২০ জুন, ১৯৫৪ তারিখে কেপ প্রদেশের ল্যাঞ্জবানেগ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘লেগা’ কিংবা ‘ল্যাম্বি’ ডাকনামে পরিচিত অ্যালান ল্যাম্ব ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ওয়েনবার্গ বয়েজ হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৯৫ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নর্দাম্পটনশায়ার এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট ও ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। নর্দাম্পটনশায়ারের অগ্রযাত্রায় দারুণ ভূমিকা রেখেছেন। ব্যাট হাতে কিংবা মৌখিক বাদানুবাদে ভীতিহীন অবস্থায় একচোট নিতেন। ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স থেকে নর্দাম্পটনশায়ারে যুক্ত হন।
১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৭৯ টেস্ট ও ১২২টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮২ সালে নিজ দেশে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২ জুন, ১৯৮২ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনে প্রবেশ করেন। একই সফরের ১০ জুন, ১৯৮২ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ডেরেক প্রিঙ্গলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৯ ও ৩৭* রান সংগ্রহ করেছিলেন। কপিল দেবের অনিন্দ্যসুন্দর অল-ক্রীড়াশৈলী সত্ত্বেও স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৮০-এর দশক থেকে ইংল্যান্ডের পক্ষে নিয়মিতভাবে মাঝারিসারিতে খেলতে থাকেন। অদ্ভূত ধরনের খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করে গেছেন। পরিসংখ্যানগতভাবে তাঁর রান সংগ্রহ সাধারণমানের ছিল। ৩০-এর মাঝামাঝি গড়ে রান পেয়েছেন। রান সংগ্রহও একই ধরনের ছিল। কিন্তু, ঐ সময়ের দূর্দণ্ড প্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দারুণভাবে সফল ছিলেন। খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে ঘন গোঁফ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেসারদের মোকাবেলা করে ছয়টি শতরানের ইনিংস খেলেছেন। প্রত্যেকটিই অত্যন্ত দূর্লভ ধরনের ছিল। তন্মধ্যে, তিনটি শতক ১৯৮৪ সালে ‘ব্ল্যাকওয়াশ’ নামে পরিচিত ৫-০ ব্যবধানের সিরিজে পরাজিত ইংরেজ দলে থেকে করেছেন।
১৯৮৩ সালে নিজ দেশে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৫ আগস্ট, ১৯৮৩ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৬ রানে পৌঁছানোকালে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১০৭ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ২২ ও ১৩৭* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। নিক কুকের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ১৬৫ রানে জয় পেলে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৮৪ সালে নিজ দেশে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৩ আগস্ট, ১৯৮৪ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১০৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, সিদাথ ওয়েতিমুনি’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীতে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে তাঁর যোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে। তবে, ১৯৮৮ সালে ক্যারিবীয় দল ইংল্যান্ড সফরে আসলে তিনি আরও একটি শতক হাঁকান। অবশেষে ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে স্বপ্নীল সফরে অংশ নেন। কিংস্টন ও ব্রিজটাউনে শতক হাঁকান। এ সিরিজে ৫৫-এর অধিক গড়ে ৩৯০ রান তুলেন। এমনকি দুইবার ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখেন।
১৯৮৯ সালে নিজ দেশে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৮ জুন, ১৯৮৯ তারিখে হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১২৫ ও ৪ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে টেরি অল্ডারম্যানের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। টেরি অল্ডারম্যানের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে সফরকারীরা ২১০ রানে জয় পেলে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৯১ সালের গ্রীষ্মে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের পরবর্তী সফরে নিজেকে তিনি মেলে ধরতে পারেননি। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে গ্রাহাম গুচের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ১৩৯ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে পূর্বেকার সর্বোচ্চ রানের কৃতিত্বকে ছাঁপিয়ে যান। খেলায় তিনি ৩০ ও ১৪২ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে দীপক প্যাটেলের শিকারে পরিণত হন। তবে, অ্যালেক স্টুয়ার্টের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর সুবাদে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
১৯৯২ সালে নিজ দেশে জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৮ জুন, ১৯৯২ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩০ ও ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ওয়াসিম আকরামের দূর্দান্ত অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ২ উইকেটে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
এছাড়াও, ইংল্যান্ডের ওডিআই দলেরও গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মর্যাদা পেয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় ৬০ গড়ে প্রায় ৩০০ রান তুলেন। এছাড়াও, ১৯৮৩ ও ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিয়েছিলেন। তবে, ওডিআই খেলোয়াড়ী জীবনে সর্বাপেক্ষা স্মরণীয় অর্জন ছিল সিডনিতে। ব্রুস রিডের ৫ বল থেকে ১৮ রান তুলে এক বল বাকী থাকতেই দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন।
ইয়ান বোথামের সাথে আলাপচারিতামূলক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। ইমরান খানের বিপক্ষে ইয়ান বোথামের সাথে তিনিও ব্যর্থ শুনানীতে যোগ দিয়েছিলেন।
