|

অমর সিং

৪ ডিসেম্বর, ১৯১০ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের গুজরাতের রাজকোটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৩০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

আলফ্রেড হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৩১-৩২ মৌসুম থেকে ১৯৩৯-৪০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে পাতিয়ালার মহারাজা একাদশ, হিন্দু, নয়ানগর ও ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৩২ থেকে ১৯৩৬ সময়কালে ভারতের পক্ষে সাতটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ভারতের সর্বপ্রথম টেস্টে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৩২ সালে সি.কে. নায়ড়ু’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৫ জুন, ১৯৩২ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। দলের অন্য সকলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়।

ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে মোহাম্মদ নিসারকে নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বোলিং আক্রমণ পরিচালনা করেন। ওয়ালি হ্যামন্ড তাঁর বোলিং সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, তাঁর বলগুলো পিচে মৃত্যু সমতুল্য ছিল। ঐ টেস্টের প্রথম আধা ঘণ্টায় ভারত দল ইংল্যান্ডের টুটি চেপে ধরেছিল। ২/৭৫ ও ২/৮৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলায় তিনি ৪ উইকেট দখল করেন। চতুর্থ ইনিংসে ৫১ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলেন। এটিই ভারতের প্রথম টেস্ট অর্ধ-শতক ছিল। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। মোহাম্মদ নিসারের সাথে অবিস্মরণীয় নতুন বলের জুটি গড়েছিলেন। ঐ টেস্টে স্বাগতিকরা ১৫৮ রানে জয়লাভ করেছিল।

১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে মাদ্রাজ টেস্টে ৭/৮৬ দখল করেন। দীর্ঘ আঠারো বছর এটি ভারতের সেরা বোলিংয়ের মর্যাদা পায়। এছাড়াও, ১৯৩৬ সালে বিজিয়ানাগ্রামের মহারাজা’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৭ জুন, ১৯৩৬ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে সিরিজের প্রথম টেস্টে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। টসে পরাজিত হলে ভারত দল স্যার গাবি অ্যালেনের পাঁচ-উইকেট লাভের ফলে ১৪৭ রানে গুটিয়ে যায়। এর জবাবে ভারত দল বল হাতে নিয়ে দারুণ খেলে। বিশেষতঃ অমর সিংয়ের ক্রীড়াশৈলী দারুণ ছিল। হ্যারল্ড গিম্বলেট, মরিস টার্নবুল, আর্থার মিচেল, বব ওয়াট, মরিস লেল্যান্ড ও গাবি অ্যালেনকে তিনি বিদেয় করেন। ৬/৩৫ লাভ করে প্রতিপক্ষকে ১৩৪ রানে গুটিয়ে দেন। দ্বিতীয় ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করেন। পরবর্তী ১৭ বছর বিদেশের মাটিতে ভারতের যে-কোন বোলারের সেরা পরিসংখ্যান ছিল। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীরা মাত্র ৯৩ রানের ইনিংস খেললে ইংল্যান্ড দল ১০৭ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অবলীলাক্রমে অতিক্রম করে। স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর দল ৯ উইকেট পরাজিত হয়েছিল ও ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

ওল্ড ট্রাফোর্ডে পরবর্তী টেস্টে দলের সঙ্কটে এগিয়ে আসেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ভারত দলকে ড্র করাতে সক্ষম হন। ১৫ আগস্ট, ১৯৩৬ তারিখে ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব শেষ টেস্টে অংশ নেন। ৪৪ রান তুলে ভারতকে ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হওয়া থেকে রক্ষা করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/১০২ ও ০/২৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে বিজয়ী হয়।

১৯৩৬ সালের সফরে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে খেলাকালীন লেন হাটনকে হিমশিম খাওয়ান। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে মন্তব্য করেন যে, ‘অমর সিংয়ের ন্যায় সমসাময়িক কোন বোলারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’ পেশাদার ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে কোলনের পক্ষে খেলেন। প্রথম বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে এ ক্লাবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন ও পরবর্তী বছরগুলোয় বেশ জনপ্রিয়তা পান। এছাড়াও, বার্নলির পক্ষে খেলেছেন তিনি।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৮ গড়ে ৫০৬ উইকেট দখল করেছেন ও ২৪ গড়ে ৩৩৪৪ রান তুলেছেন। রঞ্জী ট্রফিতেও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে অংশ নেন। এ পর্যায়ের ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া ও নয়ানগরের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৫.৫৬ গড়ে ১০৫ উইকেট লাভ করেন। ১৯৩৭-৩৮ মৌসুমে লর্ড টেনিসনের নেতৃত্বাধীন দলের বিপক্ষে অনানুষ্ঠানিক টেস্টে সিরিজের ৫টিতে অংশ নিয়ে ১৬.৬৭ গড়ে ৩৬ উইকেট দখল করেন। ২৯ বছর বয়সে দীর্ঘ সময় ধরে সাঁতার কাটেন। পরবর্তীতে টাইফয়েডে আক্রান্ত না হলে তিনি হয়তোবা ঐ সময়ের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডারের মর্যাদা পেতেন। ২১ মে, ১৯৪০ তারিখে মাত্র ২৯ বছর ১৬৯ দিন বয়সে গুজরাতের জামনগরে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • |

    বব নিউসন

    ২ ডিসেম্বর, ১৯১০ তারিখে কেপ প্রভিন্সের সী পয়েন্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলিং উদ্বোধনে নামতেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৩০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯২৯-৩০ মৌসুম থেকে ১৯৪৯-৫০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে রোডেশিয়া ও ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব…

  • |

    রবিউল ইসলাম

    ২০ অক্টোবর, ১৯৮৬ তারিখে উপকূলীয় শহর সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ২০০০-এর দশকের পরবর্তী সময়ে স্বল্পসংখ্যক বাংলাদেশী পেস বোলারদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে তাঁর একনিষ্ঠ সুইং বলগুলো অগোচরে ছিল। শুধুমাত্র গণমাধ্যমে কিংবা…

  • | |

    চম্পকা রামানায়েকে

    ৮ জানুয়ারি, ১৯৬৫ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুম থেকে ২০০১-০২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে গল ক্রিকেট ক্লাব এবং তামিল ইউনিয়ন ও…

  • | |

    নরি কন্ট্রাক্টর

    ৭ মার্চ, ১৯৩৪ তারিখে গুজরাতের গোধরা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ইনিংস উদ্বোধনে নামতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। ভারত দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দাহুদ থেকে বোম্বে গমনকালে তাঁর মাতা অনুধাবন করেন যে, দ্রুত তিনি সন্তান প্রসব করবেন। রেলগাড়ী চালক কাকা জরুরীভিত্তিতে তাঁকে গোধরায় নামিয়ে দেন। সেখানেই নরি কন্ট্রাক্টরের জন্ম। নাসিকে শৈশবকাল…

  • | |

    ক্রিস কেয়ার্নস

    ১৩ জুন, ১৯৭০ তারিখে মার্লবোরার পিকটনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে সবিশেষ পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেয়ার পাশাপাশি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে ডানহাতে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে বিপজ্জ্বনক মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। তাঁর…

  • |

    তাসকিন আহমেদ

    ৩ এপ্রিল, ১৯৯৫ তারিখে ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে থাকেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী। কিশোর অবস্থাতেই সংবাদ শিরোনামে চলে আসেন মূলতঃ পেসের কারণে। এক পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় ঘণ্টায় ১৪৮ কিলোমিটার গতিবেগে বোলিং করে…