৩১ জুলাই, ১৯৭৫ তারিখে ট্রান্সভালের জোহানেসবার্গে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা প্রদর্শন করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
হোরস্কুল আলবার্টনে অধ্যয়ন করেছেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেয়ার পূর্বে অভ্যন্তরীণ ক্রিকেট খেলতেন। শুরুতে তাঁকে বোলার হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল ও নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিগণিত হন। পরবর্তীতে, নিজেকে যে-কোন অবস্থানে ব্যাটিংয়ের উপযোগী করে গড়ে তুলেন।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুম থেকে ২০১৪-১৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ইস্টার্নস ও গটেং; ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্ট, নর্দাম্পটনশায়ার ও ওরচেস্টারশায়ার এবং জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে ম্যাশোনাল্যান্ড ঈগলসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আফ্রিকা একাদশ, আইসিএল বিশ্ব একাদশ, চণ্ডীগড় লায়ন্স, ডলফিন্স, ডারহাম ক্রিকেট বোর্ড ও সাফোকের পক্ষে খেলেছেন। মিডিয়াম-পেসার হিসেবে গটেংয়ের পক্ষে মাঝে-মধ্যে বোলিং উদ্বোধনে নামতেন। তবে, বিস্ময়কর ব্যাটিংয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলা প্রদর্শনে অগ্রসর হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেয়ার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা পান। ২০০১ সালে ইস্টার্নস ছেড়ে গটেংয়ে চলে আসেন।
১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ২১ টেস্ট, ৮৮টি ওডিআই ও দুইটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২৭ জানুয়ারি, ১৯৯৯ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন।
২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৮ মার্চ, ২০০২ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ডিওয়াল্ড প্রিটোরিয়াস ও গ্রায়েম স্মিথের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ব্যাট হাতে নিয়ে ৭০ ও ০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, ০/৪৭ ও ০/৬ লাভ করেন। তবে, শেন ওয়ার্নের দূর্দান্ত অল-রাউন্ড সাফল্যে স্বাগতিক দল ৪ উইকেটের ব্যবধানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
মনপ্রাণ উজার করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যাত্রা শুরু করেন। তবে, মাত্র এক খেলায় অংশগ্রহণের পরই দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টির বাইরে চলে যান। অতঃপর, এপ্রিল, ২০০৩ সালে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনটি ওডিআইয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। ছন্দহীনতার কবলে পড়া হার্শেল গিবসের স্থলাভিষিক্ত হন ও গ্যারি কার্স্টেনের সাথে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন। বিশ্বের দ্রুততম বোলার ব্রেট লি’র বল মোকাবেলা করে ৪৬ রান তুলেন। এরফলে, শ্রীলঙ্কা গমনার্থে তাঁকে দলে ঠাঁই দেয়া হয়।
খেলা গড়াপেটার ঘটনায় হার্শেল গিবস জড়িয়ে পড়ে পর্দার অন্তরালে চলে গেলে কার্স্টেনের সাথে একত্রে খেলতে থাকেন। মুত্তিয়া মুরালিধরনের বল মোকাবেলা করে ৮১ রান তুলেন। ২০০৩ সালে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। এ পর্যায়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে মর্যাদা পান। শেষ মুহূর্তে তাঁকে দলে যুক্ত করা হয়। ঐ সিরিজে ১৬ উইকেট পেয়েছিলেন।
২১ আগস্ট, ২০০৩ তারিখে লিডসের হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৭০ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ০ ও ৯৯* রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৭৭ ও ২/৬৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। গ্যারি কার্স্টেনের অনবদ্য ব্যাটিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা ১৯১ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশগ্রহণকালীন আইসিসি’র আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে দুই টেস্টে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হন। ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কা গমনার্থে তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বাইরে রাখা হয়। বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ খেলার জন্যে তাঁকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০০৪-০৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ভারত সফরে যান। ২০ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন ও কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। ইনিংস উদ্বোধনে নামেন। সুযোগের সদ্ব্যবহারে তৎপর হন। নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেন। খেলায় তিনি ১৬৩ ও ২৬ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৯৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড কৃতিত্বে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই সফরের ২৮ নভেম্বর, ২০০৪ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭ ও ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৬৮ ও ০/২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। হরভজন সিংয়ের অসাধারণ বোলিংয়ের সুবাদে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
পরের মাসে ২০০৫ সালের আসরকে ঘিরে কেন্টের বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন। ওরচেস্টারশায়ারের পক্ষে এক মৌসুম খেলে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে না পারলেও কেন্টে নিজেকে মেলে ধরেন। ঐ বছর ওডিআই দলের প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। ২০০৬ সালে একদিনের ক্রিকেটে খেলার শেষদিকে স্মরণীয় বোলিং করেন। অ্যাডিলেডে ভিবি সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সমূহ পরাজয়ের দিকে ধাবিত দলকে নয় রানের নাটকীয় জয় এনে দেন।
নিজ দেশে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দলে যুক্ত ছিলেন। মার্চ, ২০০৬ সালে জোহানেসবার্গের শ্বাসরুদ্ধকর, অবিস্মরণীয় বিশ্বরেকর্ড জয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। এরপর, ঐ গ্রীষ্মের শেষদিকে দুই-টেস্টের গড়া সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। অক্টোবরে ভারতে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ আফ্রিকার ১৪-সদস্যের চূড়ান্ত দলে ঠাঁই পান।
২০০৬-০৭ মৌসুমে নিজ দেশে ইনজামাম-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২৬ জানুয়ারি, ২০০৭ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ১/২৯ ও ২/২৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, জ্যাক ক্যালিসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয়লাভ করলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। ৩১ বছর বয়সে ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।
২০০২ সালে সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যানুয়েলসের বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৯৮ সালে গুলিবিদ্ধ হন। বামহাতে আঘাত পেলেও গুরুতর আঘাত পাননি।
