| |

আর্চি ম্যাকলারিন

১ ডিসেম্বর, ১৮৭১ তারিখে ল্যাঙ্কাশায়ারের হোয়ালি র‍্যাঞ্জ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। দলে মূলতঃ ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

তুলা ব্যবসায়ী জেমস ম্যাকলারিন ও এমিলি কার্ভার দম্পতির সপ্তম পুত্রের দ্বিতীয় ছিলেন। পরবর্তীতে, ল্যাঙ্কাশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ পিতার উদ্দীপনায় ক্রিকেট খেলতে উৎসাহিত হন। সুপরিচিত এলস্ট্রি প্রিপারেটরি স্কুলে ক্রিকেটে প্রশিক্ষণার্থে তাঁকে প্রেরণ করেন। এরপর, হ্যারোতে চলে যান। সেখানে বিদ্যালয়ের সদস্যরূপে ১৮৮৭ থেকে ১৮৯০ সময়কালে লর্ডসে এটনের বিপক্ষে খেলেন।

১৮৯০ থেকে ১৯২২-২৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আগস্ট, ১৮৯০ সালে ব্রাইটনে সাসেক্সের বিপক্ষে কাউন্টি ক্রিকেট খেলার জন্যে মনোনীত হন। বাদ-বাকীরা হিমশিম খেলেও আঠারো বছর বয়সে এসে ১০৮ রানের নিখুঁত ও দূর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন। ক্রিকেটের স্বর্ণযুগে তাঁর দীর্ঘ শক্ত-মজবুত গড়ন ও মোহনীয়তা বেশ মানানসই ছিল। প্রায়শঃই তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরন রাজকীয় ও মোহগ্রস্তপূর্ণ ছিল। হ্যারোর প্রতিভাবান বিদ্যালয় ক্রিকেটার ছিলেন। ১৮ বছর বয়সে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে প্রথম খেলাতেই শতক হাঁকান। ২৫ বছরের অধিক সময় ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে খেলে পনেরো হাজারের অধিক রান তুলেন। তন্মধ্যে, ১৯০৪ সালের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতায় ল্যাঙ্কাশায়ার দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন।

১৮৯৫ সালে টনটনে সমারসেটের বিপক্ষে তিনি পর্বতসম ৪২৪ রান রান তুলে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তৎকালীন ব্যক্তিগত বিশ্বরেকর্ড দাঁড় করান।

১৮৯৪ থেকে ১৯০৯ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সব মিলিয়ে ৩৫ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। পাঁচ শতক সহযোগে প্রায় দুই হাজার রান সংগ্রহ করেছিলেন। অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলোর ২২টিতে ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করলেও খুব কমই সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন।

১৮৯৪-৯৫ মৌসুমে অ্যান্ড্রু স্টডার্টের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১৪ ডিসেম্বর, ১৮৯৪ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ফ্রান্সিস ফোর্ড, জ্যাক ব্রাউন ও লেসলি গে’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৪ ও ২০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ঐ খেলায় সফরকারীরা নাটকীয়ভাবে ১০ রানে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ১ মার্চ, ১৮৯৫ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১২০ ও ২০* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ৬ উইকেটে জয়লাভ করে সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

১৮৯৭-৯৮ মৌসুমে এমসিসি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ১ জানুয়ারি, ১৮৯৮ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৩৫ ও ৩৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অভিষেকধারী মন্টি নোবেলের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৫৫ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সমতায় ফেরে।

১৯০২ সালে নিজ দেশে জো ডার্লিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৪ জুলাই, ১৯০২ তারিখে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। খ্যাতনামা ঐ টেস্টে তাঁর দল অজিদের কাছে নাটকীয়ভাবে মাত্র ৩ রানে পরাজয়বরণ করলে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ১ ও ৩৫ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে হিউ ট্রাম্বলের বলে বিদেয় নেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন।

১৯০৯ সালে নিজ দেশে মন্টি নোবেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৭ মে, ১৯০৯ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয়লাভ করে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ৯ আগস্ট, ১৯০৯ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

৫১ বছর বয়সে এসে এমসিসি দলের সদস্যরূপে ওয়েলিংটনে পূর্ণাঙ্গ নিউজিল্যান্ডীয় একাদশের বিপক্ষে ২০০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। নেভিল কারডাস তাঁকে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ রোমান’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন। সেপ্টেম্বর, ১৯২১ সালে ল্যাঙ্কাশায়ার কাউন্টির তরুণ খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের প্রস্তাবনা গ্রহণ করেন। কিন্তু, হাঁটুর আঘাতের কারণে ১৯২৩ সালের শুরুতে পদত্যাগ করেন। ১৭ নভেম্বর, ১৯৪৪ তারিখে বার্কশায়ারের ওয়ারফিল্ড পার্ক এলাকায় ৭২ বছর ৩৫২ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • |

    ম্যাট হর্ন

    ৫ ডিসেম্বর, ১৯৭০ তারিখে অকল্যান্ডের টাকাপুনা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুম থেকে ২০০৫-০৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ড ও ওতাগো দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৯৭ থেকে…

  • |

    দিলীপ দোশী

    ২২ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে গুজরাতের রাজকোটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৬৮-৬৯ মৌসুম থেকে ১৯৮৬ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলা ও সৌরাষ্ট্র এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ার…

  • | |

    নীল অ্যাডকক

    ৮ মার্চ, ১৯৩১ তারিখে কেপ প্রদেশের সী পয়েন্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। দীর্ঘদেহী আক্রমণাত্মক ফাস্ট বোলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। মাইক প্রোক্টর, পোলক পরিবার কিংবা অ্যালান ডোনাল্ড বৈশ্বিক ক্রিকেট…

  • | |

    এডো ব্রান্ডেস

    ৫ মার্চ, ১৯৬৩ তারিখে নাটালের পোর্ট শেপস্টোন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘চিকেন জর্জ’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। প্রিন্স এডওয়ার্ড স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ২০০০-০১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী…

  • | |

    ওয়ালি হ্যামন্ড

    ১৯ জুন, ১৯০৩ তারিখে কেন্টের বাকল্যান্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটিং কর্মে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সিরেনচেস্টার গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। প্রায় যে-কোন বয়সী প্রজন্মের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করবেন। কেন্টে জন্মগ্রহণ করলেও ঘরোয়া…

  • | |

    হান্সি ক্রোনিয়ে

    ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের ব্লোমফন্তেইনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতার স্বাক্ষর রেখেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুম থেকে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ফ্রি স্টেট ও…