১৮ অক্টোবর, ১৮৫৪ তারিখে ভিক্টোরিয়ার স্যান্ডহার্স্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষণ কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া – উভয় দলের পক্ষেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়া দলের দ্বিতীয় অধিনায়ক ছিলেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কর্পোরাল গিলবার্ট উইলিয়াম লয়েড মারডক ও এডিথ সুজান হক দম্পতির সন্তান ছিলেন। বলারাটভিত্তিক ড. ব্রোমলিজ স্কুলের অধ্যয়নের পর মেলবোর্নের বনউইক স্কুলে পড়াশুনো করেন। এক পর্যায়ে নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনিতে চলে যান। সেখানে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত আইন পেশায় মনোনিবেশ ঘটান।

১৮৭৫-৭৬ মৌসুম থেকে ১৯০৪ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্স ও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, লন্ডন কাউন্টির পক্ষে খেলেছেন।

১৮৭৭ থেকে ১৮৯২ সময়কালে সব মিলিয়ে ১৯ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। ১৮৭৬-৭৭ মৌসুমে নিজ দেশে জেমস লিলিহোয়াইট জুনিয়রের নেতৃত্বাধীন দলের মুখোমুখি হন। ৩১ মার্চ, ১৮৭৭ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ফ্রেডরিক স্পফোর্থ ও থমাস কেলি’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের দ্বিতীয় খেলায় তিনি ৩ ও ৮ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে একটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। তবে, ঐ খেলায় সফরকারীরা ৪ উইকেটে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

১৮৭৮ সালে অস্ট্রেলীয় দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৮৮৪-৮৫ মৌসুমে প্রবেশপথ থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৫০ শতাংশ লাভের বিষয়ে আর্থিক মতবিরোধে নেতৃত্ব দেন। এর ছয় বছর পর অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে পুণরায় খেলার সুযোগ পান।

১৮৮০ সালে অজি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৬ সেপ্টেম্বর, ১৮৮০ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে প্রথম প্রকৃত টেস্টে ১৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে বেশ আলোচনায় চলে আসেন। তবে, প্রথম ইনিংসে অ্যালান স্টিলের বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। তবে, ইংল্যান্ড দল প্রথমবারের মতো নিজ দেশে টেস্ট জয়ের সন্ধান পায়। সিরিজের একমাত্র টেস্টে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয়লাভ করে।

১৮৮২-৮৩ মৌসুমে নিজ দেশে ইভো ব্লাইয়ের নেতৃত্বাধীন দলের মুখোমুখি হন। ১৮৮২ সালে দ্বিতীয় ইনিংসেও কম ভূমিকা রাখেননি। ২৯ রান তুলে ইংল্যান্ড দলকে ৮৫ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করেন ও অ্যাশেজের উৎপত্তিতে ভূমিকা রাখেন।

একই সফরের ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮৩ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ০ ও ১৭ রান সংগ্রহসহ চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ৪ উইকেটে পরাজয়বরণ করলেও সফরকারীরা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

এরপর, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ২১১ রানের মনোরম দ্বি-শতক হাঁকান। ১৮৮৪ সালে ওভালে এ সফলতা পান।

১৮৮৪-৮৫ মৌসুমে নিজ দেশে আর্থার শ্রিউসবারি’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১২ ডিসেম্বর, ১৮৮৪ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৫ ও ৭ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ববি পিলের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয়লাভ করে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৮৮৪ সালে বিয়ে করার পর কিছুকাল খেলার জগৎ থেকে দূরে থাকেন। আকস্মিকভাবে ১৮৯০ সালে পুণরায় ইংল্যান্ড দলে যুক্ত হন। সাসেক্সের পক্ষে খেলেন ও অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। নতুন কাউন্টির পক্ষে প্রায় ছয় হাজার রান তুলেছিলেন।

১৮৯০ সালে অজি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ইংল্যান্ড সফরে যান। ১১ আগস্ট, ১৮৯০ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ২ ও ৬ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ঘটনাবহুল ঐ টেস্টে জ্যাক বারেট সহজ রান-আউট করতে ব্যর্থ হন ও ওভারথ্রোয়ের কারণে স্বাগতিক দল দুই উইকেটে নাটকীয়ভাবে বিজয়ী হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

১৮৯১-৯২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ওয়াল্টার রিডের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলার পর ইংল্যান্ডের পক্ষে প্রথমবারের মতো খেলার সুযোগ পান। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ডব্লিউএল মারডক দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের পক্ষে উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯ মার্চ, ১৮৯২ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১২ রান সংগ্রহসহ উইকেট-রক্ষণের দায়িত্বে থেকে একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। সফরকারীরা ইনিংস ও ১৮৯ রানে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

অস্ট্রেলিয়া দলকে ষোল টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে, অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে একবার দলের উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ১৮৮২ সালে টেস্টের ইতিহাসের ষষ্ঠ টেস্টে যৌথ দায়িত্ব পালন করে দলকে পাঁচ উইকেটে জয় এনে দেন।

সব মিলিয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রায় সতেরো হাজার রান সংগ্রহ করেছেন। ১৮৮১-৮২ মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৩১২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে বিদেয় জানানোর পর আরও পাঁচ বছর ক্রিস্টাল প্যালেসভিত্তিক লন্ডন কাউন্টিতে খেলেন। ১৯০৪ সালে জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে ১৪০ রান তুলেছিলেন।

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখে ডিন জোন্স ও ক্যাথরিন ফিটজপ্যাট্রিকের সাথে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ৮ ডিসেম্বর, ১৮৮৪ তারিখে জেমিমা ওয়াটসন নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। বিয়ের পর দৃশ্যতঃ খেলার জগৎকে বিদেয় জানিয়েছিলেন। এ দম্পতির দুই পুত্র ও তিন কন্যা সন্তান ছিল। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯১১ তারিখে ভিক্টোরিয়ার মেলবোর্নে ৫৬ বছর ১২৩ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার টেস্ট চলাকালীন মধ্যাহ্নবিরতিতে খিঁচুনিতে আক্রান্ত হন ও বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। ইংল্যান্ডে তাঁর মৃতদেহ ফেরৎ আনা হলে ১৮ মে, ১৯১১ তারিখে লন্ডনের কেনসাল গ্রীনে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

Similar Posts

  • | | |

    মারভান আতাপাত্তু

    ২২ নভেম্বর, ১৯৭০ তারিখে কালুতারায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশ নিয়েছেন। শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। গলের মহিন্দ্র কলেজে অধ্যয়নকালীন জিডব্লিউএস ডি সিলভা’র কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে, কলম্বোর আনন্দ…

  • | |

    ডেনিস লিলি

    ১৮ জুলাই, ১৯৪৯ তারিখে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার সুবিয়াকো এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার। টেস্ট ক্রিকেটের কিংবদন্তী তারকা। বিশাল ব্যক্তিত্ব এবং শুধুমাত্র অস্ট্রলীয়দের মধ্যেই নয়, বৈশ্বিকভাবে বীর হিসেবে বিবেচিত হয়ে…

  • |

    বোয়েতা ডিপেনার

    ১৪ জুন, ১৯৭৭ তারিখে কেপ প্রভিন্সের কিম্বার্লিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বল বরাবর ব্যাটকে নিয়ে খেলতেই অধিক পছন্দ করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ঈগলস ও ফ্রি স্টেট এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে লিচেস্টারশায়ারের…

  • |

    মাইক ম্যাকাউলি

    ১৯ এপ্রিল, ১৯৩৯ তারিখে নাটালের ডারবানে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে মিডিয়াম কিংবা স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ভ্রমণপ্রিয় ক্রিকেটার হিসেবে সম্যক পরিচিতি পান। পাঁচটি রাজ্য দলের পক্ষে খেলেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে…

  • |

    লরেন্স রো

    ৮ জানুয়ারি, ১৯৪৯ তারিখে জ্যামাইকার হুইটফিল্ড টাউন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। হাত ও চোখের অপূর্ব সমন্বয় ঘটাতেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে জ্যামাইকা এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।…

  • |

    ভাগবত চন্দ্রশেখর

    ১৭ মে, ১৯৪৫ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কর্ণাটকের মহীশূরে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। লেগ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাঁচ বছর বয়সে ডানহাতে পোলিওতে আক্রান্ত হন। তিন মাস তাঁকে হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়। এ পঙ্গুত্বের ফলে তাঁর বাহু অতি নমনীয় পর্যায়ে…