Skip to content

১৭ অক্টোবর, ১৯৭০ তারিখে কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোরে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হতেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

টেস্ট ও ওডিআইয়ে দলের সর্বাপেক্ষা কার্যকরী বোলার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করেছেন। দলীয় সঙ্গীদের আসা-যাবার পালায় থাকলেও প্রতিটি খেলাতেই অংশ নিয়েছেন। ভারতকে একাকী খেলায় জয় আনতে কিংবা রুখে দাঁড়াতে অন্য কোন বোলার তাঁর কাছাকাছি আসতে পারেননি। নিজ দেশে ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষেসহ ভারতীয় উইকেট-রক্ষকদের কাছে বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতেন। এক দশক পর অবশেষে বিদেশের মাটিতেও সফলতার সন্ধান পান।

১৯৮৯-৯০ মৌসুম থেকে ২০০৮-০৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে কর্ণাটক এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে লিচেস্টারশায়ার, নর্দাম্পটনশায়ার ও সারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তন্মধ্যে, ১৯৯৫ সালে নর্দাম্পটনশায়ার ও ২০০০ সালে লিচেস্টারশায়ারের ক্যাপ লাভের অধিকারী হন। এছাড়াও, এশিয়া একাদশ ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তাঁর। দ্রুত সফলতা পান। ফলশ্রুতিতে, তাঁকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

১৯৯০ থেকে ২০০৮ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ১৩২ টেস্ট ও ২৭১টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২৫ এপ্রিল, ১৯৯০ তারিখে শারজায় অনুষ্ঠিত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে বর্ণাঢ্যময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনে প্রবেশ করেন।

১৯৯০ সালে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৯ আগস্ট, ১৯৯০ তারিখে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তেমন দৃষ্টিনন্দন ক্রীড়াশৈলী উপহার দিতে পারেননি। প্রথম পরিবর্তিত বোলার হিসেবে ৩/১০৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। অ্যালান ল্যাম্বকে ৩৮ রানে বিদেয় করে নিজস্ব প্রথম উইকেট লাভ করেন। ইংল্যান্ড দল ৫১৯ রান তুলে ও দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি কোন উইকেট পাননি। তবে, শচীন তেন্ডুলকরের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটিতে স্বাগতিক দল ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

তৃতীয় টেস্টে তাঁকে খেলানো হয়নি। দুই বছরের অধিক সময়ে আর কোন খেলার জন্যে তাঁকে দলে রাখা হয়নি। নিজস্ব দশম টেস্টে ৫০ উইকেটের সন্ধান পান। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে তাঁর এ অর্জনটি দ্রুততম। নিজস্ব ২১তম টেস্টে শততম উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন।

খেলোয়াড়ী জীবনের স্বর্ণালী সময়ে একদিনের ক্রিকেটে ২০.২৪ গড়ে ও ওভারপ্রতি ৪.০৬ রান দিয়ে ৬১ উইকেট দখল করেছিলেন। ভারত উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় শীর্ষ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন। পাশাপাশি টেস্টে ১০৫ উইকেট লাভের ফলে ১৯৯৬ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন।

সেপ্টেম্বর, ১৯৯২ সালে দিল্লিতে বাদ-বাকী ভারতের বিপক্ষে ইরানী ট্রফির খেলায় ১৩৮ রান খরচায় ১৩ উইকেট দখল করেন। এ ধরনের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি গোচরে পড়েন। অল্প কিছুদিন পরই জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকা গমনার্থে তাঁকে ভারত দলে রাখা হয়। দীর্ঘ বিরতি নিয়ে নভেম্বর, ১৯৯২ সালে পুণরায় টেস্টে অংশ নেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। মার্চ, ১৯৭০ সালের পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটি প্রথম টেস্ট খেলা ছিল। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৫১ ও ১/৩৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রবীণ আম্রে’র অসাধারণ শতকে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪-২২-৫৩-৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তন্মধ্যে, পাঁচজনই বিভ্রান্তির কবলে পড়ে বোল্ড হন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলেও তিনি দলে স্থায়ী সদস্যের মর্যাদা পান।

একই মৌসুমে নিজ দেশে গ্রাহাম গুচের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো নিজ দেশে খেলেন ও প্রথমবারের মতো সিরিজ বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া ঐ সিরিজে ২১ উইকেট দখল করে ভারতের সম্মুখসারির স্পিনাররূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। চেন্নাইয়ে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বোলিং উদ্বোধনে নেমে রবিন স্মিথকে ১৭ রানে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৬৪ নিয়ে স্বীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। ঐ সিরিজে তাঁর দল ৩-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে ও তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

মার্চ, ১৯৯৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বেশ সফলতা পান। খেলায় তিনি আট উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৭০ নিয়ে ভারত দলকে ইনিংস ও ১৩ রানে জয় এনে দেন। কোটলায় অনুষ্ঠিত একটিমাত্র টেস্টের এক পর্যায়ে ৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ২৭ নভেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে একদিনের আন্তর্জাতিকে বিস্ময়কর খেলা উপহার দেন। কলকাতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬/১২ পান। এ বোলিং পরিসংখ্যানটি যে-কোন ভারতীয় বোলারের নতুন রেকর্ড হিসেবে এক দশকের অধিক সময় ধরে সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তাঁর এ সাফল্যে ভারত দল হিরো কাপের শিরোপা জয় করে।

১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৮ জানুয়ারি, ১৯৯৪ তারিখে লখনউয়ে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। নিজস্ব প্রথম দশ উইকেটের সন্ধান পান। নিজস্ব চতুর্দশ টেস্টে ১২৮ রান খরচায় ১১ উইকেট দখল করেন। টেস্টের তৃতীয় ও চতুর্থ দিনে সফরকারী ব্যাটসম্যানদেরকে বিপর্যস্ত করে এ সাফল্য পান। ৪/৬৯ ও ৭/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৪ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অনন্য সাফল্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১১৯ রানে বিজয়ী হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে দলকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নিয়ে যান। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে কলম্বোর এসএসসিতে প্রথম ইনিংসে ৫/৮৭ লাভ করেছিলেন। এ বিষয়টি যে-কোন ভারতীয় বোলারের শ্রীলঙ্কায় সেরা বোলিং বিশ্লেষণের ঘটনা ছিল। পরবর্তীতে, বেঙ্কটেশ প্রসাদ ২২ আগস্ট, ২০০১ তারিখে ক্যান্ডিতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৭২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়ে রেকর্ডটি নিজের করে নেন।

একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেন। এ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৯ মার্চ, ১৯৯৪ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৩৪ ও ১/৬৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। অভিষেকধারী স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের অসাধারণ সাফল্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।

এপ্রিল, ১৯৯৫ সালে ইংরেজ কাউন্টি দল নর্দাম্পটনশায়ারে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে ভারতের ইংল্যান্ড সফরকে ঘিরে বলে বৈচিত্র্য আনয়ণে স্বীয় দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পান। একদিনের খেলাগুলোয় দ্রুত গতিতে বোলিং করলেও চ্যাম্পিয়নশীপে কিছুটা ধীরলয়ে অগ্রসর হন। ২০.৪০ গড়ে ১০৫ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।

১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে নিজ দেশে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৮ অক্টোবর, ১৯৯৫ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে এমডি ক্রো’র প্রথম উইকেট লাভ করে শততম টেস্ট উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ব্যাঙ্গালোরের নিজ শহরে অনুষ্ঠিত নিজস্ব একবিংশতিতম টেস্টে মার্টিন ক্রো’র উইকেট নিয়ে এ সাফল্য পান। প্রথম ইনিংসে ৪/৩৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৮১ নিয়ে সফরকারী নিউজিল্যান্ড দলকে তিনদিনের মধ্যেই পরাজিত করতে ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও, খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৬* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ঐ টেস্টে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। প্রসঙ্গতঃ ১০০তম, ৩০০তম ও ৪০০তম উইকেট লাভের মাইলফলক এ মাঠেই সম্পন্ন করে দর্শকদেরকে নির্মল আনন্দ দেন।

দলের অমূল্য খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে আরও পরিস্ফূটিত করতে সচেষ্ট হন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে নিজ দেশে হান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৭ নভেম্বর, ১৯৯৬ তারিখ থেকে শুরু হওয়া কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৫২ রান অতিক্রম করেন। ২৯ নভেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে টেস্টে তাঁর তৎকালীন সর্বোচ্চ ৮৮ রান তুলেন। এ পর্যায়ে ইডেন গার্ডেন্সে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের (১০৯) সাথে অষ্টম উইকেট জুটিতে ১৬১ রানের জুটি গড়েন। দলের সংগ্রহ ৩২৯ রান তুলে সর্বশেষ খেলোয়াড় হিসেবে হার্শেল গিবসের দূর্দান্ত থ্রোয়ে রান-আউটের শিকার হলেও উপস্থিত দর্শকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা কুড়ান। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, ২/৭৬ ও ১/১০১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, গ্যারি কার্স্টেনের জোড়া শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ৩২৯ রানের ব্যবধানে জয়ী হয় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে পেসের প্রাধান্যের পর শেন ওয়ার্নমুত্তিয়া মুরালিধরনের সাথে তৃতীয় প্রতিযোগী হিসেবে ১৯৯০-এর দশকে ধীরলয়ে বোলিংয়ের স্পিনের পুণঃজাগরণ ঘটান। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে জিম লেকারের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ইনিংসে দশ-উইকেট পেয়েছেন। পরবর্তীতে অবশ্য এজাজ প্যাটেল ২০২১ সালে ভারতের বিপক্ষে এ সফলতা লাভ করেন। ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯ তারিখে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা মাঠে অনুষ্ঠিত টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংসের সবকটি উইকেটই লাভ করে অপূর্ব প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। খেলায় তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ১০/৭৪। এরফলে, ১৯ বছর পর ভারত দল পাকিস্তানে বিপক্ষে জয়লাভে সক্ষমতা দেখায়।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে হান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২ মার্চ, ২০০০ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬/১৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ৩৬* ও ২৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। নিকি বোয়ে’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ৭১ রানে পরাজয়বরণ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

২০ অক্টোবর, ২০০০ তারিখে বিসিসিআই ৩০ বছর বয়সী অনিল কুম্বলেকে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকান অর্থোপেডিক সার্জন মার্ক ফার্গুসনের তত্ত্বাবধানে থাকার কথা ঘোষণা করে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কোকা কোলা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী খেলায় অংশগ্রহণের পূর্বে কয়েক মাস ডান কাঁধের আঘাতে দলের বাইরে ছিলেন। এর তিন মাস পর বিসিসিআই এ সিদ্ধান্ত নেয়। এরফলে, কমপক্ষে আরও চার মাস তাঁকে মাঠের বাইরে থাকতে হয়।

২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে নাসের হুসাইনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ৩ ডিসেম্বর, ২০০১ তারিখে মোহালিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ২/৫২ ও ৬/৮১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করেন। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

একই সিরিজের ১৯ ডিসেম্বর, ২০০১ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে ব্যক্তিগত সাফল্য পান। নিজ শহরে ভারতের প্রথম স্পিনার হিসেবে টেস্টে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও দ্বিতীয় দিন বিকেলে ম্যাথু হগার্ডকে এলবিডব্লিউতে বিদেয় করে এ তালিকায় যুক্ত হন। এরফলে, কপিল দেবের পর দ্বিতীয় ভারতীয় এবং শেন ওয়ার্ন, মুত্তিয়া মুরালিধরন ও ল্যান্স গিবসের পর চতুর্থ স্পিনার হিসেবে এ সাফল্যের সন্ধান পান। ৬৬তম টেস্টে তিনি ৩০০ উইকেট পান।

এর এক বছর পর প্রায় একই দিনে একদিনের আন্তর্জাতিকে এ মাইলফলকে পৌঁছেন। এর পূর্বে ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত জিম্বাবুয়ীয় ব্যাটসম্যান গ্যারি ব্রেন্টের উইকেট লাভের মাধ্যমে ওডিআইয়ে প্রথম স্পিনার হিসেবে ২০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে বিশ্বের সপ্তম ও ভারতের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এ কীর্তিগাঁথা স্থাপন করেন। ৬ অক্টোবর, ২০০৪ তারিখে নিজস্ব ৮৫তম টেস্টে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান সায়মন ক্যাটিচের উইকেট নিয়ে ৪০০তম টেস্ট উইকেট লাভ করেন। ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত এ মাইলফলক স্পর্শের ফলে কপিল দেবের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে এ কৃতিত্বের অধিকারী হন।

১২ মে, ২০০২ সালে চোয়ালে ব্যথা নিয়ে মাঠে অবস্থান করেছেন ও অ্যান্টিগুয়ার সেন্ট জোন্সে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে ভারতের ড্রয়ে দূর্দান্ত বল ছুঁড়েছিলেন। ব্রায়ান লারাকে এলবিডব্লিউ’র সহায়তা নিয়ে বিদেয় করেন। রাহুল দ্রাবিড় ও ভিভিএস লক্ষ্মণের ন্যায় তারকা ক্রিকেটারদের সাথে ১৮ বছর ধরে বীর হিসেবে দলে অবস্থান করেছেন। দলের বিজয়ের অন্যতম কারিগর হিসেবে ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্পিনার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ২৬ আগস্ট, ২০০২ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খ্যাতনামা জয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ভারত দল ৬২৮ রান তোলার পর ১৫৯ রান খরচায় ৭ উইকেট দখল করে দলকে সিরিজে সমতা আনয়ণে সহায়তা করেন।

ডিসেম্বর, ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দারুণ খেলেন। হরভজন সিং আহত হলে দ্বিতীয় টেস্ট খেলার সুযোগ পান। তিন টেস্ট থেকে ২৪ উইকেট নিয়ে ভারতকে সিরিজ ড্র করাতে ভূমিকা রাখেন। অ্যাডিলেডে ৫/১৫৪ লাভের পর সিডনিতে প্রায় একাকী চূড়ান্ত দিনে স্টিভ ওয়াহ’র বিদায়ী টেস্টে দলকে জয় এনে দেন। পুরো সিরিজ জুড়ে নিজ দেশের ন্যায় বিদেশের মাটিতেও তাঁর গুরুত্বতার অপূর্ব প্রদর্শনে সোচ্চার হন।

মার্চ, ২০০৪ সালে পুণরায় আঘাতে জর্জড়িত হন তিনি। কাঁধের আঘাতের কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ থেকে তাঁকে বাদ দেয়া হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে অংশগ্রহণের বিষয়ে শঙ্কা থাকলেও তাঁকে টেস্ট দলে রাখা হয়েছিল। এপ্রিল, ২০০৪ সালে বিদেশের মাটিতে জয়ে অংশ নেন। রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে চার উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে ভারতের প্রথম সিরিজ জয়ে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। প্রথম দিনে ভারতের উদীয়মান পেসারদের সাফল্যের পর বিস্ময়করভাবে নিজ কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেন। চতুর্থ দিনে দারুণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করে দলকে ইনিংস ও ১৩১ রানে জয় এনে দেন। এ সিরিজে উভয় দলের মধ্যে উইকেট লাভের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিলেন। এরফলে, এক দশকেরও অধিক সময় পর ভারতের বিদেশের মাটিতে সিরিজ বন্ধ্যাত্বের খরা কাটে।

১০ ডিসেম্বর, ২০০৪ তারিখে নিজস্ব ৪৩৫তম উইকেটের সন্ধান পান। এরফলে কপিল দেবকে টপকে ভারতের সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহকারী হিসেবে নিজেকে চিত্রিত করেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে মোহাম্মদ রফিককে স্ট্যাম্পের ফাঁদে ফেলে এ সাফল্য পান। খেলা শুরুর পূর্বে কপিল দেবের সাফল্যকে ম্লান করে দিতে মাত্র এক উইকেটের দরকার ছিল ও এর জন্যে তিনি মাত্র দুই বলে দুই উইকেট পান। তবে, মাশরাফি মর্তুজা দ্বাদশ ওভারের পঞ্চম বল আটকে দেন। তাঁর এ সাফল্যে বর্তমান খেলোয়াড়সহ কপিল দেবের কাছে থেকে অভিনন্দন বার্তা পান।

২০০৫-০৬ মৌসুমে নিজ দেশে মারভান আতাপাত্তু’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১০ ডিসেম্বর, ২০০৫ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৬/৭২ ও ৪/৮৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৮৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ১৮ ডিসেম্বর, ২০০৫ তারিখে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ২১ ও ২৯* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/৮৭ ও ৫/৮৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, হরভজন সিংয়ের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৫৯ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। ৬৭ রান সংগ্রহসহ ২০ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

একই মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের নেতৃত্বধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ৯ মার্চ, ২০০৬ তারিখে মোহালিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৫/৭৬ ও ৪/৭০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ৩২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অল-রাউন্ড নৈপুণ্যে স্বাগতিক দল ৯ উইকেটে জয় পায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

সময়ের সাথে সাথে গুগলিতে উন্নয়ন ঘটান, কিছু লেগ-ব্রেক বলও বাঁক নিতো। টপ স্পিন ও ফ্লিপারের পাশাপাশি বাউন্স খেতো। ফলশ্রুতিতে, ব্যাটসম্যান লেগ বিফোর উইকেটের কবলে পড়তেন, বোল্ড হতে কিংবা উইকেটের কাছাকাছি ফিল্ডারদের তালুবন্দী হতেন। তবে, খুব কমই স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়িয়েছেন। তার বল থেকে খুব কমই রান এসেছে। অবিরাম নিখুঁত নিশানা বরাবর বোলিং করায় বাউন্ডারি এসেছে হাতে গোনা। যখন বোলিং করার জন্যে আমন্ত্রণ পেতেন তখন খুব কমই ব্যাটসম্যানেরা সাড়া দিয়েছেন। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে ও মজবুত কাঁধ সহযোগে স্বল্প দৌঁড়ে স্ট্যাম্প লক্ষ্য রেখে বোলিং কর্মে অগ্রসর হয়েছেন। বলগুলো সর্বদাই দ্রুততর ছিল। প্রায়শঃই বলগুলোকে মিডিয়াম পেসের ন্যায় ছিল। খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনালগ্নে মিডিয়াম-পেস বোলিং করতেন। পিচ সহায়ক হলে কিংবা বিন্দুমাত্র পিচে খুঁত থাকলে দূর্দম্য ভূমিকা রাখতেন। এছাড়াও বলে পর্যাপ্ত বাউন্স পেতেন।

ভারতের প্রায় প্রত্যেক বোলিং রেকর্ডের সাথে স্বীয় নামকে যুক্ত করেছেন। বলকে তেমন বাঁক খাওয়াতে না পারলেও ক্রমাগত নিখুঁত নিশানায় বলে ফেলেছিলেন। গুগলি, স্পিন ও শূন্য বলকে ভাসিয়ে বৈচিত্র্যতায় ব্যাটসম্যানদেরকে বিভ্রান্তে ফেলেছেন।

টেস্টগুলো থেকে ৬১৯ উইকেট পান। এরফলে, ক্রিকেটের ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হয়েছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে এসে ১০ আগস্ট, ২০০৭ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত খেলায় ১১০ রানে অপরাজিত থাকেন ও খেলোয়াড়ী জীবনের একমাত্র শতক হাঁকিয়েছেন। সিরিজের চূড়ান্ত ও ব্যক্তিগত ১১৮তম টেস্টে শতরান করার পর ইংল্যান্ডের মন্টি পানেসর তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে খেলোয়াড়ীসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। এরফলে চামিণ্ডা ভাসের ৯৬তম টেস্টে শতক হাঁকানোর রেকর্ড ভেঙ্গে নিজের করে নেন। এদিন দর্শনীয় ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ও বেশ কুশলতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে বেশ সুন্দর শট খেলেন। শুধুমাত্র পিছনের পায়ে ভর দিয়ে কাটই করেননি, বরঞ্চ অফ-স্ট্যাম্পের বাইরের বলগুলোও দক্ষতার সাথে মোকাবেলায় তৎপরতা দেখিয়েছিলেন। এরফলে, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে শতরান ও ইনিংসে দশ-উইকেট লাভের অধিকারী হন। এছাড়াও, নিজস্ব সপ্তম প্রথম-শ্রেণীর শতক নিজ নামের পার্শ্বে যুক্ত করতে সক্ষম হন। একই খেলায় নিজস্ব ৯০০তম আন্তর্জাতিক উইকেট লাভ করেন।

এরপূর্বে আরও পাঁচটি টেস্ট অর্ধ-শতক হাঁকালেও কোনটিকেই তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শে ব্যর্থ হয়েছিলেন। দলের সিরিজ বিজয়ে ড্র কিংবা জয়ের কোন বিকল্প ছিল না। কেনিংটন ওভাল টেস্ট ড্রয়ের মাধ্যমে তিন টেস্ট নিয়ে গড়া ঐতিহাসিক সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয় করে ভারত দল ও এতে তাঁর এ শতক বিরাট ভূমিকা রাখে।

ইতোমধ্যে দলের বিশাল সংগ্রহ ৪১৭/৬ হয়। সংগ্রহকে আরও স্ফীততর করতে এমএস ধোনি’র সাথে জুটি গড়েন। মন্টি পানেসরের উপর চড়াও হন। ক্রিস ট্রেমলেটের বলে পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে দুইটি বাউন্ডারি হাঁকান, উইকেট থেকে এগিয়ে এসে পানেসরের বলকে শূন্যে ভাসিয়ে কভার অঞ্চলে প্রেরণ করেন। জহির খানসহ এমএস ধোনি’র সাথে ৫০ ঊর্ধ্ব জুটি গড়েন। ১১ রানে আরপি সিং বিদেয় নিলে ব্যাটিং কৌশল সম্পর্কে অজানা এস. শ্রীশান্তের সাথে শেষ উইকেট জুটি বেঁধে আরও মারমুখী ভঙ্গীমায় অগ্রসর হন। উইকেট-রক্ষক ম্যাট প্রায়রের হাত থেকে স্ট্যাম্পিং থেকে বেঁচে যান ও ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছেন। ৩৬ বছর ২৯৭ দিন বয়সে এবং সুদীর্ঘ ১৭ বছর ১১৮ দিন খেলে এ অর্জনের সাথে নিজেকে জড়ান। এছাড়াও, টেস্ট ক্রিকেটে বয়োজ্যেষ্ঠ হিসেবে ‘জাম্বো’ এ রেকর্ড গড়েন। এ টেস্টেই গ্লেন ম্যাকগ্রা’র সংগৃহীত ৫৬৩ উইকেটের মাইলফলক ছাড়িয়ে যান। জানুয়ারি, ২০০৮ সালে ৬০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে কেবলমাত্র শেন ওয়ার্ন ও মুত্তিয়া মুরালিধরন তাঁর তুলনায় এগিয়েছিলেন এবং স্পিনের স্বর্ণযুগে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।

৩৭তম জন্মদিনের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ২০০৭ সালে সম্মাননাসূচক ভারতের ৩০তম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন। ২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে শোয়েব মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২২ নভেম্বর, ২০০৭ তারিখে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪/৩৮ ও ৩/৬৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে সালমান বাটকে রাহুল দ্রাবিড়ের কটে পরিণত করে তিনি ক্যাচের মাধ্যমে তাঁর ৫০তম উইকেট লাভ করেন। এরফলে, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে কমপক্ষে ৫০টি ডিসমিসালে তৃতীয় ফিল্ডার-বোলার হিসেবে এ সাফল্যের সাথে নিজেদেরকে যুক্ত রাখেন। এছাড়াও, ২৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে ৬ উইকেটে জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

অধিনায়কের দায়িত্বে নিয়ে ২৭ বছর পর নিজ দেশে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের প্রথম টেস্ট সিরিজ বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২০ উইকেট নিয়ে শীর্ষ উইকেট সংগ্রাহক হন। এ সিরিজের পূর্বে অস্ট্রেলিয়ায় বিতর্কিত সিরিজেও দলের প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

শ্রীলঙ্কা সফরে খেলায় ছন্দপতন ঘটে। ২০০৮-০৯ মৌসুমে নিজ দেশে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাঙ্গালোর টেস্টে উইকেট শূন্য অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করতে হয়। কাঁধের আঘাতের পাশাপাশি হতাশার কবলে আচ্ছাদিত হন। ক্ষুদ্র প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য করেন যে, তিনি খেলোয়াড়ী জীবন আরও চলমান রাখবেন। তবে, দিল্লি টেস্ট চলাকালীন মন পরিবর্তন করেন ও অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। ২৯ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। ভিভিএস লক্ষ্মণের অপূর্ব ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকে। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যাট হাতে ৪৫ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ৩/১১২ ও ০/১৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান।

২০০৭ সালে একদিনের আন্তর্জাতিক থেকে অবসর নেন। ওডিআই থেকে ৩৩৭ উইকেট পান ও ব্যক্তিগত সেরা ৬/১২ লাভ করেন।

দীর্ঘ ১৮ বছরের বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনে টেস্টগুলো থেকে ৬১৯ উইকেট ও ওডিআইগুলো থেকে ৩৩৭ উইকেট দখল করেছেন। তন্মধ্যে, দলকে চৌদ্দবার নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও, সর্বাধিক ১৫৬বার এলবিডব্লিউ করেছেন। অবসর গ্রহণকালীন মুত্তিয়া মুরালিধরন ও শেন ওয়ার্নের পর টেস্টে সর্বকালের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় তৃতীয় স্থানে অবস্থান করেন। ২২ অক্টোবর, ১৯৯৫ তারিখে ঘোষিত আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে সর্বোচ্চ ২য় অবস্থানে ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলায় দারুণ খেলেন ও তিনদিনের মধ্যেই দলকে জয় এনে দিতে ভূমিকা রাখেন।

১৯৯৩ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার, ১৯৯৬ সালে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৯৫ সালে অর্জুন পুরস্কার ও ২০০৫ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার পান। এছাড়াও, ২০১৪ সালে উইজডেন ইন্ডিয়া হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে অংশ নিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরপর পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১০ সালে কর্ণাটক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন ও তিন-বছর মেয়াদে যুক্ত ছিলেন। ২০১৩ সালে মুম্বইয়ের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হন।

২০০৯ সালের শুরুতে ক্রীড়াক্ষেত্রে মাদক নিয়ন্ত্রণ পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড এন্টি-ডোপিং এজেন্সির অ্যাথলেটসবিষয়ক কমিটিতে নিযুক্তি লাভ করেন। এ সকল ব্যবস্থাপকীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ক্রিকেট বিষয়ক কমিটিতে যোগ দেন। ২০১৬ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ গমনের পূর্বে ভারত ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হিসেবে মনোনীত হন। এ দায়িত্বে যুক্ত হবার কয়েক মাসের মধ্যে আইসিসি টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে দলটি বিশ্বের ১ নম্বর স্থান অধিকার করে। এক বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে দলটি এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বাধিক টেস্ট খেলায় জয়লাভে কৃতিত্ব দেখায়। তবে, নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি’র সাথে মতবিরোধের জের ধরে এ পদ থেকে চলে আসতে বাধ্য হন।