| | |

অজয় জাদেজা

১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ তারিখে গুজরাতের জামনগর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

১৯৮৮-৮৯ মৌসুম থেকে ২০১৩-১৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লি, হরিয়ানা এবং জম্মু ও কাশ্মীর দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কপিল দেবের পর হরিয়াণার সেরা ক্রিকেটারের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। রঞ্জী ও দিলীপ ট্রফিতে তেজস্বী ক্রিকেটারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ওডিআইয়ে দূর্দমনীয় স্ট্রোক খেলতেন। এছাড়াও, কার্যকর মিডিয়াম-পেসার ও দেশের অন্যতম সেরা ফিল্ডাররূপে চিহ্নিত হয়েছিলেন। দলের সঙ্কটময় মুহূর্তে অনেকবার আশার আলো জাগান ও নিচেরসারিতে ভিত্তি আনেন।

১৯৯২ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ১৫ টেস্ট ও ১৯৬টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ভারত দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা পান। এছাড়াও, এ সময়ে ভারতের সেরা ফিল্ডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে ম্যাককেতে অনুষ্ঠিত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে প্রবেশ করেন।

একই বছরের শেষদিকে ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। প্রবীণ আম্রে’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে মাত্র ৩ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, প্রবীণ আম্রে’র অভিষেক শতকের বদৌলতে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্টে অংশ নেন। ঐ মৌসুমে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৮ অক্টোবর, ১৯৯৫ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৪৩ রান অতিক্রম করেন। এরপর, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৫৯ রান অতিক্রম করে সাফল্যের পুণরাবৃত্তি ঘটান। খেলায় তিনি ৫৯ ও ৭৩ রান সংগ্রহ করেন। ঐ টেস্টে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১০ ও ২২ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সায়মন ডৌলের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৪ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে যায়।

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রবিন সিংয়ের সাথে জুটি গড়ে কীর্তি স্থাপন করেন। ১৯৯৭ সালে কলম্বোয় মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের সাথে ২২৩ রানের জুটি গড়েন। এছাড়াও, ব্যাঙ্গালোরে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ২৫ বলে ৪৫ রান তুলে ক্রিকেট বীরে পরিণত হন। পাশাপাশি, ১৯৯৬ সালে টাইটান কাপের চূড়ান্ত খেলায় বলপ্রতি ৪৩ রান তুলেন।

নিজস্ব দ্বিতীয় খেলায় অ্যালান বর্ডারের অবিশ্বাস্য ক্যাচ মুঠোয় পুড়েছিলেন। দারুণ সব কীর্তিগাঁথা স্থাপন করলেও টেস্ট দলে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। দলের সহঃঅধিনায়কের দায়িত্বে থেকে অবিবেচকের ন্যায় বিদেয়ের পর প্যাভিলিয়নমূখী হবার সময়ও তাঁর মাঝে হাসির রেখা দেখা যায়।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে হান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০০ তারিখে মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১২ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তবে, দলনায়ক শচীন তেন্ডুলকরের অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও স্বাগতিকরা ৪ উইকেটে পরাজয়বরণ করে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল।

২০০০ সালে সিবিআই প্রতিবেদনে পাতানো খেলায় অংশগ্রহণে তাঁর জড়িয়ে পড়ার কাহিনী প্রকাশিত হয়। ৫ বছরের জন্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে তাঁর সকল ক্রিকেটীয় অর্জন ম্লান হয়ে পড়ে ও কার্যতঃ আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি ঘটে। অবশ্য ২০০৩ সালে দিল্লি হাই কোর্ট থেকে খেলা গড়াপেটার অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়া হয়। তাসত্ত্বেও বেশ জনপ্রিয় ক্রিকেটার ছিলেন। শেষেরদিকের ওভারগুলোয় দ্রুতলয়ে বড় ধরনের রান সংগ্রহে খ্যাতি পান।

ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে আসার পূর্বে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে খেলা বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, মডেল ও চলচ্চিত্র জগতের দিকে ধাবিত হন। ২০০৯ সালে ‘পল পল দিল কি সাত’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়াও, ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘খেল’ চলচ্চিত্রে সানি দেওল ও সুনীল শেঠী’র সাথে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অংশ নেন। ২০০৪ সালে দিল্লির সফলতায় নিজেকে জড়ান। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত রাজস্থানের অধিনায়ক/কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে ৪২ বছর বয়সে এসেও হরিয়াণার পক্ষে কয়েকটি খেলায় অংশ নেন। তবে সীমিত আকারের সাফল্য পান। পরবর্তীতে, কোচিং ও ধারাভাষ্যকর্মের সাথে জড়ান।

Similar Posts

  • | |

    ডিন এলগার

    ১১ জুন, ১৯৮৭ তারিখে অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের ওয়েলকম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বামহাতে ব্যাটিং করে থাকেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি (১.৭৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটিয়ে থাকেন। ২০০৫ সালে ফ্রি স্টেটের পক্ষে…

  • | |

    স্টিভ ওয়াহ

    ২ জুন, ১৯৬৫ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ক্যান্টারবারিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৯ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ১৯৮৪-৮৫ মৌসুম থেকে ২০০৩-০৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…

  • |

    হার্দিক পাণ্ড্য

    ১১ অক্টোবর, ১৯৯৩ তারিখে গুজরাতের চৌরিয়াশি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিংয়ে সবিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৬ ফুট ১ ইঞ্চি (১.৮৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। হিমাংশু পাণ্ড্য ও মালিনী পাণ্ড্য দম্পতির সন্তান। জন্মের পর থেকেই দারিদ্র্যতার…

  • | | |

    নীল হার্ভে

    ৮ অক্টোবর, ১৯২৮ তারিখে ভিক্টোরিয়ার ফিটজরয় এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১.৭২ মিটার উচ্চতার অধিকারী। পরিবারের ছয় পুত্র সন্তানের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন। জ্যেষ্ঠ তিন ভ্রাতা ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে অংশ নিতেন। তন্মধ্যে, একজন মার্ভ…

  • | | |

    জর্জ থম্পসন

    ২৭ অক্টোবর, ১৮৭৭ তারিখে নর্দাম্পটনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও পেশাদার ক্রিকেটার, আম্পায়ার এবং কোচ ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৩ বছর বয়সে ওয়েলিংবোরা স্কুলের প্রথম একাদশে খেলেন। ১৮৯৫ সালে নর্দাম্পটনশায়ারের পক্ষে প্রথমবারের মতো খেলায় অংশ নেন। পরের বছর থেকে স্বরূপ…

  • |

    সিড ও’লিন

    ৫ মে, ১৯২৭ তারিখে কেপ প্রভিন্সের অটশুর্ন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। এছাড়াও, বামহাতে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ১৯৬০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। জন্মসনদে তাঁকে সিডনি ও’লিনস্কি নামে পরিচিতি ঘটানো হয়েছিল। ১৯৪৫-৪৬ মৌসুম থেকে ১৯৬৫-৬৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ…