২০ অক্টোবর, ১৯৬৬ তারিখে অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের ব্লোমফন্তেইন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
৬ ফুট ৪ ইঞ্চি (১.৯৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ‘হোয়াইট লাইটনিং’ ডাকনামে পরিচিতি পান। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ফ্রি স্টেট এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওয়ারউইকশায়ার ও ওরচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুম থেকে ২০০৩-০৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন।
১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ৭২ টেস্ট ও ১৬৪টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে দলের সাথে ভারত গমন করেন। ১০ নভেম্বর, ১৯৯১ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে বর্ণাঢ্যময় সূচনা ঘটান।
১৯৯২ সালে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ১৮ এপ্রিল, ১৯৯২ তারিখে বার্বাডোসের ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। পিটার কার্স্টেন, অ্যান্ড্রু হাডসন, অ্যাড্রিয়ান কুইপার, ডেভিড রিচার্ডসন, মার্ক রাশমেয়ার, মেরিক প্রিঙ্গল, রিচার্ড স্নেল, টারটিয়াস বস ও হান্সি ক্রোনিয়ে’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ২/৬৭ ও ৪/৭৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, উভয় ইনিংসে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। তবে, অপর অভিষেকধারী অ্যান্ড্রু হাডসনের অসাধারণ শতক সত্ত্বেও খেলায় সফরকারীরা ৫২ রানে পরাজিত হয়।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। মার্চ, ১৯৭০ সালের পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটি প্রথম টেস্ট খেলা ছিল। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৬৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রবীণ আম্রে’র অসাধারণ শতকে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ২ জানুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২/৫৮ ও ০/৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। জবাগল শ্রীনাথের অসাধারণ বোলিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। এ সিরিজে ২৯ রান সংগ্রহসহ ২০ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২৫ আগস্ট, ১৯৯৩ তারিখে মোরাতুয়ায় অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৫/৬৯ ও ১/৭৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র বীরোচিত ভূমিকায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিং করার সুযোগ পেলেও ১/১০৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। আলোকস্বল্পতা ও বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯৪ সালে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সদস্যরূপে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী ইংল্যান্ড সফরে যান। লর্ডস টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫/৭৪ লাভ করেন। এরফলে, লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে ঠাঁই করে নেন। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও দুই উইকেট কব্জা করে দলের ৩৬৫ রানের বিশাল বিজয়ে অবদান রাখেন।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক অ্যাথার্টনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ৩০ নভেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে জিএ হিকের প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২/৪৯ ও ২/৯৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ৯* রান সংগ্রহ করেছিলেন। জ্যাক রাসেলের অসাধারণ অল-রাউন্ড কৃতিত্বে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
এরপর, ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ৩২ রান সংগ্রহসহ ২/৫৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, বৃষ্টিবিঘ্নিত ও মন্দালোকের কারণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৭ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর প্রদর্শনসহ ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। তন্মধ্যে, শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসে এসটি জয়সুরিয়া’র প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ২০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলার তৃতীয় দিন প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে এ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছিলেন। এছাড়াও, নিজস্ব সহস্রতম প্রথম-শ্রেণীর উইকেটের সন্ধান পান। খেলায় তিনি ৩/৭৩ ও ৫/৫৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৮ সালে হান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৩ জুলাই, ১৯৯৮ তারিখে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪* ও ৭* রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/১০৯ ও ১/৫৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, অ্যাঙ্গাস ফ্রেজারের অপূর্ব বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের লর্ডস টেস্টে পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। ৫/৩২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ার ফলে দ্বিতীয়বারের মতো লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে তালিকাভুক্ত করার গৌরব অর্জন করেন। প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা দল ৩৬০ রানে অল-আউট হবার পর তিনি আরও একবার নিজের উপযোগিতা তুলে ধরেন ও বিধ্বংসী বোলিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। সবগুলো উইকেটই উইকেটের পিছনে দণ্ডায়মান মার্ক বাউচারের গ্লাভসে জমা পড়ে। খেলায় তাঁর দল খুব সহজে ১০ উইকেটে জয় পায়।
২০০০-০১ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৭ নভেম্বর, ২০০০ তারিখে ব্লুমফন্তেইনে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে শেন ও’কনরের তৃতীয় উইকেট লাভ করে টেস্টে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৩/৬৯ ও ৩/৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, জ্যাক ক্যালিস ও মাখায়া এনটিনি’র অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০০১-০২ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০২ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/৭২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৩* ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩৬০ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
২০১৯ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। এক পর্যায়ে কেন্টের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার অন্তর্বর্তীকালীন বোলিং কোচ হিসেবে মনোনীত হন। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ার বোলিং কোচের দায়িত্বে ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। টিনা ডোনাল্ড নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির হান্নাহ ডোনাল্ড নাম্নী কন্যা ও অলিভার ডোনাল্ড নামীয় সন্তান রয়েছে।