১৭ মে, ১৯৪৪ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
১৯৬০-৬১ মৌসুম থেকে ১৯৭৭-৭৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে লাহোর ও পাকিস্তান রেলওয়েজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। নীচেরসারির দূর্দান্ত ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ২৯ গড়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে চার শতক সহযোগে চার সহস্রাধিক রান পেয়েছেন।
১৯৬৪ থেকে ১৯৬৫ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে মাত্র তিনটি টেস্টে অংশ নেয়ার সুযোগ লাভ করেছিলেন। অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকেরই অভিমত ছিল যে, তিনি হয়তোবা আরও খেলায় অংশ নিতে পারতেন। পাকিস্তানের পক্ষে অভিষেক টেস্টে দূর্দান্ত খেলেছিলেন। দীর্ঘদেহী, লিকলিকে গড়নের অধিকারী ১৯ বছর বয়সী আরিফ বাট ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে হানিফ মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৪ ডিসেম্বর, ১৯৬৪ তারিখে মেলবোর্নের এমসিজিতে অনুষ্ঠিত একমাত্র টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে অংশ নেন। মোহাম্মদ ইলিয়াস ও ফারুক হামিদের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৭ ও ১২ রান তুলেছিলেন। ৬/৮৯ ও ১/২৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে হানিফ মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২২ জানুয়ারি, ১৯৬৫ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১২ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৪৬ ও ৩/৬২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
এরপর, একই সফরের ২৯ জানুয়ারি, ১৯৬৫ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। অংশগ্রহণকৃত শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২০ রানের সমকক্ষ হন। এ পর্যায়ে নিম্নমূখী রানের ড্র হওয়া খেলায় নবম উইকেটে ইন্তিখাব আলমের (৪৫) সাথে ৫২ রানের মূল্যবান জুটি গড়ে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার নতুন রেকর্ড গড়েন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য রানে ফ্রাঙ্ক ক্যামেরনের বলে বিদেয় নিয়েছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
মূলতঃ বোলিংয়ের কল্যাণেই জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। চমৎকার বাউন্সারসহ লেগ-কাটারে দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। উচ্চতা ও দমকে কাজে লাগিয়ে প্রথম দুই টেস্ট থেকে ১৪ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব দ্বিতীয় টেস্টে ৬/৮৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন।
এ সফরের পর পাকিস্তান দলে তাঁকে আর না খেলানোয় অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই বেশ বিস্মিত হয়েছিলেন। এ পর্যায়ে নতুন বলের জুটির সন্ধানে পাকিস্তান দলকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও, দূর্বলমানের ফিল্ডিং ও নির্জীব ভঙ্গীমাও তাঁকে দলে নেয়া থেকে বিরত রাখে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে উপেক্ষিত থাকলেও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ঠিকই নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমের কায়েদ-ই-আজম ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় করাচীর বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকালেও দল পরাজিত হয়েছিল। সাত বছর বাদে নিজস্ব সেরা মৌসুম অতিবাহিত করেন। এ পর্যায়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে প্যাট্রন্স ট্রফি, কায়েদ-ই-আজম ট্রফির শিরোপা বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। প্রায়শঃই ব্যাটিং ও বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দিতেন। কায়েদ-ই-আজম ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় সিন্ধুর বিপক্ষে ৬/৫৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ঐ মৌসুম শেষে ৭১৮ রান সংগ্রহসহ ১২ খেলা থেকে ৪৮ উইকেট দখল করেছিলেন। তন্মধ্যে, উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা ১৮০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ১৯৭৭-৭৮ মৌসুম পর্যন্ত খেললেও ১৯৭০-এর দশকের শুরুরদিকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা সময় পাড় করেন। ১১ জুলাই, ২০০৭ তারিখে লাহোরে ৬৩ বছর ৫৫ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
