১৭ ডিসেম্বর, ১৮৮১ তারিখে কেপ প্রভিন্সের পোর্ট এলিজাবেথ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং উদ্বোধনের পাশাপাশি লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন। ১৯০২-০৩ মৌসুম থেকে ১৯২৪ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। নিজের সময়কালে ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। ইম্পেরিয়াল লাইট হর্সের সৈনিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। অ্যাংলো-বোয়ের যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের পর ১৯০২-০৩ মৌসুমের কারি কাপ প্রতিযোগিতায় ট্রান্সভালের পক্ষে দুইটিমাত্র প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। উভয় খেলায় নয় নম্বর অবস্থানে ব্যাটিং করেন ও একবার বোলিং করার সুযোগ পেয়ে উইকেট শূন্য ছিলেন। এ পর্যায়ে গড়পড়তা খেলোয়াড়ের অধিক ছিলেন না ও পরের মৌসুমে কোন খেলায় অংশ নেননি।
১৯০৪ সালে রেজি সোয়ার্জের কাছ থেকে গুগলি বোলিং শিখেন। ১৯০৫-০৬ মৌসুমে ট্রান্সভালের সদস্যরূপে নিজস্ব চতুর্থ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। এ পর্যায়ে সফররত এমসিসি দলের বিপক্ষে অর্ধ-শতরানের ইনিংসসহ ছয় উইকেট নিয়ে দলের বিস্ময়কর বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। এরফলে, দক্ষিণ আফ্রিকান দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন ও টেস্ট দলে তাঁকে যুক্ত করা হয়।
১৯০৬ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ২৫ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯০৫-০৬ মৌসুমে নিজ দেশে পেলহাম ওয়ার্নারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজেই তাঁকে খেলানো হয়। দলের ৪-১ ব্যবধানের সিরিজ বিজয়ে অপূর্ব অবদানের সাথে নিজেকে জড়ান। এক পর্যায়ে অন্য যে-কোন বোলারের চেয়ে তাঁর বোলিং মোকাবেলা করা বেশ দুষ্কর ছিল। ২ জানুয়ারি, ১৯০৬ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। বার্ট ভগলার, গর্ডন হোয়াইট, পার্সি শারওয়েল, রেজি সোয়ার্জ ও টিপ স্নুকের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। রেজি সোয়ার্জ, বার্ট ভগলার ও গর্ডন হোয়াইটের সাথে দলের চতুর্থ গুগলি বোলার হিসেবে খেলেন। খেলায় তিনি ৬১ রান খরচায় ৬ উইকেট দখল করে দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে প্রথম টেস্ট বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। ২/৩৫ ও ৪/২৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৪ ও ৬ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ১ উইকেটের নাটকীয় জয় পেয়ে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯০৭ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর পার্সি শারওয়েলের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। গুগলি বোলিংয়ের পাশাপাশি রিস্ট-স্পিনেও বোলিংয়ে কার্যকরীভাব আনেন। ১ জুলাই, ১৯০৭ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন। খেলায় তিনি ১/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৪৪ ও ১২* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
লিডস টেস্টে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। স্বাগতিকদের সংগ্রহ মধ্যাহ্নভোজনকালে এক উইকেট হারালেও এরপর এক পর্যায়ে সতেরো ওভার থেকে ১৭ রান খরচায় ছয় উইকেট তুলে নেন। এ সফরে স্পিনার চতুষ্টয় সম্মিলিতভাবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২২৮ উইকেট দখল করেন। কয়েকজন ইংরেজ মন্তব্য করেন যে, তাঁর গুগলি চিহ্নিত করা অনেকাংশে দুঃসাধ্য ছিল। এ সফরে তিনি একাকী ১২৮৮ রান ও ৭৩ উইকেট তুলে নেন।
১৯০৯-১০ মৌসুমে নিজ দেশে হেনরি লেভসন গাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১ জানুয়ারি, ১৯১০ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। বেশ কয়েকবার ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৪৫ রান অতিক্রম করেন। এরপর, দ্বিতীয় ইনিংসে এ সফলতাকে আরও ছাঁপিয়ে যান। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৭৮ রান অতিক্রম করেন। এরপর, নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। খেলায় তিনি ৭৮ ও ১২৩ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ৫/১২০ ও ৩/৪০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ১৯ রানে পরাভূত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৯১০-১১ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে পার্সি শারওয়েলের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেছিলেন। ৯ ডিসেম্বর, ১৯১০ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬২ ও ৪৩ রান সংগ্রহ করেন উভয় ইনিংসে বিল হুইটি’র শিকারে পরিণত হন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৭১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ইনিংস ও ১১৪ রানে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ৩ মার্চ, ১৯১১ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৯ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৫২ ও ৯২ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৩৮ ও ০/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ৭ উইকেটে পরাজিত হলে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯১২ সালে ফ্রাঙ্ক মিচেলের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৭ মে, ১৯১২ তারিখে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১২২ ও ০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৫৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঐ খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ৮৮ রানে পরাজয়বরণ করে।
১৯২৪ সালে হার্বি টেলরের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৮ জুন, ১৯২৪ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ২৫ ও ১২ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৮৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৮ রানে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ক্রিস নামীয় সন্তানের জনক। ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৩০ তারিখে ইংল্যান্ডের ওয়ালহাম গ্রীন এলাকায় মাত্র ৪৮ বছর ২৬৭ দিন বয়সে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ তারিখে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, কুমার সাঙ্গাকারা, মন্টি নোবেল, লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইন, স্ট্যান ম্যাককাবে, বিনু মানকড়, টেড ডেক্সটার ও ডেসমন্ড হেইন্সের সাথে একযোগে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।
