১৩ জুলাই, ১৯৪৫ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের চ্যাটসউড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, সাংবাদিক, ধারাভাষ্যকার, প্রশাসক ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী। অধিকাংশ মাঠেই পর্যাপ্ত বাউন্স আনয়ণে সক্ষমতা দেখিয়েছেন। সন্দেহাতীতভাবে ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে নিজেকে অধিক কার্যকর করে তুলেন। ‘রোডি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া দলে ঠাঁই পেতে বেশ হিমশিম খান। এরফলে, সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। ১৯৬৭-৬৮ মৌসুম থেকে ১৯৮০-৮১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শেফিল্ড শীল্ডে চমৎকার মৌসুম অতিবাহিত করেন। অভিষেক মৌসুমে ৩২ উইকেট পেয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে, জাতীয় দলে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৬৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৩৮ টেস্ট ও নয়টিমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে বিল লরি’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। এ সফরেই তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের মোড় ঘুরে যায়। ২২ আগস্ট, ১৯৬৮ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। পাঁচ-উইকেট নিয়ে অভিষেক পর্বকে স্মরণীয় করে রাখেন। খেলায় তিনি ৪৩* ও ০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৮৭ ও ২/৭৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ২২৬ রানে জয় পেয়ে ১-১ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করতে সমর্থ হয়।
১৯৬৯-৭০ মৌসুমে দলের সাথে ভারত গমন করেন। এ সফরে ১৯.১০ গড়ে ২৮ উইকেট পান। সিরিজে সফরকারীরা জয়লাভ করেছিল। এরপর, একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে বিল লরি’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অস্ট্রেলিয়া দল ৪-০ ব্যবধানে ধবল ধোলাইয়ের শিকার হয়। তবে, ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। নিউল্যান্ডস টেস্টে পাঁচ-উইকেট পান। বিস্ময়করভাবে ঐ সিরিজের আর কোন টেস্টে তাঁকে খেলানো হয়নি।
২২ জানুয়ারি, ১৯৭০ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৫/১২৬ ও ১/৭৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৯ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ১৭০ রানে পরাজয়বরণ করলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে যায়।
এছাড়াও, আরও কয়েকটি খেলা থেকে তাঁকে বাদ দেয়া হয়। ১৯৭০-৭১ মৌসুমে এমসিজিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁকে টেস্টে রাখা হয়। তবে, বৃষ্টির কারণে খেলাটি পরিত্যক্তি হয়। তবে, প্রথম ওডিআইয়ে অংশ নেন। খেলায় তিনি তিন উইকেট পান।
১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে ইয়ান চ্যাপেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১ মার্চ, ১৯৭৪ তারিখে ওয়েলিংটনে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন। খেলায় তিনি ১/১১৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
সন্দেহাতীতভাবে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে নিজের সেরা খেলা উপহার দিয়েছিলেন। এ সিরিজটি শুধুমাত্র জেফ থমসন ও ডেনিস লিলি’র একাধিপত্যের কারণে পরিচিতি পায়নি। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং স্তম্ভ গুটিয়ে দিতে তিনিও বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯.৯৪ গড়ে ১৭ উইকেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯৮০ সালে গ্রেগ চ্যাপেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ২৮ আগস্ট, ১৯৬৮ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/২৫ ও ১/৬১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, কোন ইনিংসেই তাঁকে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি। কিম হিউজের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলো থেকে ২৯.৮৪ গড়ে ১৩২ উইকেট পেয়েছেন। তন্মধ্যে, ছয়বার পাঁচ-উইকেট ও একবার দশ উইকট লাভ করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অফ-স্পিনার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
১৯৭৭ সালে অস্ট্রেলীয় ধনকুবের ক্যারি প্যাকারের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিদ্রোহী দলের সদস্যরূপে খেলেন। ২৫-এর অধিক গ্রন্থের লেখক তিনি। ক্ল্যারি গ্রিমেট, ডগ ওয়াল্টার্স, জেফ থমসন ও ইয়ান চ্যাপেলের আত্মজীবনী রচনা করেছেন।
১৯৭০ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। ২৯ অক্টোবর, ২০২১ তারিখে ৭৬ বছর ১০৮ দিন বয়সে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
