১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭০ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৯০-এর দশকে পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
ডানহাতে আগ্রাসী ব্যাটিং করতেন। ২২ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণের পর থেকেই তাঁকে কিংবদন্তীতুল্য ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াঁদাদের সাথে তুলনায় আনা হতো। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কভার কিংবা পয়েন্ট অঞ্চলে বল ঠেলে রান সংগ্রহে তৎপর হতেন। তাঁর ব্যাটিং অনেকাংশেই ক্ষুদ্রতর সংস্করণের খেলার উপযোগী ছিল। দর্শনীয়তার সাথে নির্ভিকচিত্তে দ্রুতগতিসম্পন্ন বলগুলোকে হুক কিংবা পুলের মার মারতেন। তবে, পাতানো খেলা কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত থাকার কারণে প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়ী জীবনকে অন্ধকারে নিয়ে যান। এরফলে, রশীদ লতিফ ও সেলিম মালিকের খেলোয়াড়ী জীবনেরও সমাপ্তি ঘটে।
১৯৮৫-৮৬ মৌসুম থেকে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে করাচী ও ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৫ বছর বয়সে কিশোর অবস্থাতেই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথম খেলতে নামেন। করাচীর সদস্যরূপে জোন-এ দলের বিপক্ষে ঐ খেলায় তিনি ৪১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এর পরের খেলায় বেশ ভালো খেলেন। হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন।
তিন বছর বেশ ভালোমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। এ পর্যায়ে অভিষেক খেলাটি বেশ স্মরণীয় ছিল। গুজরানওয়ালায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ১৮৯ রানের দূর্দান্ত ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে চার শতক সহযোগে ৫০.৮৮ গড়ে ৮৬৫ রান তুলেছিলেন। এরফলে, জাতীয় দলে খেলার জন্যে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে সুন্দর খেলার পর পাতানো খেলার সাথে জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্ত হন। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে শারজায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বেশ ভালো খেলেন ও তারপর একই মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ব্যক্তিগত একমাত্র শতরানের সন্ধান পেয়েছিলেন। পাকিস্তানের একদিনের দলে তিন বছর নিয়মিতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাটিং চলমান ছিল। ইনজামাম-উল-হকের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণবিষয়ক বিদ্যালয় থেকে খাদ্য পেতেন।
১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ১৯ টেস্ট ও ৫০টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ২৩ মার্চ, ১৯৯৩ তারিখে কিংস্টনের সাবিনা পার্কে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআই অভিষেক ঘটে। খেলায় তিনি ১৭ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। সিরিজের চতুর্থ ওডিআইয়ে নিজেকে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করেন। কার্টলি অ্যামব্রোস ও কোর্টনি ওয়ালশের ন্যায় বোলারদের বোলিং আক্রমণ প্রতিহত করে ৮৬ বলে ৬০ রান তুলেছিলেন।
এরপর, টেস্ট সিরিজে অংশ নেন। ১৬ এপ্রিল, ১৯৯৩ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক টেস্টে শূন্য রান ও ৩৭ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, ডেসমন্ড হেইন্সের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে স্বাগতিকরা ২০৪ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৯৩ সালের শারজায় পেপসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় অন্যতম সেরা ওডিআই ইনিংস খেলেছিলেন। দলীয় সংগ্রহ ৮৭/৩ থাকা অবস্থায় মাঠে নামেন। কোর্টনি ওয়ালশ ও কার্টলি অ্যামব্রোসের বোলিং আক্রমণ মোকাবেলা করে মাত্র ৭৯ বলে ১২৭ রান তুলেছিলেন। এ ইনিংসে ১২টি চার ও ৫টি বিশাল ছক্কার মার ছিল। ৬৭ বলে তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে তৎকালীন দ্বিতীয় দ্রুততম শতক হাঁকিয়েছিলেন।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১৯৯৪ সালে ওয়েলিংটনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ৮৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ খেলায় পাকিস্তান দল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিল।
একই সফরের ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৯২ রান অতিক্রম করেন। এছাড়াও, টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। খেলায় তিনি ১০৩ ও ৬৭ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, শেন থমসন ও ব্রায়ান ইয়ং অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলে সফরকারীরা ৫ উইকেটে পরাজয়বরণ করলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
এরপর, অস্ট্রাল-এশিয়া কাপে চমৎকার খেলার ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ও চূড়ান্ত খেলায় যথাক্রমে ৭৫ ও ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন। ঐ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় ভারতকে পরাজিত করে পাকিস্তান দল শিরোপা জয় পায়।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। তবে, মুশতাক আহমেদের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলে সফরকারীরা ১৬১ রানে জয় তুলে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। এছাড়াও, ১৬ এপ্রিল, ১৯৯৬ তারিখে শারজায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। বৈশ্বিক অঙ্গনে পাতানো খেলায় জড়িয়ে পড়ার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পাতানো খেলায় অংশগ্রহণের অভিযোগ আনার পর থেকে তাঁর খেলার মানের যথেষ্ট অবনতি ঘটতে থাকে। রশীদ লতিফ জানান যে, ক্রাইস্টচার্চের খেলায় ইনজামাম-উল-হক, রাজা ও বাসিত আলী তাঁকে ১০,০০,০০০ পাকিস্তানী রূপী প্রদানের প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। পাকিস্তান দলের ব্যবস্থাপক ইন্তিখাব আলম গোপন শুনানীতে পাতানো খেলায় তাঁর স্বীকারোক্তি প্রদানের কথা জানান। অবসর গ্রহণের ফলে তাঁর বিরুদ্ধে জোড়ালো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
