Skip to content

অর্জুনা রানাতুঙ্গা

1 min read

১ ডিসেম্বর, ১৯৬৩ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, প্রশাসক ও রাজনীতিবিদ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-পেস বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

আনন্দ কলেজে অধ্যয়ন করেছিলেন। ১৯৮১-৮২ মৌসুম থেকে ২০০০-০১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে শ্রীলঙ্কার উত্থানে উজ্জ্বীবনী শক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা ও অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নাম উচ্চারিত হলে দেখা যায় যে, তারা একে-অপরের সমার্থক ছিল। এ সাফল্যের কৃতিত্ব পুরো দলকে দেয়া হলেও একটি বিজয় কেবলমাত্র একজন হিসেবে তাঁর অবদানের সাথে জড়িত ছিল যা পরবর্তীকালে দলকে তাঁদের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিরাটভাবে সহায়তা করেছে। ক্রিকেটের সেরা অর্জনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখার পূর্বে খুব কমই তাঁর উদ্ভাবনীমূলক অধিনায়কত্বের উপর ক্রিকেট বিশ্লেষকদের আস্থা ছিল।

প্রায় দুই দশককাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে যুক্ত ছিলেন। শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়লাভের মাধ্যমে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ের বীরত্বের জন্যে নয়; বরঞ্চ আট বছর যাবৎ দলের অধিনায়কত্ব পালন করেছিলেন। থার্ড-ম্যান এলাকায় বল ফেলে জয়সূচক রান পেয়েছিলেন। এ দায়িত্ব পালনকালে যথেষ্ট গুরুত্বতা আরোপ ও দায়ভার কাঁধে নেয়ার বিষয়টি জড়িত ছিল। তজ্জন্যে তিনি ব্যক্তিগত অর্জনের দিকে মনোনিবেশ ঘটাননি।

নিজেকে সর্বদাই দলের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। নিঃস্বার্থভাবে ও প্রণোদনাদানকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। স্বীয় স্বার্থ রক্ষা না করা ও ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার দিকে নজর না দিয়ে পেশাদারী পর্যায়ে নিজেকে গড়ে তুলেননি এবং দলের বাইরে চলে যাননি। বিভিন্ন কারণে সমালোচিত হয়েছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। এর বাইরে ক্রিকেট বিশ্বের অন্য কোন ক্রিকেট বিশ্লেষক তাঁর দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের বিষয়ে দায়বদ্ধতার প্রশ্নে আঙ্গুল তুলতে পারবেন না। তিনি দলকে বিনি সূঁতোর মালায় বেঁধে রেখেছিলেন।

অনেক শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারই রেকর্ড বইয়ে তাঁদের স্থান লাভে তাঁর ভূমিকার বিষয়ে অস্বীকার করতে পারবেন না; বিশেষতঃ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অঙ্গনে প্রবেশের জন্যে। স্বীয় যোগ্যতাবলে শুধুমাত্র রাজধানীকে প্রাধান্য না দিয়ে দেশের সর্বত্র প্রতিভাবান ক্রিকেটারদেরকে খেলার সুযোগ এনে দিয়েছিলেন। এছাড়াও, তাঁদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যথাযথভাবে গড়ে তুলতে অগ্রসর হয়েছেন। দেশের কোন এলাকা থেকে তিনি এসেছেন তা বিবেচনায় আনেননি। ক্রিকেটীয় রাজনীতির বাইরে এনে তাঁদের মূল্যায়ণ ও অধিনায়ক হিসেবে স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেছেন। এভাবেই তাঁর অধিনায়ক হিসেবে উত্থানের আরেক চিত্র ফুঁটে উঠেছে।

দলের সদস্যদের সাথে পারস্পরিক সদ্ভাব বজায় রাখতেন ও খোলামেলা আলোচনায় অংশ নিতেন। অধিনায়ক হিসেবে নিজের সেরা দিনগুলোয় সর্বাপেক্ষা মূল্যবান কৌশল গ্রহণ করতেন। অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকের কাছেই সমালোচিত হলেও দলের ভিত্তি আনয়ণে নিজের মতামত ও কৌশলগত বাক্য বিনিময়ের বিষয়ে প্রতিপক্ষীয় দলগুলোর কাছে বিন্দুমাত্র উপেক্ষার বিষয় ছিল না।

বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে রানাতুঙ্গা’র অধিনায়কত্ব শ্রেয়তর দলের তুলনায় উপস্থাপনার দিকেই সবিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। এ পর্যায়ে তিনি যা চেয়েছেন, তাই যেন পেয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলকে সর্বত্র খ্যাতির শিখরে নিয়ে যান। পরবর্তী বছরগুলোয়ও এ ধারা অব্যাহত থাকে। প্রায়শঃই পরবর্তী বিশ্বকাপের অন্যতম শিরোপাধারী হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে।

নতুন, আক্রমণাত্মক শ্রীলঙ্কান দৃষ্টিভঙ্গী ১৯৯৫-৯৬ মৌসুম থেকে শুরু হয়েছে বলে বিশ্বাস করেন। এ পর্যায়ে দলটি প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে মুত্তিয়া মুরালিধরনের বোলিং ভঙ্গীমা প্রদর্শনের মাধ্যমে সমস্যার সৃষ্টি করে। শ্রীলঙ্কা দলের প্রত্যেকেই তাঁদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রতিটি বিদ্রুপের জবাব দিয়েছে। ১৯৯৯ সালের শুরুতে একদিনের সিরিজে তিনি আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন।

দলীয় সঙ্গী মুত্তিয়া মুরালিধরনের বিপক্ষে আম্পায়ার রস এমারসনের নো-বল ডাকার প্রতিবাদ জানান। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে তর্জুনী উঁচিয়ে দলকে মাঠ থেকে প্যাভিলিয়নে নিয়ে আসেন, স্পিনারদের উপর বিশ্বাস রাখতেন; সর্বোপরি ভারসাম্য বজায় রেখে পুরো খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, একজন অধিনায়ককে খেলোয়াড়দের রক্ষা করতে হবে, তাঁদেরকে সহযোগিতাকল্পে এগিয়ে আসতে হবে। অযাচিত সমস্যা হিসেবে বো-বো ধ্বনি, রসকসহীন ব্যানার ও অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্রে একচেটিয়া বিদ্রুপাত্মক প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকলে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে খেঁই হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে, শৃঙ্খলাবিষয়ক শুনানীতে অধিনায়কের প্রতি দলের আস্থাজ্ঞাপনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। শুধুমাত্র ক্রিকেটবিষয়ক সাময়িকীতেই তাঁর দক্ষতার কথা সীমাবদ্ধ ছিল না; বরঞ্চ সাবেক দলীয় সঙ্গীরাসহ বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের কাছে সর্বত্র তাঁর বিষয়ে আলোচনা চলে আসছে। এক পর্যায়ে শেন ওয়ার্নের সাথে দূরত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিখ্যাত কিউই ক্রিকেটার মার্টিন ক্রোকে ২৯৯ রানে বিদেয় করেন। অফ-স্ট্যাম্পের বল ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপ অঞ্চলে হাসান তিলকরত্নে’র মুঠোয় চলে গেলে তিনি তাঁকে ত্রি-শতক থেকে বঞ্চিত করেছিলেন।

১৯৮১ থেকে ২০০০ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ৯৩ টেস্ট ও ২৬৯টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। কলেজের তরুণ ছাত্র হিসেবে ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে ১৮ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নামেন। ১৯৮১-৮২ মৌসুমে নিজ দেশে কিথ ফ্লেচারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। অন্য সকলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরফলে, শ্রীলঙ্কার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন। পাশাপাশি, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে প্রথম অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলার কৃতিত্বের অধিকারী হন। ৫৪ ও ২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, জন এম্বুরি’র অসাধারণ বোলিংয়ের কল্যাণে সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয়। একই সফরের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।

১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে নিজ দেশে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৪ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে কলম্বোর সিসিসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথম ইনিংসে এক পর্যায়ে ৭৫ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে কোন রান সংগ্রহ করতে পারেননি। খেলায় তিনি ৩৭ ও ৫০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ইনিংস ও ৬১ রানে পরাজিত করে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে নিজ দেশে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৪ মার্চ, ১৯৮৬ তারিখে কলম্বোর সিসিসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ৭৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, ৭৪ রানে অবস্থানকালীন এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরফলে, মেন্ডিস, ডায়াস ও ওয়েতিমুনি’র পর চতুর্থ শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান হিসেবে এ সফলতার সন্ধান পান। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর দূর্দান্ত ব্যাটিংয়ের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। দলীয় সর্বনিম্ন রান সংগ্রহের খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ২২ মার্চ, ১৯৮৬ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৫৩ ও ১৩৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে অশঙ্কা গুরুসিনহা’র সাথে তৃতীয় উইকেটে ২৪০* রানের নিরবচ্ছিন্ন জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কার পক্ষে যে-কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন। অবশ্য ব্যক্তিগত ৩০ রান সংগ্রহের পূর্বেই পাঁচবার তিনি আউট হওয়া থেকে রক্ষা পান। তাঁর অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে ১-১ ব্যবধানে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১৭ আগস্ট, ১৯৯২ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ১৯ আগস্ট, ১৯৯২ তারিখে সংগৃহীত ১২৭ রানের শতকটি শ্রীলঙ্কার তিনজন খেলোয়াড়ের অন্যতম ছিল। ফলশ্রুতিতে, কলম্বোর সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সফররত অজি দলের বিপক্ষে ৫৪৭/৮ তুলে ইনিংস ঘোষণা করেন। অশঙ্কা গুরুসিনহা ১৩৭ রান ও অভিষেকধারী রমেশ কালুবিতরানা ১৩২* রানের ইনিংস খেলেন। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটে ও তাঁদের শেষ আট উইকেটে মাত্র ৩৭ রান যুক্ত হয়। গ্রেগ ম্যাথুজের অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১৬ রানের নাটকীয় জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৯৩ সালে নিজ দেশে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৫ আগস্ট, ১৯৯৩ তারিখে মোরাতুয়ায় অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কসুলভ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৪ রানে পৌঁছানোকালে আড়াই হাজার রান সংগ্রহের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। ৪৪ ও ১৩১ রান সংগ্রহ করেন। তন্মধ্যে, প্রথম শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান হিসেবে এ কীর্তিগাথায় অংশ নেন। তাঁর বীরোচিত ভূমিকায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে শ্রীলঙ্কান দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১১ মার্চ, ১৯৯৫ তারিখে নেপিয়ারে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৩৯ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৫৫ ও ২৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, চামিণ্ডা ভাসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে নিউজিল্যান্ড দল ঐ টেস্টে ২৪১ রানে পরাজিত হলে সিরিজে পরাজয়বরণ করে। স্মর্তব্য যে, বিদেশের মাটিতে এটিই শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্ট জয় ছিল।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে শ্রীলঙ্কান দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৯ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ২০ ও ৪৩ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। শন পোলকের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৭০ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই মৌসুমে শ্রীলঙ্কান দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে পাকিস্তান সফরে যান। ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে শিয়ালকোটে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কোচিত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ২৪ ও ৮৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে ১৪৪ রানে জয় পেলে সফরকারীরা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে সমর্থ হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

প্রায় ২০ বছর বিশ্বের সর্বত্র ক্রিকেট মাঠে দূর্দান্ত প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। কখনো হাল ছেড়ে দেননি, খেলোয়াড়দেরকে উদ্দীপনা যোগাতেন ও সঠিক সময়ে যথোচিত ভূমিকা পালন করতেন। বিশ্বকাপে সাফল্য লাভের পাশাপাশি আগস্ট, ১৯৯৮ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ওভাল টেস্টে জয় এনে দিয়ে টেস্ট মর্যাদা লাভকে স্বার্থকতার দিকে নিয়ে যান। এর পূর্বে ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতার শিরোপা জয় করে ও পরবর্তীতে ওভালে দশ উইকেটে জয় পায় শ্রীলঙ্কা দল। বিশ্বকাপ জয়ের তিন বছরের মধ্যে ছয়টি বহুদলভিত্তিক প্রতিযোগিতার শিরোপা এনে দেন।

১৯৯৮ সালে শরীর থেকে ১২ কিলোগ্রাম ওজন কমান। দক্ষতার সাথে পূর্ববর্তী কয়েক বছরে দলের সফলতায় নিজেকে বেশ মেলে ধরেছিলেন। ১৯৯৮ সালে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১০ জুন, ১৯৯৮ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ২০ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ৪ ও ৬৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। রমেশ কালুবিতরানা’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১৬৪ রানে পরাজিত হলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। প্রসঙ্গতঃ টেস্টের ইতিহাসে পঞ্চম ঘটনা হিসেবে কোন দল প্রথম টেস্টে পরাজিত হলেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজ জয় করে নেয়। পূর্ববর্তী চার মৌসুমে এটি চতুর্থ ঘটনা ছিল ও প্রথম দল হিসেবে শ্রীলঙ্কা দুইবার এ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ড প্রথম দল হিসেবে প্রথম টেস্ট জয়ের পর তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে দুইবার পরাজয়বরণ করে।

ওভাল টেস্ট শেষে ৪৫৯৫ রান তুলেছেন। ১৯৯৯ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। পঞ্চম শ্রীলঙ্কান হিসেবে এ সাফল্য পান ও তাঁর পূর্বে চার বছরে চারজন শ্রীলঙ্কান এ গৌরবের সাথে নিজেদেরকে জড়ান। অন্যান্যদের সাথে সনথ জয়সূর্য্য তাঁর সাফল্যের অন্যতম অংশীদার ছিলেন। কলম্বোর বাইরে থেকে আসা ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণকে প্রাধান্য দেন। যোগ্যতার বিচারে সনথ জয়সূর্য্যকে পরীক্ষামূলকভাবে মাঝারিসারির অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলার সুযোগ দেন, অতঃপর সফলতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করে ও পরবর্তীতে দূর্ধর্ষ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়।

কাছাকাছি এলাকায় বল ফেলে দ্রুততার সাথে রান সংগ্রহে তৎপরতা দেখাতে না পারলেও একদিনের ক্রিকেটে নিত্য অনুসঙ্গ ছিলেন। চাতুর্যতাবিহীন অবস্থায় উইকেটের উভয় পার্শ্বেই বল ফেলে স্কোরবোর্ড সচল রাখতেন। সচরাচর, অফ-সাইডে খেলতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।

কার্যকর মিডিয়াম-পেস বোলিং করতে সক্ষম ছিলেন। তবে, খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে খুব কমই বোলিং কর্মে অগ্রসর হয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে অধিনায়কের মর্যাদা পান। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে শ্রীলঙ্কান বোর্ডের সাথে মতবিরোধ ঘটেছিল। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শেষে শ্রীলঙ্কার শোচনীয় ফলাফলের খেসারত তাঁকেও গুণতে হয়। অধিনায়কত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় ও এক বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

২০০০ সালে নিজ দেশে শন পোলকের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৬ আগস্ট, ২০০০ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১৪ ও ২৮* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

এ পর্যায়ে টেস্টে ৩৫.৬৯ গড়ে ৫১০৫ রান ও ওডিআই থেকে ৩৫.৮৪ গড়ে ৭৪৫৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অংশগ্রহণকৃত ৯৩ টেস্টের মধ্যে ৫৬টি ও ২৬০টি ওডিআইয়ের মধ্যে ১৯৩টিতে অধিনায়কত্ব করেছেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে কোন দলের পক্ষে প্রথম ও শততম টেস্টে অংশ নেয়ার অধিকারী হন।

ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। পরবর্তীতে, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। জানুয়ারি, ২০০৮ সালে বোর্ডের সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন। বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ডিসেম্বরে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। ৩ জুন, ২০১৬ তারিখে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের সহঃসভাপতি নির্বাচনে পরাজিত হন। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের মহাত্মা চতুষ্টয় হিসেবে সনথ জয়সুরিয়া যদি বিনাশকারী হন, কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে যদি রক্ষাকর্তা হন, তাহলে অর্জুনা রানাতুঙ্গাকে অবশ্যই স্রষ্টা হিসেবে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ডিডি রানাতুঙ্গা নামীয় সন্তানের জনক। ধম্মিকা রানাতুঙ্গা ও সঞ্জীবা রানাতুঙ্গা নামীয় দুই ভ্রাতা শ্রীলঙ্কার পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। তৃতীয় ভ্রাতা নিশান্ত রানাতুঙ্গা একদিনের আন্তর্জাতিকে খেলেছেন। তন্মধ্যে, অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র চেয়ে এক বছরের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ধম্মিকা রানাতুঙ্গা ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর নিয়ে শ্রীলঙ্কান বোর্ডের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে ছিলেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।