২৮ মে, ১৯৭৭ তারিখে কেপ প্রভিন্সের পোর্ট এলিজাবেথ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যাটিং ও বোলিংয়ের পাশাপাশি খাঁটি মানসম্পন্ন ফিল্ডার হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুম থেকে ২০১৫-১৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ইস্টার্ন প্রভিন্স, ওয়ারিয়র্স, ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ল্যাঙ্কাশায়ার ও নটিংহ্যামশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আফ্রিকা একাদশ, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স বোল্যান্ডের পক্ষে খেলেছেন।

বিসিসিআই থেকে ভিভিএস লক্ষ্মণকে ফিরিয়ে আনা হলে বিদেশী খেলোয়াড়ের শূন্যতা পূরণে তাঁকে নটিংহ্যামশায়ারে যুক্ত করা হয়। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ারের ৬০০তম খেলোয়াড় ছিলেন। ৩১ বছর বয়সে এসে ২০০১ সালে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। এরফলে, জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টিগোচরীভূত হন। আগস্টে নটসের সদস্যরূপে ডারহামের বিপক্ষে ন্যাটওয়েস্ট প্রো৪০ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো খেলতে নামেন। দলটির পক্ষে চারটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৩০.৭৫ গড়ে ১২৩ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, চারটি একদিনের খেলায় অংশ নিয়ে ১৫.৭৫ গড়ে ৬৩ রান তুলেছিলেন। ২০০৮ সালে নটিংহ্যামশায়ার ও ২০১০ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের ক্যাপ লাভ করেন।

২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ৬৬ টেস্ট, ৫২টি ওডিআই ও একটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০২ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৪৯ ও ২৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩৬০ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

২০০৫-০৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৫ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২৮ ও ৮ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে শেন ওয়ার্নের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। ব্রাড হজের দূর্দান্ত প্রয়াস সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অগ্রসর হতে থাকে।

একই মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৭ এপ্রিল, ২০০৬ তারিখে কেপটাউনে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৬৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১০৮* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন। ২০০৮ সালে এনপাওয়ার টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রধান তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। হেডিংলিতে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ১৪৯ রানের স্মরণীয় ইনিংস খেলেছিলেন।

২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে ডোয়াইন ব্র্যাভো’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১০ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১২৩* রান সংগ্রহ করেন। তাঁর অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১০০ রানে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৮-০৯ মৌসুমে নিজ দেশে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১৯ মার্চ, ২০০৯ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ৭৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৫০ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, পল হ্যারিসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২০ রানে জয়লাভ করলে সফরকারীরা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৬২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দলের নিয়মিত খেলোয়াড়ের মর্যাদা পেয়েছিলেন। ২০১১-১২ মৌসুমে নিজ দেশে তিলকরত্নে দিলশানের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ১১ ও ৭ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রঙ্গনা হেরাথের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ২০৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

২১ অক্টোবর, ২০০৫ তারিখে জোহানেসবার্গে সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়ে ৫ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। সব মিলিয়ে প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলো থেকে ৪৪.৪৩ গড়ে ১৮৪৮৪ রান তুলেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৬১ রানের ইনিংস খেলেন।

২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। এক পর্যায়ে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে মনোনীত হন। তবে, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে পারিবারিক কারণে এ দায়িত্ব ত্যাগ করেন।

Similar Posts

  • | |

    জর্জ হ্যাডলি

    ৩০ মে, ১৯০৯ তারিখে পানামার কোলনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। পানামার ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ে তাঁর জন্ম। ১৯১৯ সালে মাতা তাঁর জন্মস্থান জ্যামাইকায় তাঁকে প্রেরণ করেন। তাঁকে ইংরেজী ভাষী বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর হয়। সেখানেই…

  • |

    হ্যারল্ড লারউড

    ১৪ নভেম্বর, ১৯০৪ তারিখে নটিংহ্যামশায়ারের নানকারগেট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালে সন্দেহাতীতভাবে সেরা ফাস্ট বোলার ছিলেন। প্রায়শঃই ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্রুততম বোলার হিসেবে বিবেচিত হয়ে…

  • | | |

    রবি শাস্ত্রী

    ২৭ মে, ১৯৬২ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ভারত দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। যেখানে ক্রিকেট ও ক্রিকেটবিষয়ক আলোচনা রয়েছে সেখানেই তাঁর নিত্য অবস্থান। টেলিভিশনের পর্দায় তাঁর চেহারা ও কণ্ঠস্বরকে ঘিরে গণমাধ্যমে…

  • |

    সিস পার্কিন

    ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮৬ তারিখে কো ডারহামের ঈগলসক্লিফ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯২০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পিতা রেলওয়েতে চাকুরী করতেন। নর্টন থেকে টিসাইডে তাঁর পরিবারের সাথে চলে যান। এ পর্যায়ে পার্কিন সিনিয়র স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করতেন। বারো…

  • |

    জন স্নো

    ১৩ অক্টোবর, ১৯৪১ তারিখে ওরচেস্টারশায়ারের পিপলস্টন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে আট বছর ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা বোলার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। অস্ট্রেলীয় হলে হয়তোবা সুস্থ থাকা অবস্থায় প্রত্যেক টেস্টেই নিশ্চিতভাবে খেলতে পারতেন। একরোখা মনোভাব ও জটিল প্রকৃতির কারণে ইংরেজ দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর উপর নাখোশ ছিলেন। ফলশ্রুতিতে মাত্র ৪৯ টেস্টে অংশ নেয়ার…

  • |

    আলভিরো পিটারসন

    ২৫ নভেম্বর, ১৯৮০ তারিখে কেপ প্রভিন্সের পোর্ট এলিজাবেথে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ট্যাক্সি চালকের সন্তান ছিলেন। শুরুতে নর্দার্ন আফ্রিকান ক্রিকেট দলে খেলেন। এরপর, দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের পক্ষে খেলার সুযোগ পান।…