত হন। ২০১২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত সিরিজে ক্রিস ট্রেমলেটের আঘাতের কারণে টেস্ট দলে যুক্ত হবার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। কিন্তু, নিজের শারীরিক সুস্থতা ধরে রাখতে না পারার কারণে বঞ্চিত হন।
২০১২ সালের শেষদিকে ৩৭টি ওডিআই ও ১৫টি টি২০আইয়ে অংশ নেয়ার পর আইরিশ ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। এরপর, ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে ঠাঁই পাবার দিকে মনোনিবেশ ঘটান। আঘাত থেকে মুক্ত থাকার লক্ষ্যে আপ্রাণ প্রয়াস চালান। এক পর্যায়ে আয়ারল্যান্ড, ওয়ারউইকশায়ার ও ইংল্যান্ড লায়ন্সের পক্ষে সকল স্তরের খেলায় অংশগ্রহণের বিষয়ে শারীরিক সুস্থতা না থাকার বিষয়টি স্পষ্টতঃই চোখে পড়ে। এছাড়াও, ক্লাবের তৎকালীন কোচ অ্যাশলে জাইলস মন্তব্য করেন যে, ওয়ারউইকশায়ার ও ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলতে থাকলেও অন্য কোন কাউন্টি দলের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারার সম্ভাবনা নেই।
২০১৩ সালের শুরুতে সুন্দরভাবে যাত্রা শুরু করেন। স্টুয়ার্ট ব্রড ও স্টিভেন ফিনের আঘাতের কারণে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজে অংশ নেয়ার জন্যে ইংল্যান্ড দলে আমন্ত্রণ পান। ঐ বছরের জুন মাসে ইংল্যান্ডের পক্ষে প্রথমবারের মতো খেলার সুযোগ পান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০আইয়ে অংশ নেন। এর পরপরই ইংল্যান্ডের পক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেন। ডাবলিনে কাকতালীয়ভাবে সাবেক দেশের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৪/৪৬ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। এরপর, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ওডিআই সিরিজে বেশ ভালো করেন। ফলশ্রুতিতে, অ্যাশেজ দলে খেলার জন্যে মনোনীত হন।
প্রত্যাশা অনুযায়ী ঐ সফরটি মনঃপুত হয়নি। চূড়ান্ত টেস্টের পূর্ব পর্যন্ত উপেক্ষিত হন। টেস্ট অভিষেকে মানসিক অস্থিরতা লক্ষ্যণীয় ছিল। এ পর্যায়ে তাঁর মেজাজ ও পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ততায় ইংল্যান্ড দলে উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। পরবর্তীতে জানা যায় যে, আঘাত নিয়েই তিনি খেলতে নেমেছিলেন। এরপর, ইংল্যান্ডের বিশ্ব টি২০ দল থেকে বাদ পড়েন। এক বছর দলের বাইরে থাকার পর দক্ষিণ আফ্রিকা গমনার্থে লায়ন্স দলের পক্ষে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ পান। এরফলে, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় আয়ারল্যান্ডের পক্ষে খেলার পর আর দলে ফেরার সম্ভাবনা স্তিমিত হয়ে যায়। কেবলমাত্র আইসিসির বিশেষ অনুমোদন নিয়েই তড়িৎ প্রত্যাবর্তন করার সুযোগ পেতে পারেন।
২০১৭-১৮ মৌসুমে নিজ দেশে সরফরাজ আহমদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে অন্য সকলের সাথে তাঁর একযোগে অংশ নেন। ঐ টেস্টে তিনিই কেবলমাত্র পূর্ব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ছিলেন। ১১ মে, ২০১৮ তারিখে ডাবলিনে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তান দলের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে ২/৭৫ ও ১/৫৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ১৭ ও ৬ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ৫ উইকেটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ক্রিকেট আয়ারল্যান্ড কর্তৃক টায়রন কেন ও স্টুয়ার্ট থম্পসনের সাথে তিনিও ২০২১ সালের কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতার বাইরে থাকেন। ১০ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে জর্জ ডকরেল, উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের সাথে একযোগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত ওডিআই সিরিজে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা থেকে বাদ পড়েন। ৩৬ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।
লন্ডনডেরির ক্রিকেটপ্রেমী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দুই ভাই ও এক বোন আয়ারল্যান্ডের পক্ষে ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছেন। খেলোয়াড়ী জীবন শেষ হলে হয়তোবা পারিবারিক খামারে যুক্ত হতে পারেন।
