২৪ মে, ১৯৩৩ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের দুধানি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম, ডানহাতে অফ-ব্রেক ও লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
অসাধারণ অল-রাউন্ডার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করেছিলেন। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী হলেও বিশ্বস্ত ব্যাটসম্যান ও নতুন বলে আক্রমণ শানাতেন। অফ-ব্রেক ও লেগ-ব্রেক উভয় ক্ষেত্রেই সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। সামরিক জীবন অতিবাহিত করার সুবাদে চমৎকার ফিল্ডার হিসেবে ভূমিকা রাখেন ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের অধিকারী ছিলেন।
সোলাপুরের দুধানি এলাকার জমিদারের সন্তান ছিলেন। নাসিকের রাংতা হাই স্কুলের সহপাঠী বাপু নদকর্ণী’র সাথে অধ্যয়ন করেন। কোচবিহার ট্রফিতে মহারাষ্ট্রের বিদ্যালয় দলের প্রতিনিধিত্ব করে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলেন। সম্মানসহ বিএ ডিগ্রী লাভ করেন। রোহিতন বাড়িয়া ট্রফিতে পুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খেলার পর সম্মিলিত ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দলের সদস্য হন।
খুব কমসংখ্যক ভারতীয় ক্রিকেটারের মাঝেই ঘরোয়া ক্রিকেটে বাল দানি’র ন্যায় শ্রেয়তর অল-রাউন্ড রেকর্ড রয়েছে। ১৯৫১-৫২ মৌসুম থেকে ১৯৭২-৭৩ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মহারাষ্ট্র ও সার্ভিসেস দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
সফররত এমসিসি’র বিপক্ষে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় দলের সদস্যরূপে তাঁর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। দ্বিতীয় পরিবর্তিত বোলার হিসেবে ৫/৭৯ লাভ করেন। জ্যাক রবার্টসন, নাইজেল হাওয়ার্ড, ডাস্টি রোডস প্রমূখ তাঁর শিকারে পরিণত হন। এরপর, ৬৬ রান তুলে স্বাগতিক দলকে ৩৫ রানে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেন।
পরের মৌসুমে রঞ্জী ট্রফিতে তাঁর অভিষেক ঘটে। বরোদার বিপক্ষে ৩৩ ও ৫৫ রানের ইনিংস খেলাসহ ৩/২৪ পান। এর পরের খেলায় গুজরাতের বিপক্ষে ১২১ রান তুলেন। মহারাষ্ট্রের সদস্যরূপে সফররত এমসিসি’র বিপক্ষেও সফলতার পুণরাবৃত্তি ঘটান। ৭২ রানে অপরাজিত ছিলেন। পরবর্তী মৌসুমে পাকিস্তান দল ভারত সফরে আসলে তাঁকে ভারত দলে ঠাঁই দেয়া হয়।
১৯৫২ সালে ভারতের পক্ষে একটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে নিজ দেশে আব্দুল কারদারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল তাঁদের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে উদ্বোধনী টেস্ট খেলতে ভারত সফরে আসে। ১৩ নভেম্বর, ১৯৫২ তারিখে বোম্বের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। মাধব আপ্তে ও বিজয় রাজিন্দারনাথের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। বিস্ময়করভাবে তাঁদের প্রত্যেকেরই খেলোয়াড়ী জীবন সংক্ষিপ্ত ছিল। ২২ বছরের বড় লালা অমরনাথের সাথে বোলিং উদ্বোধনে নামেন। ৪-২-১০-০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। লালা অমরনাথের বলে আব্দুল হাফিজ কারদারের ক্যাচ অপূর্ব ভঙ্গীমায় তালুবন্দী করেন। ২০১ রানে এগিয়ে থেকে ইনিংস ঘোষণা করলে তিনি ব্যাট হাতে নেয়ার সুযোগ পাননি। এরপর নজর মোহাম্মদকে শূন্য রানের বিদেয় করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর বোলিং বিশ্লেষণ ছিল ৬-৩-৯-১। সুভাষ গুপ্তে, বিনু মানকড় ও গুলাম আহমেদ – স্পিনারত্রয়ের কল্যাণে ঐ টেস্টে ভারত দল ১০ উইকেটে জয় পায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক খেলায় অংশগ্রহণ করলেও একটিমাত্র টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। টেস্টে তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দেননি। বাদ দেয়ার কিংবা দলে ফিরিয়ে না আনার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছিল না। ভারতীয় ক্রিকেটের তৎকালীন দল নির্বাচন নীতির আলোকে তাঁকে নিরাশ হতে হয়েছিল। ১৯ বছর বয়সেই তাঁর টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবন শেষ হয়ে যায়।
তবে, ঘরোয়া আসরে ব্যাট ও বল – উভয় ক্ষেত্রেই দারুণ ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখলে ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে ভারতের প্রথম পাকিস্তান সফরে তাঁকে দলে ঠাঁই দেয়া হয়। নিজেকে মেলে ধরার প্রয়াস চালান। সিন্ধু দলের বিপক্ষে ৪২ রানের অপরাজিত ইনিংসসহ ৪/১৬ লাভ করেন। জুটি ভাঙ্গার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করলেও এ সফরে তেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেননি। এ সফরে ২৯ গড়ে ১১৬ রান ও ১৫.২০ গড়ে ১০ উইকেট পান। তাসত্ত্বেও কোন টেস্ট খেলানো হয়নি।
ঐ বছরেই ভারতীয় বিমানবাহিনীতে যোগ দেন ও সার্ভিসেস দলে চলে যান। হিমু অধিকারী’র দলে থেকে তাৎক্ষণিক সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। রোশনারা ক্লাব মাঠে দিল্লির বিপক্ষে ১৬৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। সার্ভিসেস দলের পক্ষে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৫০-এর দশকে সার্ভিসেস দলের অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হন ও দলের উত্থানে অনেকগুলো বছর অন্যতম ভূমিকা রাখেন। বোলিং উদ্বোধনসহ পুরনো বলে অফ-স্পিন ও লেগ-স্পিন – উভয় ধরনের বোলিং করতেন। মাঝারিসারিতে ব্যাট হাতে নিয়ে ও অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালনে দূর্দান্ত ভূমিকায় অগ্রসর হতেন।
১৯৫৭-৫৮ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফির সেমি-ফাইনালে বাংলা দলের বিপক্ষে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে তৎপরতা দেখান। প্রতিপক্ষের সংগ্রহ ৩৬০ হবার পর দ্বিতীয় দিন বিকেলে দলের সংগ্রহ ৬৯/২ হলে আত্মা সিংয়ের সাথে জুটি গড়েন। তৃতীয় দিনের পুরোটা সময় তাঁরা ব্যাটিং করে দলের সংগ্রহকে ৩৭০/২ রানে নিয়ে যান। তাঁদের সংগৃহীত ৩০১ রান তৃতীয় উইকেটে সার্ভিসেস দলের রেকর্ড হিসেবে অদ্যাবধি টিকে থাকে। আত্মা সিং অপরাজিত ১৮৪ রান ও তিনি অপরাজিত ১২২ রান তুলেন।
১৯৬০-৬১ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফির সেমি-ফাইনালে রাজস্থানের বিপক্ষে প্রায় একাকী লড়াই করেন। ৫/৩৫ লাভের পর ১০৪ রান তুলেন। এরফলে, ইন্দারজিৎ বাহরোকের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে সার্ভিসেসের পক্ষে একই খেলায় শতক ও পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন।
পরের মৌসুমে সার্ভিসেস দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমের সেমি-ফাইনালে বোম্বের বিপক্ষে ১৪০ রান তুলে দলের ইনিংস পরাজয় রোধ করেন। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমেও ব্যাট হাতে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন। একাধারে ১৪৯, ১৫৪, ৬, ১৭০, ৪২, ৮৭, ২, ১২৩ ও ২৮* রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। তন্মধ্যে, ১৭০ রানের ইনিংসটি তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বোচ্চ ছিল। ঐ মৌসুমে ৮৫ গড়ে ৭৬৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, রঞ্জী ট্রফিতে ৭২.৫০ গড়ে ৪৩৫ রান তুলেন। তিন মৌসুম বাদে জম্মু ও কাশ্মীরের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৭/৫০ লাভ করেন। এক দশক দলকে নেতৃত্ব দেয়ার পরও ১৯৭২-৭৩ মৌসুম পর্যন্ত খেলা চলমান রাখেন। নিজস্ব শেষ খেলায় রেলওয়েজের বিপক্ষে ১৩ ও ৩৬ এবং ৪/৩৫ লাভ করেন।
দুই দশকের অধিক সময় নিয়ে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে সার্ভিসেসের পক্ষে তিন সহস্রাধিক রান ও শত উইকেট লাভের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভ করেছেন। ১৪ শতক সহযোগে ৪৫৭৬ রান তুলে সার্ভিসেসের সর্বাধিক রান সংগ্রাহক হন। পরবর্তীতে যশপাল শর্মা ১৫ শতক সহযোগে ৫৪৭৪ রান তুলে তাঁর রেকর্ড ভঙ্গ করেন। এছাড়াও, ১৫৬ উইকেট নিয়ে উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায় নিজেকে পঞ্চম স্থানে নিয়ে যান। রঞ্জী ট্রফিতে ৪৮ গড়ে ৫১০৫ রান সংগ্রহসহ ১৯ গড়ে ১৬৫ উইকেট দখল করেন। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে সব মিলিয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৭ শতক সহযোগে ৪৪.৫৪ গড়ে ৬৪৫৯ রান ও ২১.৯৭ গড়ে ১৯৮ উইকেট পেয়েছেন।
১৯৮৭ সালে অবসর গ্রহণকালীন এয়ার কমোডর পদবী ধারন করেছিলেন। জাতীয় দল নির্বাচকণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৬৮ সালে ভারতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন ও ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। মনসুর আলি খান পতৌদি’র পরিবর্তে অজিত ওয়াড়েকরের অধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণের সভায় ছিলেন। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের দল নির্বাচক, কোচ ও ব্যবস্থাপক ছিলেন। পুনেভিত্তিক দাতব্য সংগঠন স্নেহ সভার সাথে যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। অতঃপর, ১৯ ডিসেম্বর, ১৯৯৯ তারিখে মহারাষ্ট্রের নাসিকে ৬৬ বছর ২০৯ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
