১৩ অক্টোবর, ১৯৯৪ তারিখে দিনাজপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং করেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১০-১১ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও রংপুর বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম, জ্যামাইকা তল্লাহজ ও রাজশাহী রয়্যালসের পক্ষে খেলেছেন।
রাজধানী ঢাকা থেকে ৩৩১ কিলোমিটার দূরবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় দিনাজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বিকেএসপিতে তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে কৈশোরকাল অতিবাহিত করেন। বিদ্যালয় জীবনসহ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ব্যাপক রান সংগ্রহের কারণে সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হন। এরফলে, খুব দ্রুত ২০১২ সালে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য করা হয়। সচরাচর বিকেএসপি থেকে যে-কোন প্রতিভাধর তরুণ ক্রিকেটারের সহজ পন্থা হিসেবে তিনি এ সুযোগটি লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, যুবদের ওডিআইয়েও সুন্দর ফলাফল করেন। ২০১২ ও ২০১৪ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে একটি শতরান ও তিনটি অর্ধ-শতরান সহযোগে ৫১.৩৩ গড়ে রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, ২০১৪ সালের আসরে মাত্র চার ইনিংসে ২৩৯ রান তুলেছিলেন। এরফলে, বড়দের ক্রিকেটে অংশগ্রহণের পথ সুগম হয়।
সুন্দর রক্ষণাত্মক কৌশলের অধিকারী দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ব্যাটসম্যান হিসেবে স্ট্রোকপ্লেতে সিদ্ধহস্তের অধিকারী। ২০১১-১২ মৌসুমের ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরেন। ১৭ অক্টোবর, ২০১১ তারিখে বগুড়ায় রংপুর বিভাগের সদস্যরূপে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। নিজস্ব দ্বিতীয় মৌসুমে একটি শতক ও একটি অর্ধ-শতক করেছিলেন। তবে, ২০১৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলার প্রস্তুতি গ্রহণের কারণে ২০১৩-১৪ মৌসুমে মাত্র দুইটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।
২০১৪-১৫ মৌসুমে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। আবাহনীর পক্ষে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। লিস্ট-এ ক্রিকেটে দ্বিতীয় সেরার আসনে অবস্থানের পর ঐ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর প্রতিযোগিতা এনসিএলে রংপুর বিভাগের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হন। এ আসরে বিস্ময়কর ব্যাটিং গড়ে রান তুলেন ও পাঁচটি শতক হাঁকান। ৮৫.৩৩ গড়ে সহস্রাধিক রান সংগ্রহ করেছিলেন। কার্যকর ও সঠিকমানের ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনের কারণে খুব শীঘ্রই জাতীয় দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ পান।
উচ্চ মানসম্পন্ন ও উদীয়মান উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান। মুশফিকুর রহিমের পর বাংলাদেশের প্রথম উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দীর্ঘদিনের জন্যে খেলার উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তুলছেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে আবাহনী ও পরবর্তীতে ২০১৪-১৫ মৌসুমে জাতীয় ক্রিকেট লীগে রংপুর বিভাগের পক্ষে সুন্দর ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ জুন, ২০১৫ সালে ফতুল্লায় সফররত ভারত দলের বিপক্ষে টেস্ট খেলার জন্যে দলে অন্তর্ভুক্ত হন।
২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। এপ্রিল, ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০ খেলায় অংশগ্রহণের জন্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ দলের সদস্য করা হয়। এরপর, ২০১৫ সালে নিজ দেশে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারত দলের মুখোমুখি হন। ১০ জুন, ২০১৫ তারিখে ফতুল্লায় সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৪৫ বল মোকাবেলা করে ৪৪ রান তুলেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। একই দলের বিপক্ষে ১৮ জুন, ২০১৫ তারিখে ঢাকায় প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।
তৎকালীন বিশ্বের এক নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম টেস্ট অর্ধ-শতক করেন। তবে, ক্ষুদ্রতর সংস্করণের খেলায় নিজের প্রতিভাকে যথেষ্ট মেলে ধরতে পারেননি। ফলে জাতীয় দলে আসা-যাবার পালায় থাকেন। কোন কারণে আন্তর্জাতিক খেলায় মুশফিকুর রহিমের অনুপস্থিত ঘটলে নূরুল হাসানের সাথে গ্লাভসের লড়াইয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়।
মার্চ, ২০১৭ সালে পুণরায় টেস্ট দলে খেলার জন্যে মনোনীত হন। শ্রীলঙ্কা সফরসহ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও বেশ ভালো খেলেন। টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করলেও ওডিআই পরিসংখ্যানে বেশ দূর্বলতর অবস্থায় রয়েছেন।
২০১৭-১৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ তারিখে পচেফস্ট্রুমে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২৫ ও ৪ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে তিনটি ক্যাচ ও একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। ডিন এলগারের অনবদ্য ব্যাটিং কৃতিত্বে সফরকারীরা ৩৩৩ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ৬ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে ব্লোমফন্তেইনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৫০ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৭০ ও ১৮ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে একটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীকরণে অগ্রসর হন। কাগিসো রাবাদা’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৫৪ রানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
২০১৮ সালের এশিয়া কাপের চূড়ান্ত খেলায় নিজস্ব প্রথম ওডিআই শতক হাঁকান। ভারতের বিপক্ষে ঐ খেলায় বাংলাদেশ দল পরাজিত হলেও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ২০১৯ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় সফল হয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিরাট রানের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে ৬৯ বলে ৯৪ রান তুলেন। এ পর্যায়ে সাকিব আল হাসানের সাথে রেকর্ডসংখ্যক জুটি গড়েন।
পেস ও স্পিন – উভয় ধরনের বলই সঠিক সময়ে আঘাত হানতে পারেন। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পূর্বে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতায় বেশ ভালোমানের রান সংগ্রহ করেছেন।
২০২১-২২ মৌসুমে মমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১১ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৮ ও ১০২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক টম ল্যাথামের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১১৭ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।
২০২২ সালে নিজ দেশে দিমুথ করুণারত্নে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৩ মে, ২০২২ তারিখে ঢাকায় সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১৪১ ও ৫২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, প্রথম ইনিংসে ষষ্ঠ উইকেটে উইকেট-রক্ষক মুশফিকুর রহিমের (১৭৫) সাথে ২৭২ রানের জুটি গড়েন। তবে, অসিত ফার্নান্দো’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।
২০২৩-২৪ মৌসুমে নাজমুল হোসেন শান্ত’র অধিনায়কত্বে নিজ দেশে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হন। দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে অংশ নেন। দলের অনেকের ন্যায় তিনিও ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ২২ মার্চ, ২০২৪ তারিখে সিলেটে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে ২৫ ও ০ রান সংগ্রহ করেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ৩২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়। এরপর, ৩০ মার্চ, ২০২৪ তারিখের চট্টগ্রাম টেস্টে ৪ ও ৩৮ রান সংগ্রহ করেন। ঐ টেস্টেও স্বাগতিকরা ১৯২ রানে পরাস্ত হবার পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে সিরিজে পরাজয়বরণ করে। অবশ্য, ঐ সিরিজে ৯টি ডিসমিসাল ঘটিয়েছিলেন।
২০২৪ সালে নাজমুল হোসেন শান্ত’র নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের অন্যতম সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ২১ মার্চ, ২০২৪ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানে বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৫৬ রান সংগ্রহ করেন। এ পর্যায়ে মুশফিকুর রহিমের (১৯১) সাথে ষষ্ঠ উইকেটে ১১৪ রানের জুটি গড়েন। এছাড়াও, চারটি ক্যাচ ও দুইটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। তবে, মুশফিকুর রহিমের অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
এরপর, একই সফরের ৩০ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। আবারও অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। দলীয় সংগ্রহ ২৬/৬ হবার পর ব্যাট হাতে মাঠে নামেন। একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ১৩৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এ পর্যায়ে মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে সপ্তম উইকেটে ১৬৫ রানে জুটি গড়ে দলের বিপর্যয় সামলান। এছাড়াও, দুইটি স্ট্যাম্পিং ও চারটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৬ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২৫ সালে নাজমুল হোসেন শান্ত’র নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের অন্যতম সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ২৫ জুন, ২০২৫ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩৪ ও ১৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি রান-আউট ও সমসংখ্যক ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। পথুম নিসাঙ্কা’র অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৭৮ রানে পরাজিত হলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
