১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৭ তারিখে ভিক্টোরিয়ার থর্নবারি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বামহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
খেলাধূলাপ্রিয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৯৪৯ সালে প্রেস্টন টেকে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নকালীন বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের পরিচিতি তিনি তুলে ধরেছিলেন। ১১ বছর বয়সে বিজ্ঞান শিক্ষক জন রিড তাঁকে বড়দের উপযোগী নর্থকোট ক্রিকেট ক্লাবের খেলার জন্যে অনুপ্রেরণা যোগান। তাঁর নির্দেশ অগ্রাহ্য করে বলেছিলেন যে, তিনি কখনও চার্চ ক্রিকেটের বাইরে খেলার যোগ্যতা রাখেন না। পরবর্তীকালে তিনি মন্তব্য করেন যে, ‘বিদ্যালয় জীবনে এটি আমার অন্যতম স্মরণীয় স্মৃতি হয়ে থাকবে।’ এ সময়ে তিনি স্থানীয় থর্নবারি প্রেসবাইটারিয়ান সানডে স্কুল ক্রিকেট ক্লাবে খেলেন।
ক্রিকেট ছাড়াও, বেসবলে দক্ষ ছিলেন। শীতকালে বেসবল ও গ্রীষ্মকালে ক্রিকেট খেলতেন। ১৯৫২ সালে বিদ্যালয়ের বেসবল দলকে নেতৃত্ব দেন। এ অবস্থায় তাঁর শিক্ষকেরা মন্তব্য করেন যে, সম্ভবতঃ তিনি খেলাধূলার দিকে জীবনকে নিয়ে যাবেন। নীল হার্ভে ও ওয়ালি ড্রাইভার প্রেস্টন টেকের বেসবল খেলায় আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁরা তাঁকে যথেষ্ট উদ্দীপনা যোগাতেন।
১৯৫৫-৫৬ মৌসুম থেকে ১৯৭১-৭২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়া দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৬০-৬১ মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার সদস্যরূপে এনএসডব্লিউ’র বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৬৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৩ সময়কালে দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
১৯৬১ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৬৭ টেস্ট ও একটিমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে রিচি বেনো’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৮ জুন, ১৯৬১ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৫৭ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৬৮ থেকে ১৯৬৩ সময়কালে অস্ট্রেলিয়া দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২১০ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান তুলেছেন।
টেস্টগুলো থেকে তেরো শতক সহযোগে ৫২৩৪ রান তুলেছেন। ১২৩বার ইনিংস উদ্বোধনে নেমেছিলেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্রিজে অবস্থান করতে পারতেন। দলীয় সঙ্গী ববি সিম্পসনের সাথে প্রথম উইকেটে ৬১ গড়ে ৩৫৯৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ২০০০ রানের মানদণ্ডে ক্রিকেটে ইতিহাসের তৃতীয় সেরা জুটির সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে কেনসিংটন ওভালে ৩৮২ রানের জুটি দাড় করান। এ পর্যায়ে উভয় এ দ্বি-শতক হাঁকিয়েছিলেন।
১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে বব সিম্পসনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২০ জানুয়ারি, ১৯৬৭ তারিখ ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত ৭ ও দলীয় সংগ্রহ ১৪/০ থাকাকালে আঘাতের কবলে পড়েন। এরপর, দলের সংগ্রহ ৪৫/৩ থাকাকালে পুণরায় মাঠে ফিরে আসেন। খেলায় তিনি ৪৪ ও ৩৪ রান সংগ্রহ করেন। সফরকারীরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
দুইবার ইনিংস উদ্বোধনে নেমে অপরাজিত অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করেছিলেন। ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে দলের সাথে ভারত গমন করেন। দিল্লি টেস্টে ৪৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। এ পর্যায়ে বিষেন বেদী ও ইএএস প্রসন্নের তোপে পড়লে কোন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান ১৫ রানের অধিক তুলতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়া দল ১০৭ রানে গুটিয়ে যায়। পরের মৌসুমে সিডনিতে দল ১১৬ রানে গুটিয়ে গেলেও তিনি ৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন। কেবলমাত্র আরেকজন ব্যাটসম্যান ৬-এর অধিক রান তুলেছিল।
১৯৭০-৭১ মৌসুমে নিজ দেশে রে ইলিংওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ৫ জানুয়ারি, ১৯৭১ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ও একমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নেন। একই সফরের ২৯ জানুয়ারি, ১৯৭১ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সিরিজের ষষ্ঠ টেস্ট খেলেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ১০ ও ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সাত-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
টেস্টগুলোয় ৪৭.১৫ গড়ে তেরো শতক সহযোগে ৫২৩৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৭২ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলো থেকে ৫০ শতক সহযোগে ৫০.৯০ গড়ে ১৮৭৩৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি বিদেয় নেয়াকে পছন্দ করতেন না।
১৯৬২ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৯৮১ সালে অস্ট্রেলিয়া দিবসের সম্মাননাস্বরূপ অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া পদবীতে ভূষিত হন। ২০১০ সালে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট হল অব ফেমে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ধারাভাষ্য কর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন। প্রায় ৪০ বছর যাবৎ গ্রেগ চ্যাপেল, ইয়ান চ্যাপেল, টনি গ্রেগ, রিচি বেনো, মার্ক টেলর প্রমূখদের সাথে চ্যানেল নাইন ধারাভাষ্য দলের সদস্যরূপে কাজ করেন। এরপর কবুতর উড়ানো প্রতিযোগিতার দিকে মনোনিবেশ ঘটান। ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ফলে তাঁকে রেডিয়েশন থেরাপি গ্রহণ করতে হয়।