|

অ্যান্ড্রু জোন্স

৯ মে, ১৯৫৯ তারিখে ওয়েলিংটনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান ছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

‘জেড’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। বেশ দেরীতে ক্রিকেট জগতে পদার্পণ ঘটে তাঁর। প্রশিক্ষণ বহির্ভূত নিজস্ব ঘরানায় ব্যাটিং কৌশল অবলম্বনে অগ্রসর হতেন। শর্ট বলে লাফিয়ে মোকাবেলা করে নিচেরদিকে নিয়ে আসতেন। দৃষ্টিনন্দন না হলেও বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টস, ওতাগো ও ওয়েলিংটনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। প্রায় ২৮ বছর বয়সে এসে নিজস্ব তৃতীয় প্রাদেশিক দলে খেলে সফলতার সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে প্রথমবারের মতো খেলার সুযোগ লাভ করেন।

১৯৮৭ থেকে ১৯৯৫ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৩৯ টেস্ট ও ৮৭টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে জেফ ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ১৬ এপ্রিল, ১৯৮৭ তারিখে কলম্বোর সিসিসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। দলের একমাত্র ইনিংসে ৩৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। এ মৌসুমে জেফ ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ৪ ডিসেম্বর, ১৯৮৭ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৩৮ রান অতিক্রম করেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ৪ ও ৪৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। ডেভিড বুনের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

খুব দ্রুত দলে নিজেকে ঠাঁই করে নেন। তিন নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে বেশ নির্ভরশীলতার পরিচয় দেন। মার্টিন ক্রো’র সাথে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে প্রধান ব্যাটিং চালিকাশক্তিতে পরিণত হন। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে জন রাইটের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে প্রথমবারের মতো ভারত সফরে যান। ১২ নভেম্বর, ১৯৮৮ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪৫ ও ১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ১৭২ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৮৯-৯০ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন সফররত ভারতের মুখোমুখি হন। ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৫০ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ১৯ ও ১৭০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/২৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। একটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। ইয়ান স্মিথের অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্র হলেও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

একই মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১৫ মার্চ, ১৯৯০ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ১৮ ও ৩৩* রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, দলীয় অধিনায়ক জন রাইটের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পায়।

১৯৯০ সালে জন রাইটের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড সফরে যান। ৭ জুন, ১৯৯০ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩৯ ও ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। মাইক অ্যাথার্টনের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৯০-৯১ মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ৩১ জানুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ খেলে ব্যক্তিগত সেরা ১৮৬ রান তুলেন। এ পর্যায়ে মার্টিন ক্রো’র সাথে ৪৭৭ রানের জুটি গড়ে টেস্টের ইতিহাসের যে-কোন জুটিতে তৎকালীন রেকর্ড স্থাপন করেন। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, দলীয় অধিনায়ক মার্টিন ক্রো’র অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১২২ ও ১০০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। দুই ইনিংসে আরও দুইটি শতক হাঁকালে একমাত্র নিউজিল্যান্ডীয় হিসেবে উপর্যুপরী তিন ইনিংসে শতক হাঁকান। তবে, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। ইয়ান স্মিথ ও অশঙ্কা গুরুসিনহা’র সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯১-৯২ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রাহাম গুচের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৪৩ ও ৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অ্যালেক স্টুয়ার্টের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর সুবাদে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মার্টিন ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে সফরে যান। ১ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরপর, দলীয় সংগ্রহ ১৭৫/১ থাকাকালীন ৩৯ রানে পৌঁছানোকালে রিটায়ার্ড হার্ট হন। খেলায় তিনি ৬৭* ও ৩৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। স্মর্তব্য যে, জিম্বাবুয়ে-নিউজিল্যান্ডের মধ্যে এটিই ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্ট ছিল।

১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে মার্টিন ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১২ নভেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১৪৩ ও ৪৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ২৬ নভেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে হোবার্টে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৩৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ৪৭ ও ১৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। মার্ক ওয়াহ’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২২২ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে নিজ দেশে কোর্টনি ওয়ালশের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ২ রান সংগ্রহসহ ০/৫০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ বোলিং কৃতিত্বে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩২২ রানে পরাভূত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

টেস্টগুলো থেকে ৪৪.২৭ গড়ে সাত শতক সহযোগে ২৯২২ রান পেয়েছেন। তন্মধ্যে, পাঁচটি শতরান ড্র হওয়া টেস্টগুলো থেকে আদায় করে নিয়েছিলেন। অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলো থেকে তাঁর দল মাত্র ছয়টিতে জয় পেয়েছিল। ১৯৯৫ সালে ক্রিকেট জগৎ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

Similar Posts