১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৫ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। তাসত্ত্বেও, দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে নিয়েও যথেষ্ট ভূমিকা রেখে গেছেন। পাশাপাশি, পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

পাকিস্তানের কিংবদন্তীতুল্য স্পিন যাদুকর। অগণিত ব্যাটসম্যানের রহস্যের পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। সর্বোপরি, ১৯৮০-এর দশকে লেগ-স্পিনের বর্ণাঢ্যময় শিল্পকলাকে জাগ্রত করেছেন। পাকিস্তানের স্পিন যাদুকর হিসেবে নৃত্যের তালে তালে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বলা হয়ে থাকে যে, লেগ-স্পিনের লুক্কায়িত শিল্পের পুণরুত্থানে স্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। রহস্যের বেড়াজালে নিজেকে আবদ্ধ রাখতেন। ফলে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের কাছেও দূর্বোধ্য ছিলেন।

১৯৭০-এর দশকের শেষদিক থেকে ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত সময়কালে অপ্রচলিত হয়ে পড়া রিস্ট-স্পিনকে পুণরায় ফিরিয়ে আনেন। এ পর্যায়ে তিনি স্বকীয় সত্ত্বা বজায় রেখেছিলেন। ফাস্ট বোলারদের মেজাজের সাথে পাল্লা দিয়ে রহস্যে ঘেরা শিল্প তুলে ধরতেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মানসিকতা নিয়ে কার্যকর বোলিং পাকিস্তানের অনেকগুলো জয়ে অবদান রেখে গেছেন। ১৯৮০-এর দশকে প্রত্যেক বিদ্যালয় বালকই তাঁর বোলিং ভঙ্গীমাকে অনুসরণ করতো। পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রী কোণ থেকে স্ট্যাম্প বরাবর বোলিং করতেন। সর্বদাই আক্রমণাত্মক বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন।

তাঁর বোলিংয়ের ধরন বেশ বিস্ময়কর ছিল। ব্যাটসম্যানের দৃষ্টিগ্রাহ্য হবার পূর্বে বেশ কয়েকবার বলের ধরন বদলাতেন। বৈচিত্র্যতা আনয়ণে সফলতা পেয়েছেন। বলা হয়ে থাকে যে, ওভারের ছয়টি ডেলিভারিই ভিন্নতর ছিল। অ্যান্ডি রবার্টসের বাউন্সারের ন্যায় তিনি দুইটি ভিন্ন গুগলি বোলিং করতেন। প্রায়শঃই ফ্লিপার ছুড়তেন। গুগলি, ফ্লিপার, লেগ-ব্রেক ও টপ স্পিনে প্রভূত্ব দেখিয়েছেন। বলে ভিন্নতা আনয়ণে অধিক সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। একবার রাহুল ভট্টাচার্য্যকে বলেছিলেন যে, ‘আমি একই বলকে দশটি ভিন্ন পন্থায় বোলিং করতে পারি। দশবার লেগ-ব্রেক। দশবার গুগলি। দশবার ফ্লিপার।’

১৯৭৫-৭৬ মৌসুম থেকে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, লাহোর ও পাঞ্জাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সাধারণ পরিবারের সন্তান ছিলেন। প্রচলিত রয়েছে যে, লাহোরের সব্জি বিক্রেতা হিসেবে তাঁর সন্ধান পান ও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁকে যুক্ত করান। এরপরই কেবল টেস্ট দলে ঠাঁই পান। অনেকটা রাজকীয়ভাবে হাবিব ব্যাংক লিমিটেডের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। এছাড়াও লাহোরের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৭৫-৭৫ মৌসুমে অভিষেক খেলায় পাঁচ-উইকেট লাভ করেছিলেন। সিকান্দার আলী ভুট্টো কাপে ৬/৬৭ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেডকে গুড়িয়ে দেন।

পরের খেলায় লাহোর ‘সি’ দলের সদস্যরূপে বাহাওয়ালপুরের বিপক্ষে ৬/১৭ নিয়ে ৯৭ রানে গুটিয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন। ঐ মৌসুমে ৮ খেলা থেকে ১৭.২৯ গড়ে ৩১ উইকেট পান। পরের মৌসুমে ১৬.৪৭ গড়ে আরও ৬৭ উইকেট দখল করেন। এ পর্যায়ে এনডব্লিউএফপি দলের বিপক্ষে ৬/২৩ ও ৫/৩১ নিয়ে প্রথমবারের মতো দশ উইকেট লাভ করেন। তাঁকে আর থামানো যায়নি। পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় দলের সদস্য থেকে ৮/২৯ ও ৪/৮৬ লাভ করেন। একমাস পর ওয়াসিম বারি’র নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে টেস্টে প্রথম খেলেন। নিজ শহরের দলে থেকে অনেকগুলো উইকেট দখল করেছিলেন। ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হন ও এক পর্যায়ে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষমতা দেখান।

১৯৭৭ থেকে ১৯৯৩ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৬৭ টেস্ট ও ১০৪টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক ব্রিয়ার্লি’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭৭ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি মাত্র ১১ রান সংগ্রহ করেন ও আট-বল নিয়ে গড়া ৩২.৭ ওভারে বব উইলিসের একমাত্র উইকেট ইকবাল কাশিম তালুবন্দী করেছিলেন। ঐ টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

তাসত্ত্বেও পরের খেলায় তাঁকে রাখা হয়। উল্লেখযোগ্য সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৭৮ সালে হায়দ্রাবাদে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬/৪৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এরফলে, প্রতিপক্ষের ইনিংস মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে যায়। জাভেদ মিয়াদাঁদের পর দলের পঞ্চম বোলার হিসেবে ওয়াসিম বারি তাঁকে বোলিংয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন। ব্রায়ান রোজকে পরিস্কার বোল্ড এবং ডেরেক র‍্যান্ডল ও গ্রাহাম রূপকে ফ্লাইটে পর্যদুস্ত করেন। আবারও খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়। তবে, ইংরেজদেরকে প্রিয় লক্ষ্যবস্তুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন।

১৯৮২ সালে ইমরান খানের অধিনায়কত্বে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পুণরুত্থান ঘটান। তিন টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১০ উইকেট পান। কিন্তু, এ পরিসংখ্যানে গল্পের অর্ধেক ব্যক্ত হয়। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানেরা তাঁকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকে। তাঁর গুগলির কাছে নিজেদেরকে ব্যাটিংয়ে শিক্ষানবিশ হিসেবে পরিণত করে তুলেন।

ঐ বছরের শেষদিকে ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে নিজ দেশে কিম হিউজের নেতৃত্বাধীন অজি দল পাকিস্তান সফরে আসে। পুরো সিরিজে অপূর্ব খেলেন। ফয়সালাবাদে ৫০ ওভারে ৭/১৪২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে সফরকারী অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করতে বিরাট ভূমিকা রাখেন।

একই সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১৪ অক্টোবর, ১৯৮২ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ২/৮৬ ও ২/১০২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ইমরান খানের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পায়। প্রতিপক্ষকে একাই কাবু করে ফেলেন ও ঐ সিরিজে পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে জয়লাভে সহায়তা করেন। ৩০ রান সংগ্রহসহ ২২ উইকেট লাভ করে জিওফ লসনের সাথে যৌথভাবে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে প্রথম পাকিস্তানী বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন।

১৯৮৩ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত প্রুডেন্সিয়াল বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণভাবে ওডিআই অভিষেক হয়। এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় চার উইকেট লাভ করলেও তাঁর দল পরাভূত হয়েছিল। খেলায় তিনি ১২-৪-২১-৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ ব্যাট হাতে নিয়ে ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন। তন্মধ্যে, এ ইনিংসটি দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল। পাকিস্তান দল পরাজিত হলেও তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন। পাকিস্তান বোর্ডের সাথে বাদানুবাদের খেসারত গুণতে হয় ও ভারত সফর করা থেকে বঞ্চিত হন। তিনি এক পর্যায়ে গৃহ নির্মাণের জন্যে অর্থ ধার নিতে চেয়েছিলেন। বোর্ড থেকে সতর্কতা পত্র পান। এতে ‘নিজ স্বার্থের চেয়ে ক্রিকেটের দিকে অধিক মনোনিবেশের’ কথা ব্যক্ত করা হয়। পরবর্তীতে, ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরতি সফরে যান।

১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৩ তারিখে মেলবোর্নে বক্সিং ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪৫ ও ১২ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/১৬৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। গ্রাহাম ইয়ালপের অসাধারণ দ্বি-শতক সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

একই মৌসুমে নিজে দেশে বব উইলিসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ঐ টেস্টে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৫/৭৪ ও ৩/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ৪০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কারণে পাকিস্তান দল নাটকীয়ভাবে তিন উইকেটে জয়লাভ করেছিল। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এরফলে, নিজ দেশে তেরোবার প্রচেষ্টায় প্রথম ইংল্যান্ডকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৮৪ সালের বেনসন এন্ড হেজেস বিশ্ব সিরিজ প্রতিযোগিতায় পাঁচ খেলা থেকে ১৫ উইকেট দখল করেছিলেন। তন্মধ্যে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ-উইকেট লাভ করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। প্রত্যেক খেলা থেকেই কমপক্ষে তিন উইকেট লাভ করতেন ও ২০-এর কম রান খরচে উইকেট পেতেন।

১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে নিজ দেশে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১০ ডিসেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল ঐ টেস্টে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত ১ ও দলীয় ২১০/৬ সংগ্রহ থাকাকালে আঘাতের কবলে পড়ে মাঠ ত্যাগ করেন। এরপর, দলের সংগ্রহ ৩১৯/৯ থাকাকালে পুণরায় মাঠে ফিরে আসেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সেলিম মালিকের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

১৯৮৭ সালে ওভালে এবং ঐ বছরের শেষদিকে নিজ দেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টেস্ট থেকে ৩০ উইকেট দখল করেছিলেন। এরজন্যে তাঁকে ১০১ রান খরচ করতে হয়েছিল। ইমরান খানের ১১৬ রান খরচায় ১৪ উইকেট লাভের পর এটি দ্বিতীয় সেরা হিসেবে পরিগণিত হয়। তন্মধ্যে, লাহোরের নিজ শহরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ব্যক্তিগত সেরা ৯/৫৬ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। এটিই যে-কোন পাকিস্তানী ক্রিকেটারের সেরা বোলিং পরিসংখ্যান হিসেবে চিত্রিত হয়ে পড়ে। ওভাল টেস্টে দশ-উইকেট দখল করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলের সিরিজ বিজয় নিশ্চিত করেন। তিন মাস পর পাকিস্তানের মাটিতে একই দলের বিপক্ষেও সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ইমরান খানের খেলোয়াড়ী জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলেছিলেন। স্বল্প কয়েকজন সেরাদের অন্যতম হিসেবে তাঁকে ব্যক্তি ও বোলার হিসেবে পেয়েছেন।

বিশ্বের সর্বত্র ব্যাটসম্যানদের উপর ছড়ি ঘুরালেও খুব কম সময়ই ভারতের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন। ব্যাপক অর্থেই ব্যাটসম্যানদের কাছে তেমন সমীহের পাত্রে পরিণত হতে পারেননি। এমনকি নিজের স্বর্ণালী সময়েও তা পারেননি। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে প্রভাব বিস্তার করতে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ঐ সময়ের তরুণ শচীন তেন্ডুলকর প্রস্তুতিমূলক খেলায় চার ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন ও জ্যেষ্ঠদের মধ্যে কপিল দেব তাঁর বল থেকে সফলতা পেয়েছিলেন। নভেম্বর, ১৯৮৯ সালে জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট শুরুর পূর্বে সফররত ভারতীয় একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশ নেন। ১৬ বছর বয়সী শচীন তেন্ডুলকর তাঁর বল থেকে চারটি ছক্কা মারেন। পরবর্তীতে, ঐদিনই তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেন যে, তিনি ভবিষ্যতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করবেন।

১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে নিজ দেশে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ৭ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৫/৪৪ ও ১/১০২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অরবিন্দ ডি সিলভা’র অসাধারণ শতক সত্ত্বেও স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ বিজয়ে প্রথম চার টেস্টে বোলিংয়ের কার্যকরীভাব প্রকাশ করতে না পারায় সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে বাদ পড়ে যান। ইকবাল কাশিম ও তৌসিফ আহমেদ – এ দু’জন অর্থোডক্স স্পিনার বেশ প্রভাব ফেলে পাকিস্তানকে জয় এনে দেন।

৪ মার্চ, ১৯৮৭ তারিখে মোতেরার গুজরাত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে খেলাকালীন ১৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ভারতের প্রথম ইনিংসে কিরণ মোরেকে বিদেয় করে নিজস্ব প্রথম উইকেট লাভ করে এ সাফল্য পান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।

খেলায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে কোন প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। প্রায়শঃই ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মনোভাব ফুটে উঠেছে। কয়েকটি টেস্ট ও একটি ওডিআইয়ে দারুণ খেলেছিলেন। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় কোর্টনি ওয়ালশের শেষ ওভার থেকে ১৬ রান আদায় করে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে পর্দার অন্তরালে চলে যেতে থাকেন। তাসত্ত্বেও, ১৯৯০-এর দশকের সূচনালগ্নে উদীয়মান মুশতাক আহমেদের সাথে খেলেছেন।

১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক গ্যাটিংয়ের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৭ তারিখে সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৫/৮৮ ও ৫/৯৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৬১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, ১৩৭ রান সংগ্রহসহ ৩০ উইকেট দখল করে জন এম্বুরি’র সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬/১৬০ ও ১/২৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করালেও ব্যাট হাতে তাঁকে মাঠে নামতে হয়নি। তবে, জাভেদ মিয়াঁদাদের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় শেষ হয়।

১৯৯০-৯১ মৌসুমে নিজ দেশে ডেসমন্ড হেইন্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯০ তারিখে নিজ শহরের লাহোরের মাঠে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১/৭৫ ও ০/১৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ১ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, কার্ল হুপারের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে শারজায় অনুষ্ঠিত পেপসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার জন্যে বিস্ময়করভাবে আমন্ত্রণ বার্তা পান। ২ নভেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে শারজায় সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক উইকেট লাভ করেন। তবে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজস্ব অষ্টম ওভারে পায়ের গোড়ালীতে আঘাত পান। এরপর, আর তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়নি।

দৃষ্টিনন্দন বোলারে পরিণত হলেও নিজেকে কখনো সফলতম অধিনায়ক হিসেবে পরিচিতি ঘটাতে পারেননি। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুম থেকে ১৯৮৮-৮৯ মৌসুম পর্যন্ত পাঁচ টেস্টে পাকিস্তান দলকে পরিচালনা করেন। তন্মধ্যে, চার টেস্টে তাঁর দল পরাজিত হয়েছিল। ১৯৮৮ সালের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ও ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অধিনায়কত্ব করেন। তৎকালীন ক্রিকেট জগতে নবীনতম দল বাংলাদেশের বিপক্ষে একবার দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জয় পেলেও ভারতের কাছে পরাজিত হয়।

২ নভেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের চার বছর পর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ফিরে আসেন ও পূর্বের ন্যায় যাদুকরী খেলা উপহার দিতে থাকেন। এরপর লাহোরভিত্তিক গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের কাছাকাছি ব্যক্তিগত পর্যায়ে ক্রিকেট একাডেমি পরিচালনায় অগ্রসর হন।

সব মিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে ৩২.৮০ গড়ে ২৩৬ উইকেট দখল করেছেন। তন্মধ্যে, পনেরোবার পাঁচ-উইকেট ও পাঁচবার দশ উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। নিচেরসারির মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৫.৫৯ গড়ে ১০২৯ রান তুলেছেন। অপরদিকে, ওডিআইয়ে ২৬.১৬ গড়ে ১৩২ উইকেট দখল করেন। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৪.০৬। ১৫.২৬ গড়ে ও ৭৫.৫০ স্ট্রাইক রেটে ৬৪১ রান পেয়েছেন। তন্মধ্যে, ছক্কা থেকে পেয়েছেন ১০২ রান।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অসাধারণ রেকর্ড গড়েছেন। ইংল্যান্ডে না খেলা যে-কোন এশীয় বোলারের মধ্যে তিনি ২৩.২৪ গড়ে ৯৬০ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, পঁচাত্তরবার পাঁচ-উইকেট ও একুশবার দশ উইকেট পেয়েছেন। এছাড়াও, দুইটি শতরান সহযোগে ১৮.৩৩ গড়ে ৩৭৪০ রান সংগ্রহ করেছেন।

পুরো খেলোয়াড়ী জীবনে ইংল্যান্ড দল তাঁর প্রিয় শিকারে পরিণত হয়েছিল। টেস্ট ক্রিকেটে অন্য দলের বিপক্ষে তেমন সুবিধে করতে না পারলেও ইংল্যান্ড দল এর ব্যতিক্রম ছিল। পনেরোবার পাঁচ-উইকেটের মধ্যে আটটি ও পাঁচবার দশ উইকেট লাভের চারটিই এ দলটির বিপক্ষে লাভ করেছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে ব্রিটিশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানেরা তাঁর বল মোকাবেলায় বেশ হিমশিম খেয়েছেন।

তাঁর তুলনায় অন্য কেউ যে, রিস্ট-স্পিনে অধিক দক্ষ তা বিশ্বাস করা বেশ কষ্টদায়ক। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে নিজ শহর লাহোরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯/৫৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। ঐ দিন গ্রাহাম গুচ তাঁর বোলিংয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন। অদ্যাবধি এ পরিসংখ্যানটি যে-কোন পাকিস্তানী বোলারের চেয়ে সেরার মর্যাদা পাচ্ছে। শেন ওয়ার্নের চেয়ে তিনি অধিক চমৎকার বোলিং করেছেন ও বোলিংয়ের ধারাকে তাঁর মাঝে প্রবাহিত করেছেন।

শেন ওয়ার্নের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবের পূর্বে তিনি স্পিন বোলিংয়ের যাদুকররূপে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। এ সময়ে মূলতঃ তিনি ফাস্ট বোলারদের প্রাধান্যের যুগে নিজেকে স্পিনের পতাকাবাহক হিসেবে তুলে ধরেন। ওয়ার্ন স্বীকার করেছেন যে, তাঁর উত্থান ঘটেছে মূখ্যতঃ আব্দুল কাদিরের সাফল্য লাভের কারণে। স্টিভ ওয়াহ পরবর্তীতে তাঁর তুরুপের তাসের জন্যে তাঁকে কোচ হিসেবে নিযুক্ত করার প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। শেন ওয়ার্ন তাঁর আত্মজীবনীতে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। তাঁর সাথে স্বাক্ষাৎ করেন, কার্পেটে ফল দিয়ে বোলিং করে নিজেদের দক্ষতা দেখান। বিষয়টি অনেকাংশে পরস্পরের মৃত্যুর শামিল ছিল।

তিনি তাঁর সময়কালের সেরা স্পিনার হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। রিচি বেনো’র সর্বকালের সেরা একাদশের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। গ্রাহাম গুচও একদা বলেছিলেন যে, ‘তিনি শেন ওয়ার্নের চেয়েও সেরা।’ তাঁর বোলিংয়ের ধরন বেশ দৃষ্টিনন্দন ছিল ও যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রাখে। মুশতাক আহমেদ ও ইমরান তাহিরের বোলিংয়ের ধরন অনেকাংশে তাঁর বোলিংয়ের অনুরূপ। মুশতাক আহমেদের উত্থান ও কিছুটা কম সফলতার স্বাক্ষর বহনকারী দানিশ কানেরিয়া’র খেলোয়াড়ী জীবনে তাঁর ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না।

অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারও তাঁকে পল স্ট্র্যাংয়ের জন্যে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। শচীন তেন্ডুলকর দলের প্রধান স্পিনার অনিল কুম্বলে’র জন্যে তাঁর পরামর্শ চান। এ পর্যায়ে তিনি অধিক বাঁক খাওয়াতে তৎপর ছিলেন কিন্তু, আব্দুল কাদির তাঁকে এর বিপক্ষে পরামর্শ দেন। আরও বাঁক খাওয়ানোর বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন যে, পুরো জীবনেও তোমার বল বেশ বাঁক খাবে না। কিন্তু, তুমি বলে বৈচিত্র্যতা আনয়ণ করতে পারো। টেস্টের প্রথম তিন দিনই কেবল সফলতা পাবে।

অবসর নেয়ার পর ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তবে, মন্তব্যের কারণে এ দায়িত্ব পালন করা থেকে তাঁকে বিরত রাখা হয়। ২০০৪ সালে পাকিস্তান টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে হাসান জলিলের সাথে আলাপচারিতায় তিনি মন্তব্য করেন যে, ‘আমরা সকলেই জানি যে সর্বদাই পাকিস্তানী ফাস্ট বোলারদের মাধ্যমে বলে আঁচড় করা হয়ে থাকে। কিন্তু, এ সিরিজে বেশ সতর্ক থাকায় তা আর হয়ে উঠা সম্ভব নয়।’ পিটিভি তাঁর সাথে চুক্তি বাতিল করে বিবৃতি দেয় যে, ‘আমরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং আমাদের কি করা উচিৎ, আর কি করা উচিৎ নয় তা আচরণ বিধিতে উল্লেখ রয়েছে। বলে আঁচড়ের কথকতা ও প্রত্যেক সফল পাকিস্তানী বোলারদের বলকে তৈরী করে নেয়ার দাবী করায় জাতির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে ও আমাদের নীতিবিরুদ্ধ। ফলে, আমরা তাঁকে বাদ দেই।’

নভেম্বর, ২০০৮ সালে পাকিস্তানী ক্রিকেটে প্রধান দল নির্বাচক হিসেবে মনোনীত করে তাঁর অবদানকে আরও একবার স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে, এ দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাস পর বোর্ডের সাথে মতবিরোধের জের ধরে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর প্রধান হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। ভারতের বিপক্ষে সিরিজকে সামনে রেখে নভেম্বর, ২০০৮ সালে সেলিম জাফরের স্থলাভিষিক্ত হন। তবে, ২০০৮ সালের মুম্বই আক্রমণের পর থেকে উভয় দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি না ঘটায় পাকিস্তানের মাটিতে তিন টেস্ট, পাঁচটি ওডিআই ও তিনটি টি২০আই আয়োজন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। পরবর্তী কার্যক্রম হিসেবে নিজ দেশে ভারত দলের সফরের পরিবর্তে শ্রীলঙ্কা দলের আগমন ঘটে। কিন্তু, দ্বিতীয় টেস্ট চলাকালীন লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের উপর আক্রমণ করার ফলে বাতিল হয়ে যায়। ১২ জুন, ২০০৯ তারিখে কোনরূপ কারণ না দেখিয়ে ঐ পদ থেকে চলে আসেন।

সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সালে ক্রিকেটার ও পরবর্তীকালে রাজনীতিবিদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফের চলমান কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার অভিযোগে লাহোরে তাঁর বাসভবন পুলিশ অবরোধ করে রাখে।

পাকিস্তানের প্রাইড অব পারফরমেন্স পুরস্কার পান। ইংল্যান্ডভিত্তিক এমসিসির আজীবন সদস্য হন। অস্ট্রেলিয়া থেকে রাইডার পদক লাভ করেন। পিসিবি থেকে আজীবন সম্মাননা স্বর্ণপদক পুরস্কারে ভূষিত হন। পাকিস্তানের ক্রিকেট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা হন। ১৫ আগস্ট, ২০২০ তারিখে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা সিতারা-ই-ইমতিয়াজ পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও, ২০২১ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড প্রণীত পাকিস্তান ক্রিকেট হল অব ফেমে ফজল মাহমুদের সাথে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। হেনি কাদির খান নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেছিলেন। এ দম্পতির উসমান কাদির, ইমরান কাদির, সুলামান কাদির ও রেহমান কাদির নামীয় চার পুত্র ছিল। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চার পুত্র খেলায় অংশ নিয়ে বিভিন্নমানের সফলতা পেয়েছেন। রেহমান, ইমরান ও সুলেমান লেগ স্পিন বোলিং করলেও উসমান অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। তাঁদের প্রত্যেককেই তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, দুই কন্যা রয়েছে। নূর আমনা নাম্নী কন্যাকে আকমল ভ্রাতৃত্রয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ উমর আকমল ২০১২ সালে বিয়ে করেন। তাঁর ভ্রাতা আলী বাহাদুর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ওয়াটার এন্ড পাওয়ার ডেভেলপম্যান্ট অথরিটির পক্ষে খেলেছেন। তাঁর পরিবার ক্রিকেটের সাথে যুক্ত ছিল। ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখে লাহোরে ৬৩ বছর ৩৫৬ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • | |

    গুলাম পার্কার

    ২৫ অক্টোবর, ১৯৫৫ তারিখে মহারাষ্ট্রের কালুস্তে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও রাজনীতিবিদ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুম থেকে ১৯৮৫-৮৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বোম্বের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।…

  • | |

    রামনাথ কেনি

    ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৩০ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৫০-৫১ মৌসুম থেকে ১৯৬৩-৬৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলা ও বোম্বে…

  • | | |

    চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত

    ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৬১ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও কোচ। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দর্শনীয় স্ট্রোক খেলতেন ও দক্ষ উইকেট-রক্ষক হিসেবে সুনাম ছিল তাঁর। ১৯৭৯-৮০ মৌসুম থেকে ২০০০-০১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয়…

  • |

    অ্যাথল রোয়ান

    ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯২১ তারিখে ট্রান্সভালের কেনসিংটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা অফ-স্পিনারের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। যুদ্ধকালীন তিনি পায়ে আঘাত পান। এরফলে, সামনের…

  • | | |

    জেরেমি কোনি

    ২১ জুন, ১৯৫২ তারিখে ওয়েলিংটনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মজবুত গড়নের অল-রাউন্ডার ছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডিংয়ে সবিশেষ পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলে স্বল্প সময়ের জন্য অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করলেও বেশ সফল ছিলেন। গড়পড়তা নিউজিল্যান্ডীয় বালকদের সাথে তাঁর শৈশবকালও তেমন বৈচিত্র্যময় ছিল না। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে রাগবি খেলায় জড়িয়ে…

  • | |

    ক্লেম হিল

    ১৮ মার্চ, ১৮৭৭ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হিন্ডমার্শ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাশাপাশি, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিবারের ১৬ সন্তানের অন্যতম ছিলেন। পিতা এইচ. জে. হিল অ্যাডিলেড ওভালে প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা…