২২ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পেশাওয়ারে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
মূখ্যতঃ দুইটি কারণে নিজেকে অফ-স্পিনারের মর্যাদার আসনে নিয়ে যেতে পারেননি। প্রথমতঃ পেশাওয়ার থেকে এসেছেন ও এলাকাটি ফাস্ট বোলারদের আস্তানা হিসেবে পরিচিত। দ্বিতীয়তঃ অন্যদের তুলনায় যথেষ্ট লম্বাটে ছিলেন না। তবে, সাকলাইন মুশতাকের ন্যায় অফ-স্পিনারের বিপরীত চিত্র তুলে ধরতেন। শুধুমাত্র প্রচলিত ভঙ্গীমাকে পুণরায় চাঙ্গা করেননি তা নয়; বরঞ্চ এতে তিনি নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুম থেকে ২০০৯-১০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে অ্যালাইড ব্যাংক, ইসলামাবাদ, লাহোর বাদশাহ, পাকিস্তান রেলওয়ে ও পেশাওয়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আইসিএল একাদশ, পেশাওয়ার প্যান্থার্স ও কোয়েটা বিয়ার্সের পক্ষে খেলেছেন।
১৯৯৩ থেকে ২০০৬ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে নয়টিমাত্র টেস্ট ও ৫৮টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে শারজায় অনুষ্ঠিত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূত্রপাত ঘটান।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে কোর্টনি ওয়ালশের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের বিপক্ষে খেলার জন্যে তাঁকে জাতীয় দলের সদস্য করা হয়। ১৭ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে পেশাওয়ারে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। বল হাতে নিয়ে ০/১৪ ও ০/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মুশতাক আহমেদের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৯ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
এরপর থেকে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটাতে থাকেন, সচরাচর রানে স্থবিরতা আনয়ণে ভূমিকা রাখতেন। পর্যাপ্ত বাউন্স সহযোগে উপযোগী পিচে বলকে বেশ বাঁক খাওয়ানোয় দক্ষ ছিলেন। তবে, বলকে নিয়ন্ত্রণের দিকেই অধিক অগ্রাধিকার দিতেন।
অভিষেকের এক বছর পর ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে বাংলাদেশ গমন করেন। ১২ মার্চ, ১৯৯৯ তারিখে শ্রীলঙ্কা দলের মুখোমুখি হন। ৫/৩৮ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের চূড়ান্ত খেলায় শ্রীলঙ্কাকে পরাভূত করতে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ১/৪১ লাভ করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ইজাজ আহমেদের অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে পাকিস্তান দল ইনিংস ও ১৭৫ রানে জয়লাভ করে শিরোপা পায়।
এরপর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দলে আসা-যাবার পালায় ছিলেন। ২০০০-০১ মৌসুমে মঈন খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৮ মার্চ, ২০০১ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। মোহাম্মদ সামি’র অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ২৯৯ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে অংশ নেয়ার পর আরও চার বছর উপেক্ষিত ছিলেন তিনি। তবে, পাকিস্তানের ঘরোয়া চ্যাম্পিয়নশীপে দূর্দান্ত খেললে পুণরায় তাঁকে জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনা হয়। ২০০৫ সালে পাকিস্তান দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। তবে, একটিমাত্র টেস্ট খেলার সুযোগ পান। ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে দলীয় সঙ্গীদের ন্যায় তিনিও যথেষ্ট ভালো খেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে রাহুল দ্রাবিড়ের উইকটসহ দুই উইকেট লাভ করেন।
সাকলাইন মুশতাকের উত্থানে তাঁর খেলার সুযোগ সীমিত হয়ে আসে। দল থেকে বাদ পড়ার চার বছর পর ২০০৪-০৫ মৌসুমে ইনজামাম-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ২৪ মার্চ, ২০০৫ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ১* রানে অপরাজিত ছিলেন। এছাড়াও, ০/৮৭ ও ২/২১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ইউনুস খানের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে শেষ অধিবেশনে জয় পেয়ে সিরিজ ড্র করতে সমর্থ হয় তাঁর দল। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
এরপর, অনুমোদনবিহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে অংশগ্রহণ করলে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন ও কার্যতঃ তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসার সম্ভাবনা স্তিমিত হয়ে পড়ে।
২০০৭ সালে এবিএন-এএমআরও কাপ গোল্ড লীগে পেশাওয়ার প্যান্থার্স দলের অধিনায়কত্ব করে দলের শিরোপা লাভে অধিনায়কের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
