১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
হার না মানার মানসিকতাসম্পন্ন বামহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ছিলেন। পিছনের পায়ের উপর ভর রেখে খেলতেন। সহজাত প্রকৃতির আক্রমণাত্মক ধাঁচে খেলতে পছন্দ করতেন ও প্রায়শঃই তাঁর আগ্রাসী থেকে তাঁকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা বেশ দুঃসাধ্য ছিল। ব্যাট ও মুখে – উভয়দিকেই সরব ছিলেন। ১৯৯০-এর দশকে সাঈদ আনোয়ারকে সাথে নিয়ে পাকিস্তানের অন্যতম সেরা উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের শিরোপা বিজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন।
১৯৮৩-৮৪ মৌসুম থেকে ২০০১ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে অ্যালাইড ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, করাচী, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি ও সারগোদা এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৯০ থেকে ২০০০ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে ৪৭ টেস্ট ও ১৫৬টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২১ ডিসেম্বর, ১৯৯০ তারিখে শারজায় অনুষ্ঠিত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূত্রপাত ঘটান।
১৯৯২ সালে জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড গমনার্থে পাকিস্তান দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। ৪ জুন, ১৯৯২ তারিখে বার্মিংহামের এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। আতা-উর-রেহমান ও ইনজামাম-উল-হকের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
কার্যকর বামহাতি স্পিনার হিসেবেও আবির্ভুত হয়েছেন। টেস্টের তুলনায় একদিনের আন্তর্জাতিকেই অধিক সফলতা পেয়েছেন। ১৯৯২ সালের পাকিস্তানের বিশ্বকাপের শিরোপা বিজয়েও বিরাট ভূমিকা রেখেছেন। চূড়ান্ত খেলায় শূন্য রানে বিতর্কিতভাবে ইয়ান বোথামকে বিদেয় করার পর শ্বাশুরীকে ব্যাট হাতে পাঠানোর কথা তিনি বলেছিলেন। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার-ফাইনালে ব্যাঙ্গালোরের দর্শকদের সম্মুখে ভীতিহীন চিত্তে বেঙ্কটেশ প্রসাদকে এক চোঁট নিয়েছিলেন। দলের সংগ্রহ ১০৯/১ থাকাকালে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে প্রসাদের দিকে ব্যাট তুলে ধরেন। পরের বলেই বোল্ড হন। ঐ খেলায় তাঁর দল পরাজয়বরণ করে।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২ জানুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে উভয় ইনিংসে শূন্য রানে ড্যানি মরিসনের বলে বিদেয় নেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। পাশাপাশি, ০/১২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ওয়াসিম আকরামের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩৩ রানে পরাজিত হয়।
১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৯ জানুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন। খেলায় তিনি ২৩ ও ০ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্সের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। পাশাপাশি, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৪৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্সের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়ানৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩২৪ রানে জয় পায়।
পাতানো খেলার বিতর্কের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সময়কালে পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন ও অন্যতম মন্ত্রণাদাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ফলশ্রুতিতে, তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনেও বিরাট প্রভাব ফেলে। তাঁর অধিনায়কত্বে পাকিস্তান দল প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে জয়লাভ করে।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে কোর্টনি ওয়ালশের নেতৃত্বাধীন সফরকারী ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৯ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। দলের একমাত্র ইনিংসে মনোরম ১৬০ রানের শতক হাঁকান। তৃতীয় উইকেটে ইনজামাম-উল-হকের (১৭৭) সাথে ৩২৩ রানের জুটি গড়ে দ্বি-পক্ষীয় নতুন রেকর্ড গড়েন। এরফলে, ১৯৫৮ সালে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সাঈদ আহমেদ ও ওয়াজির মোহাম্মদের মধ্যকার পূর্বতন ১৬৯ রানের জুটি রেকর্ড ম্লান হয়ে যায়। স্বাগতিক দল ইনিংস ও ২৯ রানের ব্যবধানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে নিজ দেশে মার্ক টেলরের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছেন। ২২ অক্টোবর, ১৯৯৮ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে ১৩৩ ও ২৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে সনথ জয়সুরিয়া’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ৫ মার্চ, ২০০০ তারিখে পেশাওয়ারে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ২/২৪ ও ২/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২২ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৫৭ রানে জয় তুলে নেয় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদেয় নেয়ার পর সম্প্রচার জগতে প্রবেশ করেন। এ পর্যায়েও ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকে ফিরিয়ে আনতে বেশ হিমশিম খেতে হয়। ২০০৪ সাল পর্যন্ত দল নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন ও পরবর্তীতে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ২৩ জুলাই, ২০০৩ তারিখে এনসিএ’র প্রধান কোচ হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে পাকিস্তানের প্রধান দল নির্বাচক হিসেবে মনোনীত হন। তবে, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে তাঁকে এ দায়িত্ব থেকে চলে আসতে হয়েছিল ও মঈন খানকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়।
