Skip to content

১৭ অক্টোবর, ১৯৬৫ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতার স্বাক্ষর রেখেছেন। শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কত্ব করেছেন।

পিতা স্যাম তাঁর উপযোগী বিদ্যালয় খুঁজে বের করতে বেশ হিমশিম খেয়েছিলেন। অবশেষে ডিএস সেনানায়েকে কলেজ আরআইটি অ্যালিসের অধ্যক্ষকে প্রথম গ্রেডে ভর্তি করাতে সক্ষম হন। খুব শীঘ্রই আকর্ষণীয় ব্যাটিংশৈলী উপহার দিয়ে নিজেকে পরিচিত করে তুলতে তৎপর হন।

শ্রীলঙ্কার মানদণ্ডে তাঁর উচ্চতা বেশ কম ছিল। ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে ব্যাট হাতে নেয়ার ফলে খানিকটা অংশ দৃশ্যমান থাকতো। তবে, স্কয়ার অঞ্চলে ব্যাপক প্রভাব রাখতেন। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুম থেকে ২০০২ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাব, নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ড এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮৩ সালে সফররত জিম্বাবুয়ীয় একাদশের বিপক্ষে খেলার জন্যে শ্রীলঙ্কা বোর্ড সভাপতি একাদশের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত হন ও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ১৮ বছর বয়সে ছয় নম্বর অবস্থানে খেলতে নেমে ২৩ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন।

১৯৮৪ থেকে ২০০৩ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ৯৩ টেস্ট ও ৩০৮টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ৩১ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে মোরাতুয়ায় অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে বর্ণাঢ্যময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবনে প্রবেশ করেন। ঐ খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই তাঁর লিস্ট-এ ক্রিকেটে অভিষেক হয়। এ সময়ে তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করেন। তবে, সূচনাপর্বটি তাঁর তেমন স্বার্থক আকার ধারন করেনি। রিচার্ড হ্যাডলি’র বলে ৮ রানে তাঁকে বিদেয় নিতে হয়।

১৯৮৪ সালে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৮ বছর বয়সে ২৩ আগস্ট, ১৯৮৪ তারিখে ক্রিকেটের স্বর্গভূমি হিসেবে খ্যাত লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ইয়ান বোথামের বিপক্ষে দিলীপ মেন্ডিসের চড়াও হবার কারণে খ্যাতি পাওয়া ঐ টেস্টে ১৬ ও ৩ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, সিদাথ ওয়েতিমুনি’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীতে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।

১৯৮৫-৮৬ মৌসুমের ফিরতি সফরে নিজ দেশে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ১১ ও ৫ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, এ পর্যায়ে তিনি সেলিম মালিকের ক্যাচ তালুবন্দীকালীন উইকেট-রক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। তবে, তৌসিফ আহমেদের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২০ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

তবে, বড় ধরনের সংগ্রহ দাঁড় করাতে হিমশিম খান। অবশেষে, নিজস্ব পঞ্চম টেস্টে প্রথমবারের মতো শতরানের সন্ধান পান। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ১৬ অক্টোবর, ১৯৮৫ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেন। নিজস্ব বিংশতিতম জন্মদিনে ৯৩ রানে অপরাজিত থাকেন। পরদিন শতরান করেন। এ পর্যায়ে ১২২ রান সংগ্রহের জন্যে সাড়ে আট ঘণ্টা ক্রিজে অবস্থান করেছিলেন। সাত নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নেমে অবিস্মরণীয় বোলিং আক্রমণ প্রতিহত করে এ সাফল্য পান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

ঐ সিরিজেরই ৭ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে আরও একটি শতক হাঁকান। ১৩ ও ১০৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ শতক সত্ত্বেও স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, এ সিরিজে ২৫০ রান সংগ্রহ করে জাভেদ মিয়াঁদাদের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

১৯ বছর বয়সে শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্ট বিজয়ে অংশ নেন। কলম্বোয় সফরকারী ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

তাসত্ত্বেও, খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুরদিকে ধারাবাহিকতাবিহীন খেলতেন ও বাজে শট খেলে বিদেয় হতেন। এ ধরনের প্রবণতার কারণে ‘ম্যাড ম্যাক্স’ ডাকনামে পরিচিতি পান। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে নিজেকে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিপক্কতা আনয়ণ করেন।

১৯৮৯-৯০ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় তুলে ধরেন। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে ব্রিসবেনের গাব্বায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার খেলেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৬৭ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ০/২১ ও ১/৪৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে হোবার্টে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রেখেছিলেন। ৭৫ ও ৭২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৬৫ বোলিংশৈলী দাঁড় করান। তাঁর প্রাণান্তঃকর ব্যাটিং স্বত্ত্বেও স্বাগতিকরা ১৭৩ রানে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। পাশাপাশি, এ সিরিজে ৩১৪ রান সংগ্রহসহ ৩ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯০-৯১ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৩১ জানুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে স্বাগতিক কিউইদের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে রোমাঞ্চপূর্ণ দ্বি-শতরানের (২৬৭) ইনিংস খেলেন। তাঁর এ ইনিংসের কল্যাণে বিদেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার জয়ের বিরাট সুযোগ আসে। কিন্তু, মার্টিন ক্রো ও অ্যান্ড্রু জোন্সের রেকর্ড ভঙ্গকারী জুটির কল্যাণে স্বাগতিক দল খেলাটিকে ড্রয়ের পথে নিয়ে যায়।

এরপর, একই সফরের ১ মার্চ, ১৯৯১ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৯৬ ও ১২৩ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও ফলাফলবিহীন অবস্থায় সিরিজটি শেষ হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯২ সালে কলম্বোয় সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। এ পর্যায়ে স্বাগতিক দলের জয়ের জন্যে মাত্র ৫৪ রানের দরকার পড়ে। শ্রীলঙ্কার উইকেটের পতন ঘটতে থাকে ও ১৬ রানে পরাজয়বরণ করে। এ টেস্টেও তিনি সমালোচিত হন।

১৫ আগস্ট, ১৯৯২ তারিখে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শতক হাঁকিয়ে দলকে চার উইকেটে বিজয় এনে দেন। শেষ ওভার পর্যন্ত খেলাটি গড়ায়। অশঙ্কা গুরুসিনহা’র সাথে ১৪৭ রানের জুটি গড়েন। অপ্রত্যাশিত বিজয়ের পর শেষ খেলায় পরাভূত হলেও ২-১ ব্যবধানে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় করতে সমর্থ হয় শ্রীলঙ্কা দল।

১৯৯৩ সালে নিজ দেশে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৭ জুলাই, ১৯৯৩ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত মাইলফলকের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ২২ ও ৯৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মনোজ প্রভাকরের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলায় স্বাগতিক দল ২৩৫ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ভারতীয়রা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। সফরকারীদের এ জয়টি গত ২৭ টেস্টে বিদেশের মাটিতে প্রথম জয় ছিল।

একই বছর স্বল্প কয়েকজন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানের অন্যতম হিসেবে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রেট শ্যুলজ ও অ্যালান ডোনাল্ডের অগ্নিসম পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে, বেশ কয়েকবার তাঁর খামখেঁয়ালিপনা মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তাসত্ত্বেও প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থেকেও নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। এক পর্যায়ে ১৯৯৪ সালের অস্ট্রাল-এশিয়া কাপের পূর্বে তাঁকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়। এর প্রতিবাদস্বরূপ অর্জুনা রানাতুঙ্গাসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড় ঐ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন।

১৯৯৪ সালে নিজ দেশে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৯ আগস্ট, ১৯৯৪ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ১২৭ ও ৫ রান সংগ্রহ করেন। ২১১ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে ১৫৬ বল মোকাবেলায় ১৯টি চার ও একটি ছক্কার সাহায্যে শতরান করেন। এটি তাঁর সপ্তম টেস্ট শতক ছিল ও তৃতীয়বারের মতো ছক্কা হাঁকিয়ে তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শ করেন। তবে, সাঈদ আনোয়ারের সুন্দর ব্যাটিং সাফল্যে সফরকারীরা ৩০১ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

তবে, ১৯৯৫ সালে প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের পক্ষে সফলতম মৌসুম অতিবাহিত করার পরপরই খেলোয়াড়ী জীবনের বাঁক ঘুরিয়ে ফেলেন। ২০০২ সালে ওডিআইয়ে অবদানকে ঘিরে উইজডেন কর্তৃপক্ষ সেরা ১০০ ব্যাটিংয়ের ছয়টি বিষয়ে তাঁকে রাখে। কেবলমাত্র একটি বিভাগে বিখ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট তারকা ভিভ রিচার্ডসের পর দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। এছাড়াও, ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় সংগৃহীত শতরানটি তালিকায় অষ্টম স্থানে ছিল।

নিউজিল্যান্ড সফরের পর এপ্রিল, ১৯৯৫ সালে কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্ট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেন। এ পর্যায়ে পূর্বেকার মৌসুমের শীর্ষ ব্যাটসম্যান কার্ল হুপার গ্রীষ্মে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে যোগ দেয়ার ফলে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তাঁকে দলে যুক্ত করার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হয়। ঐ মৌসুমে সফলতা-ব্যর্থতায় কেন্ট দল অতিবাহিত করে। কেন্টের তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান। মাত্র ১৩২ পয়েন্ট নিয়ে কেন্ট দল তালিকায় সর্বনিম্ন অষ্টাদশ স্থানে অবস্থান করলেও নিজে ঠিকই সেরা খেলা উপহার দিয়েছিলেন। মার্ক রামপ্রকাশ ও নাসের হুসাইনের পর চ্যাম্পিয়নশীপে মোট সংগৃহীত রানের দিক দিয়ে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করেন। সাতটি শতক সহযোগে ৫৯.৩৬ গড়ে ১৭৮১ রান তুলতে সক্ষম হন। বেনসন এন্ড হেজেস কাপের চূড়ান্ত খেলায় তিনি ১১২ রানের ইনিংস উপহার দিলেও ল্যাঙ্কাশায়ারের কাছে ৩৫ রানে কেন্ট দল পরাজিত হয়। এছাড়াও, প্রায়শঃই দলের পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ বোলার হিসেবে ব্যবহৃত হতেন। তুলনামূলকভাবে ওভার প্রতি কম রান খরচ করলেও অনিয়মিতভাবে উইকেট পেতেন।

টেস্ট ও ওডিআইয়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করলেও তেমন সুবিধে করতে পারেননি। ১৯৯০-এর দশকে শ্রীলঙ্কা দলকে ৬ টেস্ট ও ১৮টি ওডিআইয়ে নেতৃত্ব দেন। তবে, অধিনায়ক হিসেবে কোন টেস্টে জয়ের সন্ধান পাননি। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কত্ব করেন। বিশ্বকাপের পর এ দায়িত্ব ভার ত্যাগ করেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ব্যাটিংয়ে ছন্দপতন ঘটে। ঐ সিরিজে ২১ উইকেট পাওয়া গ্লেন ম্যাকগ্রা’র বোলিংয়ে কুপোকাত হওয়া সিরিজে তিনি মাত্র ১৬.৩৩ গড়ে ৯৮ রান তুলতে পেরেছিলেন। নিয়মিত অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র আঙ্গুলের আঘাতের কারণে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। পুরো সিরিজটিই বিতর্কিত ছিল। প্রথম টেস্টে শ্রীলঙ্কা দলকে বলে আঁচড় লাগানোর অভিযোগ আনা হলেও পরবর্তীতে আইসিসি থেকে নিষ্কৃতি দেয়া হয়। দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলীয় আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার শ্রীলঙ্কান বোলার মুত্তিয়া মুরালিধরনের বিপক্ষে তিন ওভারের মধ্যে সাতবার নো-বল ডাকেন। টেস্টের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার অংশগ্রহণে ত্রি-দেশীয় সিরিজের সপ্তম খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মুত্তিয়া মুরালিধরনের বিপক্ষে পুণরায় বল নিক্ষেপের কারণে নো-বল ডাকা হয়েছিল।

অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র অনুপস্থিতিতে ওডিআই প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা দলকে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে অর্জুনা রানাতুঙ্গা দল পরিচালনায় অগ্রসর হলে তিনি ঐ সিরিজে শ্রীলঙ্কার শীর্ষ ব্যাটসম্যানে পরিণত হন। ২৫.৮০ গড়ে ২৫৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

ইডেন গার্ডেন্সে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে দলের সংগ্রহ ১/২ থাকা অবস্থায় মাঠে নামেন। চাপ সামলে নিয়ে ৪৭ বলে ৬৬ রান তুলেন। পরবর্তীতে নয়ন মোঙ্গিয়া’র উইকেট লাভ করেন। চমৎকার অফ-স্পিন বোলিং করতেন। ঐ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯-০-৪২-৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে প্রতিপক্ষকে ২৪১ রানে বেঁধে রাখতে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। এ পর্যায়ে মার্ক টেলর ও রিকি পন্টিংয়ের ন্যায় তারকা খেলোয়াড়দেরকে বিদেয় করেন। এরপর ব্যাট হাতে নিয়ে অপরাজিত ১০৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন এবং শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা বিজয়ে অনন্য ভূমিকা রাখেন। সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে উভয় খেলাতেই ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, ক্লাইভ লয়েড ও ভিভ রিচার্ডসের পর তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চূড়ান্ত খেলায় শতক হাঁকিয়েছিলেন। পাশাপাশি, একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে এ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় শতকের পাশাপাশি তিন উইকেটের সন্ধান পেয়েছেন।

শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের মধ্যে অনবদ্য রেকর্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় শচীন তেন্ডুলকর সর্বাধিক রান সংগ্রহ করলেও তিনি প্রকৃত বীরে পরিণত হয়েছিলেন। ছয় খেলা থেকে ৮৯.৬০ গড়ে ৪৪৮ রান তুলেন। এ পর্যায়ে ১০৭.৬৯ স্ট্রাইক রেটে রান পেয়েছেন। পাশাপাশি ২১.৭৫ গড়ে ৪ উইকেট দখল করেছিলেন। খামখেয়ালীপনায় পূর্বেকার বিদেয় নেয়ার বিষয়টি ঝেড়ে ফেলে শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। লাহোরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চূড়ান্ত খেলায় নিপুণতার সাথে সুনিয়ন্ত্রিত আক্রমণে জড়িত থাকেন। পাল্টা আক্রমণে সহঃস্বাগতিক দেশের বিজয়ে অংশ নেন। অথচ, বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার অল্প কিছুদিন পূর্বে তাঁর দল অস্ট্রেলিয়া সফরে বেশ নাকানি-চুবানির শিকার হয়েছিল।

ভারতের সুনীল গাভাস্কার ও অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিংয়ের তিনবার টেস্টের উভয় ইনিংসে শতক হাঁকানোর পর দুইবার এ অর্জনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে নিজ দেশে রমিজ রাজা’র নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ২৬ এপ্রিল, ১৯৯৭ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপরাজিত ১৩৮ ও অপরাজিত ১০৫ রান তুলেছিলেন। এরফলে, একই টেস্টের উভয় ইনিংসে শতরানের অপরাজিত ইনিংস খেলা একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে চিত্রিত হয়ে আছেন। এ অর্জনের আট দিন পূর্বে পূর্বেকার টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৮ রান তুলে তিনটি শতক হাঁকানোর কৃতিত্ব দেখান। তাঁর অসাধারণ জোড়া শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, ৪৩২ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান। ঐ বছর ৭৬.২৫ গড়ে ১২২০ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে ভারত গমন করেন। ১৯ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে মোহালীতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নিয়ে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৩৩ ও ১১০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৪ জানুয়ারি, ১৯৯৮ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ২৭ ও ১৪৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/৬১ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে দলের বিজয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ১৯ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের দ্বিতীয় দিন মারভান আতাপাত্তু’র সাথে ১২৯ রানের জুটি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩য় উইকেটসহ যে-কোন উইকেটে নতুন রেকর্ড গড়েন। এরফলে, ১৯৩৮-৩৯ মৌসুমে নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের পিএ গিব ও ডব্লিউআর হ্যামন্ডের তৃতীয় উইকেটে সংগৃহীত ১০৯ রানের রেকর্ড ম্লান হয়ে পড়ে। খেলায় তিনি ৭৭ ও ৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১৫ ও ০/০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। শন পোলকের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৭০ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ২৭ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্ট অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের তৃতীয় দিন ব্যক্তিগত ১৪ রানে ফাইন-লেগ অঞ্চলে দণ্ডায়মান ডিজে কালিনানের মুঠো থেকে বল ফস্কে পড়ে যায়। খেলায় তিনি ১ ও ৪১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, অ্যালান ডোনাল্ডের অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

১৯৯৮ সালে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১০ জুন, ১৯৯৮ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৩/৩৯। খেলায় তিনি ৩/৩০ ও ০/১৪ লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৪ ও ৩ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। রমেশ কালুবিতরানা’র ব্যাটিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা ১৬৪ রানে পরাজিত হলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। প্রসঙ্গতঃ টেস্টের ইতিহাসে পঞ্চম ঘটনা হিসেবে কোন দল প্রথম টেস্টে পরাজিত হলেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজ জয় করে নেয়। পূর্ববর্তী চার মৌসুমে এটি চতুর্থ ঘটনা ছিল ও প্রথম দল হিসেবে শ্রীলঙ্কা দুইবার এ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ড প্রথম দল হিসেবে প্রথম টেস্ট জয়ের পর তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে দুইবার পরাজয়বরণ করে।

১৯৯৮ সালে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৭ আগস্ট, ১৯৯৮ তারিখে ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৫২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে পরাজয়বরণ করে।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে সনথ জয়সুরিয়া’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০০ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ১১২ ও ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা টেস্টে ২ উইকেটে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৫ সালে বেনসন এন্ড হেজেস প্রতিযোগিতায় ৯৫ বলে ১১২ রান তুলে কাউন্টি ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ইনিংস হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৯৬ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন।

শ্রীলঙ্কা দলের নিয়মিত খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান। এছাড়াও, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও ক্লাব ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করে নিয়মিতভাবে রান পেয়েছেন। ১৯৯৫ সালের বেনসন এন্ড হেজেসের চূড়ান্ত খেলায় ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে মাত্র ৯৫ বলে ১১২ রানের দূর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন। স্ট্রোকপ্লে প্রদর্শনীর অপূর্ব নিদর্শন গড়ে এ ইনিংসকে স্মরণীয় করে রাখেন। কেক খেতে অধিক পছন্দ করেন। এছাড়াও, দ্রুতগতিতে গাড়ী চালনা করতে ভালোবাসেন।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার পর পরের দুই বছর বেশ কয়েকটি ইনিংস খেলে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন। তন্মধ্যে, অনিল কুম্বলে’র বোলিংকে বেছে নেন ও ভারতের বিপক্ষে সফল হন। ১৯৯৭ সালে পাঁচ ইনিংসের চারটিতেই ভারতের বিপক্ষে শতক হাঁকিয়েছিলেন। ঐ বছর এসএসসিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে শতক হাঁকান ও স্বাগতিক দলকে তিন শতাধিক রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় সফলতার সাথে নিয়ে যান।

নব্বুইয়ের দশকের শেষদিক থেকে তাঁর খেলার মান পড়তির দিকে চলে যায়। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায়ও তেমন ভালো খেলেননি। ২০০২ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ঐ বছর নিজ দেশে খালেদ মাসুদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ২১ জুলাই, ২০০২ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ২০৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অপূর্ব বোলিংশৈলীর সুবাদে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৯৬ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। পোর্ট এলিজাবেথে অনুষ্ঠিত সেমি-ফাইনাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১ রানে রান আউটের শিকার হন ও তাঁর দল পরাজিত হয়। এ বিশ্বকাপের পর বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি ঘটান।

টেস্টগুলো থেকে ৪২.৯৭ গড়ে ৬৩৬১ রান ও একদিনের আন্তর্জাতিকে ৩৪.৯০ গড়ে ৯২৮৪ রান পেয়েছেন। পাশাপাশি নিজ নামের পার্শ্বে টেস্টে ২৯ ও ওডিআইয়ে ১০৬ উইকেট লিখিয়েছেন। এছাড়াও, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪৮.৩৮ গড়ে রান ও ২৯.১৭ গড়ে উইকেট পেয়েছেন।

শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে প্রথম মহাতারকা হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন। ছোটখাটো গড়নের অধিকারী হলেও খুব দ্রুত নিজের ব্যতিক্রমী প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে তৎপরতা দেখিয়েছেন। স্পিনার ও পেসার – উভয় ধরনের বোলিংয়ের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। এক পর্যায়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেয়ার কারণে বেশ সমালোচনার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। তবে, পরবর্তীতে এ ধাক্কা সামলে উঠেন ও অন্যতম ব্যাটিংস্তম্ভ হিসেবে পরিচিতি পান। কাট ও হুকে সহজাত দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন।

দ্রুত পদ সঞ্চালন করে ক্রিকেটের অন্যতম বিনোদনধর্মী ক্রিকেটারের মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন। কাছাকাছি এলাকায় বল ফেলে দিয়েও বড় অঙ্কের রানের সন্ধান পেয়েছেন। কাট ও হুকের সাহায্যে অপূর্ব কৌশল অবলম্বনে দূর্দান্ত আক্রমণকারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ব্যাট হাতে নিয়ে কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, এমনকি সনথ জয়সুরিয়া’র চেয়েও নিজেকে এগিয়ে রেখেছেন স্ব-মহিমায়। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী শ্রীলঙ্কা দলে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। ক্রিকেটকে ঘিরে দ্বীপপুঞ্জে নবজোয়াড় আনেন ও নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদেরকে উজ্জ্বীবিত করে গেছেন।

‘অরবিন্দ: মাই অটোবায়োগ্রাফী’ শীর্ষক আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। এ গ্রন্থে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন ও সফলতায় বৌদ্ধধর্মের প্রভাবকে তুলে ধরেছেন। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর ক্রিকেট অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে তৎপর হন। জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য হন।

২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতাকে ঘিরে দল নির্বাচকমণ্ডলীর প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। এ পর্যায়ে দলটি আরও একবার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত খেলায় অংশ নেয়। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শেষে এ দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ৪৯তম জন্মদিন শেষে স্ত্রীসহ ভ্রমণে যান। শূন্য গৃহে চোর প্রবেশ করে। নিরাপদ জায়গা থেকে নগদ ৫০ লক্ষ রূপী না থাকার কথা প্রতিবেদনে জানানো হয়।