Skip to content

২৮ এপ্রিল, ১৯৬৮ তারিখে কেপ প্রদেশের কেপটাউন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে বামহাতে ইনিংসে উদ্বোধনে নামতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

ফ্লাওয়ার ভ্রাতৃদ্বয়ের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ। ‘পেটালস’ ডাকনামে পরিচিত অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। তিনি তাঁর সময়কালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানরূপে গণ্য হয়েছিলেন। টেস্টের পূর্ণাঙ্গ গুণাবলী নিয়ে সকল ধরনের পরিবেশে খেলার উপযোগী করে দীর্ঘদিন জিম্বাবুয়ের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছিলেন।

২০০০ সালে খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করার দুই বছরের মধ্যে বিস্ময়করভাবে এতোটাই ধারাবাহিকতা প্রদর্শন করেছিলেন যে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা ব্যাটসম্যানের উপমা লাভে তাঁকে কোনরূপ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়নি। বিশ্বের অন্যতম সেরা উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে চিত্রিত হয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছর জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে খেলা উপহার দিয়েছেন।

১৯৮৬-৮৭ মৌসুম থেকে ২০০৬-০৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সম্পৃক্ত থেকেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে ম্যাশোনাল্যান্ড, ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্স ও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবে খেলেছেন। ভাইনোনা হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুর দিনগুলো থেকে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে নিজেকে মোকাবেলায় সক্ষমতা দেখিয়ে আসছেন। পরবর্তীতে স্পিন বোলারদের বিপক্ষে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পরিপক্ক করে তুলেন।

১৯৯২ থেকে ২০০৩ সময়কালে জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বমোট ৬৩ টেস্ট ও ২১৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে নিউ প্লাইমাউথে অনুষ্ঠিত নিজস্ব প্রথম ওডিআইটিতে ১১৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অভিষেক ঘটিয়ে শতরান করার বিরল নজির গড়েন। অবশ্য, ঐ খেলায় জিম্বাবুয়ে দল ৩ উইকেটে পরাজয়বরণ করেছিল। এছাড়াও, নিউ সাউথ ওয়েলসের অ্যালবারিতে অনুষ্ঠিত খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের বিজয়ের ন্যায় সেরা অঘটনের নেপথ্যে অবস্থান করে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখেন। গ্রুপ পর্বের খেলায় প্রতিপক্ষকে মাত্র ১২৫ রানে গুটিয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন।

একই বছরে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন করেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারত দলের মুখোমুখি হন। ১৮ অক্টোবর, ১৯৯২ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত ভারত দলের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে ইতিহাসের উদ্বোধনী ও একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। জন ট্রাইকোস ব্যতীত অন্য সকলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। প্রথম ইনিংসে অর্ধ-শতক হাঁকান। ড্র হওয়া টেস্টটির দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি। একই টেস্টে কনিষ্ঠ ভ্রাতা গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারের অভিষেক ঘটে ও খেলোয়াড়ী জীবনের অধিকাংশ সময়ই তাঁরা একত্রে খেলেছেন।

একই মৌসুমে নিজ দেশে মার্টিন ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৫৯ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৮১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। স্মর্তব্য যে, জিম্বাবুয়ে-নিউজিল্যান্ডের মধ্যে এটিই ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্ট ছিল।

১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে জিম্বাবুয়ীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৩ জানুয়ারি, ১৯৯৬ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৬ ও ৫৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, চারটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। তবে, ক্রিস কেয়ার্নসের অসাধারণ বোলিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে আলিস্টার ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৯ অক্টোবর, ১৯৯৯ তারিখে ব্লোমফন্তেইনের গুডইয়ার পার্কে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৩ ও ৩৯ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে একটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীকরণে অগ্রসর হন। তবে, জ্যাক ক্যালিসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩ রানে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই মৌসুমে নিজ দেশে সনথ জয়সুরিয়া’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অপূর্ব খেলেন। ৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৯ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপরাজিত ৭০ রান সংগ্রহসহ পাঁচটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তাঁর দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। ঐ টেস্টে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটিতে ৩৮৮ রান সংগ্রহ করে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ পুরস্কার পান।

অবসর গ্রহণকালীন জিম্বাবুয়ে দলের পক্ষে টেস্টে সর্বাধিক ৪৭৯৪ রান সংগ্রহের অধিকারী। ১২টি শতক সহযোগে ৫১.৫৪ ব্যাটিং গড়ে ধারে-কাছে আর কোন জিম্বাবুয়ীয় খেলোয়াড় নেই। এক পর্যায়ে প্রায় একাকী জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। প্রায়শঃই উইকেট-রক্ষণে এগিয়ে আসতেন ও কিছু সময় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

১৯৯৯ সালের শেষদিক থেকে ১৯ টেস্ট থেকে সাতটি শতক হাঁকিয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানরূপে পরিগণিত হন। বর্ণাঢ্য খেলোয়াড়ী জীবনে অনেকগুলো অসাধারণ ইনিংস উপহার দিয়েছেন। এ সময়ে কয়েকজন সেরা খেলোয়াড়দের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে হয়। কিন্তু, স্থিরলয়ে সবকিছু নিজের করে নিতে সক্ষম হন। প্রতিপক্ষীয় বোলারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। খুব কম সময়ই মন্দভাবে অতিবাহিত করেছেন ও রান সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সন্দেহাতীতভাবেই সহযোগী দেশ থেকে পূর্ণাঙ্গ সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে দলের উত্থানে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখে গেছেন। তবে, জিম্বাবুয়ে দলের বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে তলানীর দিকে অবস্থান করায় পর্যাপ্ত বিদেশ সফর করা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন।

১৯৯৯-২০০০ সালে শ্রীলঙ্কা গমন করে। নুয়ান জয়সা’র হ্যাট্রিকের কল্যাণে দলীয় সংগ্রহ ০/৩ হলে ধীরসুস্থে ৭৪ রানের মনোরম ইনিংস খেলে বিপর্যয় এড়াতে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। একই মৌসুমে কুইন্স পার্ক ওভাল পিচে দৃষ্টিনন্দন ১১৩ রান তুলেন। ঐ খেলায় উভয় দলের অন্য কেউ অর্ধ-শতকের সন্ধান পাননি। তবে, সবকিছু ছাড়িয়ে ২০০১ সালের শুরুতে ভারত সফরে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। ভারতীয় বোলারদের বিপক্ষে বেশ চড়াও হন। মাত্র দুইবার আউট হন ও ৯৪.৮৩ গড়ে ৫৪০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৮৩*, ৭০, ৫৫ ও নাগপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ এবং উইকেট-রক্ষকদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩২* রান তুলেছিলেন। এ পর্যায়ে একাধারে সাতটি ইনিংসে অর্ধ-শতক হাঁকিয়ে বিশ্বরেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন।

২০০০-০১ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০০০ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৯ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৪৮ ও ৬৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ ও একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। ক্রিস কেয়ার্নসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

এক বছর পর সূবর্ণ মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। ২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে শন পোলকের নেতৃত্বে স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৭ সেপ্টেম্বর, ২০০১ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অংশ নেন। দূর্দান্ত খেলেন ও ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসের তৃতীয় দিনে ৯২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের দ্বিতীয় দিন ডিওন ইব্রাহিমকে সাথে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৮২ রান তুলে দ্বি-পক্ষীয় রেকর্ড গড়েন। তৃতীয় দিন জিজে হুইটলের সাথে সপ্তম উইকেটে ৪৫ রান তুলে পূর্বেকার রেকর্ডের সমকক্ষ হন। এরপর, একই দিনে ট্রাভিস ফ্রেন্ডকে সাথে নিয়ে নবম উইকেটে ৭৫ রান তুলে দ্বি-পক্ষীয় রেকর্ড গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দলের সর্বোচ্চ ২৮৬ রান তুলেন। খেলার চতুর্থ দিন হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ১৮৬ রানের দ্বি-পক্ষীয় রেকর্ড গড়েন। পঞ্চম দিন উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত থাকেন ও অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলকে উইকেট-রক্ষণের দায়িত্বভার প্রদান করা হয়। উভয় ইনিংসে শতক হাঁকান। প্রতিপক্ষের সংগৃহীত ৬০০/৩ সংগ্রহের বিপরীতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ক্রিজে অবস্থান করে ১৪২ রান তুললেও জিম্বাবুয়ে দল ২৮৬ রানে গুটিয়ে যায়। ফলো-অনের কবলে পড়ে ও স্বাগতিক দল ৩৯১ রান তুলে ইনিংস ব্যবধানে পরাভূত হয়। কিন্তু, দক্ষিণ আফ্রিকানরা অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে করায়ত্ত্ব করতে পারেনি। দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১৯৯ রানের ইনিংস খেলে বিস্ময়কর কীর্তি স্থাপন করেন। সবমিলিয়ে ৩৪১ রান করেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসেবে পরাজিত দলের সদস্য হন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে একটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীকরণে অগ্রসর হন। তাঁর বীরোচিত ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও সফরকারীরা ৯ উইকেটে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০ টেস্ট ও ৫২টি ওডিআইয়ে দলকে পরিচালনা করেছিলেন। তন্মধ্যে, ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে নিজ দেশে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট বিজয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ৩১ জানুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঐ খেলায় ১৫৬ রান তুলেন ও স্ট্যাম্পের পিছনে অবস্থান করে তিনটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন এবং গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার দ্বি-শতক হাঁকিয়েছিলেন। ফ্লাওয়ার ভ্রাতৃদ্বয়ের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় সফরকারীরা ইনিংস ও ৬৪ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। স্বীয় ভ্রাতা গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এরপর, ২০০০ সালে প্রথম জিম্বাবুয়ীয় অধিনায়ক হিসেবে ইংল্যান্ডে জিম্বাবুয়ে দলকে নিয়ে টেস্ট সফরে যান।

২০০২-০৩ মৌসুমে নিজ দেশে ওয়াকার ইউনুসের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দলের মুখোমুখি হন। ১৬ নভেম্বর, ২০০২ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩০ ও ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ টেস্টে সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয় পায় ও ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলীয় সঙ্গী হেনরি ওলোঙ্গা’র সাথে জিম্বাবুয়েতে ‘গণতন্ত্রের মৃত্যু’ ঘটায় প্রতিবাদে সোচ্চার হন। প্রতিযোগিতায় নামিবিয়ার বিপক্ষে দলের প্রথম খেলায় অংশগ্রহণের পূর্বে কালো বাহুবন্ধনী পরিধান করার কথা ঘোষণা করেন। এর জন্যে তিনি বেশ সমালোচিত হন। এ প্রতিযোগিতায় ৪৭ গড়ে ৩৩২ রান তুলেন। সর্বনিম্ন করেন ২২ রান। প্রতিযোগিতা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্চ, ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। এর পরপরই এমসিসি তাঁদের সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানসূচক আজীবন সদস্য হিসেবে সম্মানিত করে। এ সময়ে টেস্ট ও ওডিআইয়ে জিম্বাবুয়ের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড়ের অধিকারী ছিলেন। ২১৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়ে ৩৫.৩৪ গড়ে ৬৭৮৬ রান তুলেন। তন্মধ্যে, ৪টি শতক ও ৫৫টি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। হিথ স্ট্রিকের সাথে ওডিআইয়ে সপ্তম উইকেট জুটিতে ১৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

এরপর, ২০০২ থেকে সেপ্টেম্বর ২০০৬ সালে আঘাতের কবলে পড়ে অবসর গ্রহণের পূর্ব-পর্যন্ত এসেক্সের পক্ষে খেলেন। মাঝখানে ২০০৩-০৪ মৌসুমে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০৫ সালে সহোদর গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার এসেক্সে যুক্ত হলে তাঁরা একত্রে খেলেন। ঐ বছরে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে উভয় শতক হাঁকান। এরফলে প্রথম ভ্রাতৃদ্বয় হিসেবে কোন কাউন্টিতে একই ইনিংসে শতরান করার গৌরব অর্জন করেন। আঘাতের কারণে ২০০৭ সালে স্বাভাবিক খেলা উপহার দিতে পারেননি ও মাঠের বাইরে অবস্থান করেন।

খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর আরও কঠিন দায়িত্বের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। কোচিং জগতের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের সহকারী কোচ হিসেবে যুক্ত হন। ফলে, ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পিটার মুরেসের সহকারী হিসেবে কয়েক বছর কোনরূপ চাপের মুখোমুখি হননি। কিন্তু পিটার মুরেস ও কেভিন পিটারসনের মধ্যকার বাদানুবাদ জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়ে পড়লে জানুয়ারি, ২০০৯ সালে ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে জ্যামাইকায় দলের ৫১ রানের গুটিয়ে যাওয়া ইনিংস অবলোকন করেন। তিনি শান্তভাবে কর্তৃত্বমূলক আচরণে এ সফরকে সফল করে তুলতে সচেষ্ট হন। দলীয় অধিনায়ক অ্যান্ড্রু স্ট্রসের সাথে নৈকট্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে সকল ক্ষেত্রে দলের উত্থানে ভূমিকা রাখেন। এ সফরের কয়েক সপ্তাহ পর দলীয় পরিচালকের ন্যায় শীর্ষ পদে আসীন হন।

প্রথম দুই বছরের মধ্যেই দলের ভিত্তি মজবুত করেন। দেশে-বিদেশে দুইবার অ্যাশেজ সিরিজ বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। ৫০-ওভারের ক্রিকেটে ধারাবাহিক ফলাফলে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করেন। মে, ২০১০ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় শিরোপা জয় করে। এরফলে, ইংল্যান্ড দল প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক যে-কোন আইসিসি ট্রফি বিজয়ে কৃতিত্ব দেখায়। ২০১১ সালে নিজেকে আরও সফলতার সাথে যুক্ত করেন। ভারতকে ৪-০ ব্যবধানে পরাজিত করে ইংল্যান্ড দলকে আইসিসি প্রণীত টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বর অবস্থানে নিয়ে যান। ২০১১ সালে ইসিবি কর্তৃক ইংল্যান্ডের কোচ হিসেবে চুক্তি নবায়ণ করা হয়। পরের বছর কাজের চাপ কমাতে অ্যাশলে জাইলসকে সীমিত-ওভারের ক্রিকেটের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তাসত্ত্বেও দলীয় পরিচালকের পদটি বহাল থাকে।

২০১৩-১৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজ খোঁয়ালে ইংল্যান্ডের কোচ থেকে পদত্যাগ করতে হয়। ইংল্যান্ড লায়ন্সের প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্তি পান। এছাড়াও, পেশাওয়ার জালমির ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন। সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সালে বিশ্ব একাদশের কোচ হিসেবে তিনটি টি২০আই খেলায় দলকে নিয়ে পাকিস্তান গমন করেন। ২০০২ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। ১১ জুন, ২০১১ তারিখে ক্রীড়ায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানসূচক ওবিই পদবীতে ভূষিত হন। একই বছরে বিবিসি বর্ষসেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বর্ষসেরা কোচের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ তারিখে কুমার সাঙ্গাকারা, মন্টি নোবেল, অব্রে ফকনার, লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইন, স্ট্যান ম্যাককাবে, বিনু মানকড়, টেড ডেক্সটার, বব উইলিস ও ডেসমন্ড হেইন্সের সাথে একযোগে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।