২৪ মে, ১৯৪২ তারিখে ট্রান্সভালের জোহানেসবার্গে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাশাপাশি, দলের প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হতেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
বিভিন্ন কারণে নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। প্রায় পাঁচ দশক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে হৃৎপিণ্ডতুল্য ভূমিকার সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের দলনায়ক ছিলেন। সবগুলোতেই সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে দলকে জয় এনে দেন। প্রশাসক হিসেবেও দারুণ ভূমিকা রাখেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যবাদ যুগে অবস্থান করে প্রথমবারের মতো বিদ্রোহী দলের সফর আয়োজন করেন। কিন্তু, পরবর্তীতে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেট বোর্ড একীকরণে নেতৃত্ব দিয়ে বিপর্যয় ডেকে আনেন।
ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৫৯-৬০ মৌসুম থেকে ১৯৭৩-৭৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে ট্রান্সভালের সদস্যরূপে সফররত অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে সেরা মুহূর্তের সাথে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৫ রান সংগ্রহের পাশাপাশি পাঁচটি ক্যাচ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম পরাজয়ের সাথে সফরকারীদেরকে যুক্ত করেন।
১৯৬৫ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ১২ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ছয়টি অর্ধ-শতক সহযোগে ৩২.৩৩ গড়ে ৬৭৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে পিটার ফন ডার মারউই’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২২ জুলাই, ১৯৬৫ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। রিচার্ড ডামব্রিল ও জ্যাকি বটেনের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ৪ ও ৩৭ রান সংগ্রহ করে উভয় ক্ষেত্রে ফ্রেড টিটমাসের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত নিজস্ব দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। গুরুত্বপূর্ণ অর্ধ-শতক হাঁকিয়ে দলের বিজয় নিশ্চিত করেন। এরপর, ওভালে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টের আরও একটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে চার টেস্টে নেতৃত্ব দেন। এ জয়গুলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার নিষেধাজ্ঞার পূর্ববর্তী সিরিজ ছিল। চার নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নামতেন। পোর্ট এলিজাবেথের ক্রুসেডার্স গ্রাউন্ডে প্যাট ট্রিমবর্নের বল অ্যালান কনোলি’র ক্যাচ মুঠোয় পুড়ে স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। অসাধারণ প্রতিভাবান দক্ষিণ আফ্রিকান দল ৪-০ ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়া দলকে ধবল ধোলাই করে। এ সিরিজে সাধারণমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলেও ব্যক্তিগত সেরা ৭৩ রান তুলে নিজের বেইল ফেলে দেন। এছাড়াও, সিরিজে চারবারই টস জয়লাভ করেন।
১৯৬৯-৭০ মৌসুমে নিজ দেশে বিল লরি’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২২ জানুয়ারি, ১৯৭০ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। স্প্রিংবককে নেতৃত্ব দিয়ে ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৩৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৫৭ ও ১৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ১৭০ রানে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ৫ মার্চ, ১৯৭০ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৭০ রান অতিক্রম করেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ১৭ ও ৭৩ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৩২৩ রানে জয় পেলে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
টেস্টগুলো থেকে ৩২.৩৩ গড়ে ৬৭৯ রান তুলেন। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনের দিকে ধাবিত হন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রত্যাবর্তন ও পুণরুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যূষিত শহরতলীতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ক্রীড়া প্রধান স্টিভ টিশিটকে সাথে নিয়ে লন্ডন সফরে যান ও আইসিসিতে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তি পর্যবেক্ষণ করেন। ২০০০ সালে ইউসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিজেকে জড়ান।
