Skip to content

৬ জুন, ১৯৮৮ তারিখে মহারাষ্ট্রের অশ্বি-কেডি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (১.৬৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। বাবুরাও রাহানে ও সুজাত রাহানে দম্পতির সন্তান। শশাঙ্ক রাহানে নামীয় ভ্রাতা ও অপূর্ব রাহানে নাম্নী ভগ্নী রয়েছে। ২০০৭-০৮ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মুম্বই ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, দিল্লি ক্যাপিটালস, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, রাজস্থান রয়্যালস ও রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসের পক্ষে খেলেছেন।

প্রতিভা, ধারাবাহিকতা রক্ষা ও আক্রমণাত্মক ধাঁচের অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়ে অগ্রসর হয়েছেন। ২০০৭ সালে মুম্বইয়ের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। ৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত করাচী আরবান বনাম মুম্বইয়ের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। এরপর থেকে মুম্বইয়ের পক্ষে সকল স্তরের ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় নিজস্ব দ্বিতীয় মৌসুমে দারুণ খেলা উপহার দেন। ১০৮৯ রান তুলে মুম্বই দলকে ৩৮তম রঞ্জী ট্রফির শিরোপা বিজয়ে অসামান্য ভূমিকা রাখেন। স্বল্পসংখ্যক খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে রঞ্জী ট্রফির এক মৌসুমে সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন।

রান তুলতে বেশ মজা পান। অস্ট্রেলিয়ায় এমার্জিং প্লেয়ার্স ট্রফিতে দুইটি শতক হাঁকিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে, ২০১১ সালে ভারতের ওডিআই দলে তাঁর ঠাঁই হয়। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে প্রতিভা ও দর্শনীয় ক্রীড়াশৈলীর উভয়টিই প্রদর্শনে সচেষ্ট ছিলেন।

২০১১ সাল থেকে ভারতের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ঐ বছর ভারত দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৩১ আগস্ট, ২০১১ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০আইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। একই সফরের ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১ তারিখে চেস্টার-লি-স্ট্রিটে ওডিআইয়ে প্রথম খেলেন।

২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অংশ নেয়ার পূর্বে বেশ কয়েকবার ভারতের টেস্ট দলের সদস্যরূপে বিদেশ গমনের সুযোগ পেয়েছিলেন। ২০১২-১৩ মৌসুমে নিজ দেশে শেন ওয়াটসনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২২ মার্চ, ২০১৩ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৭ ও ১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রবীন্দ্র জাদেজা’র অসামান্য অল-রাউন্ড নৈপুণ্যে ৬ উইকেটে জয় পেলে স্বাগতিকরা ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।

অভিষেক খেলায় তেমন ভালোমানের ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে না পারলেও নিজস্ব তৃতীয় টেস্টে দারুণ খেলেন। ডারবানে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টের উভয় ইনিংসেই অর্ধ-শতরানের সন্ধান পেয়েছিলেন। নিজ দেশের বাইরে প্রায়শঃই দলের সঙ্কটকালীন মুহূর্তে নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টেস্ট শতক হাঁকান।

২০১৩-১৪ মৌসুমে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৪৭ রান অতিক্রম করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে এ সফলতাকে আরও ছাঁপিয়ে যান। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৫১ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৫১* ও ৯৬ রান সংগ্রহ করেন। তবে, ডেল স্টেইনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয় পায়।

একই মৌসুমে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৯৬ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পেয়ে ১১৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অসাধারণ ত্রি-শতক স্বত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

২০১৪ সালে লর্ডসে দূর্দান্ত শতরানের ইনিংস খেলেন ও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বেশ সাড়া জাগান। এরফলে, ২৮ বছরের মধ্যে এ মাঠে ভারত দল প্রথমবারের টেস্টে জয়লাভে সক্ষম হয়। ডাউন আন্ডার সফরে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩৯৯ রান তুলেন। এরপর থেকেই সাদা পোশাক নিয়ে খেলতে নেমে তাঁকে আর কোন প্রশ্নবিদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়নি।

অবশ্য ওডিআইয়ে একই ধারাবাহিকতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। তাসত্ত্বেও, ২০১৪ সালে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। উত্থান-পতনে ঘেরা ৫০-ওভারের খেলায় অংশ নেয়া সত্ত্বেও মাঝে-মধ্যেই দারুণ খেলতেন। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৯ রানের ইনিংসটি বেশ দর্শনীয় ছিল।

২০১৫ সালে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ২০ আগস্ট, ২০১৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া কলম্বোর পিএসএসে কুমার সাঙ্গাকারা’র সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন। ৪ ও ১২৬ রান তুলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, কেএল রাহুলের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীতে সফরকারীরা ২৭৮ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজ দেশে আরও একবার বড় ধরনের ইনিংস খেলেছিলেন। কিউইদের বিপক্ষে ১৮৮ রানের ব্যক্তিগত সেরা টেস্ট ইনিংস খেলেন। এরপর থেকে ছন্দহীনতার কবলে পড়লেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন। ঐ মৌসুমে নিজ দেশে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৮ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে ইন্দোরে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ২ রানে পৌঁছানোকালে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৪৭ রান অতিক্রম করেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩২১ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ে সফরকে ঘিরে ওডিআই ও টি২০আই দলে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫-১৬ মৌসুমে নিজ দেশে হাশিম আমলা’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১০৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ১২৭ ও ১০০* রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তাঁর জোড়া শতকের বদৌলতে স্বাগতিকরা ৩৩৭ রানে জয়লাভ করলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

মার্চ, ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টের পূর্বে নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি আঘাতের কবলে পড়লে তিনি দলকে নেতৃত্ব দেন। ঐ খেলায় ভারত দল আট উইকেটে জয় পায় ও বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি করায়ত্ত্ব করে।

একই বছর বিরাট কোহলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ৩ আগস্ট, ২০১৭ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৩২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, পাঁচটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রবীন্দ্র জাদেজা’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৫৩ রানে জয়ে পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

২০২০-২১ মৌসুমে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফর করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি’র অনুপস্থিতিতে এ টেস্টে সামনে থেকে দলকে পরিচালনায় অগ্রসর হন। ১১২ ও ২৭* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর কারণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয়লাভ করে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

২০২৩ সালে রোহিত শর্মা’র নেতৃত্বে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ২০ জুলাই, ২০২৩ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে।

ইন্ডিয়ান টি২০ লীগে শুরুতে মুম্বই দলের পক্ষে খেলেন। তবে, প্রকৃত সফলতা আসতে শুরু করে রাজস্থানের পক্ষে খেলে। শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে অংশ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে রান তুলতে থাকেন। উদ্বোধনী জুটিতে অনেক আগ্রাসী ব্যাটসম্যানের প্রতিচিত্র ছিলেন। ২০১৬ সালের আসরে পুনে কর্তৃপক্ষ তাঁকে নিলাম থেকে কিনে নেয়। দুই বছর পর নির্বাসন থেকে রাজস্থান দল লীগে ফিরে আসার পর আরও একবার দলটিতে খেলেন। স্টিভেন স্মিথের পরিবর্তে দলের অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। ২০১৯ সালের নিলামে দিল্লি দলের সাথে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।

২০১৬ সালে অর্জুন পদকে ভূষিত হন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ২০১৪ সালে রাধিকা ধোপাভকর নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। ৫ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখে এ দম্পতির এক কন্যা জন্মগ্রহণ করে।