|

রমেশ দিবেচা

১৮ অক্টোবর, ১৯২৭ তারিখে মহারাষ্ট্রের কডাকডি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন তিনি। ১৯৫০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

সুইং ও অফ-ব্রেকের মাঝামাঝি প্রকৃতির বোলিং করতেন। ২৫ গড়ে ২১৭টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট দখল করেছেন। অন্যদিকে, ২০-এর গড়ে উৎসাহব্যঞ্জক রান পেয়েছেন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবন কেবলমাত্র ৫ টেস্টেই সীমাবদ্ধ ছিল ও সবগুলোই ১৯৫২ সালে খেলেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে নিজেকে অবমূল্যায়িত করেননি। ৩৩ গড়ে ১১ উইকেট লাভ খারাপ লক্ষণ ছিল না। তবে, নিজেকে আর দলে ফিরিয়ে আনতে পারেননি ‘বাক’ ডাকনামে পরিচিত বক দিবেচা।

ক্লাব ক্রিকেটার, বোম্বে ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি ও বিসিসিআইয়ের সহঃসভাপতি বিথলদাস দিবেচা’র সন্তান ছিলেন। বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। এরপর, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ওরচেস্টার কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬২-৬৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে তিনটি ভারতীয় রাজ্য দল- মধ্যপ্রদেশ, বোম্বে ও সৌরাষ্ট্রের পক্ষে ১১টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। এছাড়াও, ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নর্দাম্পটনশায়ার, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সারে ও অক্সফোর্ডশায়ারের পক্ষে খেলেছিলেন।

১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ডে সফররত ডন ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বাধীন ‘অপরাজেয়’ দলের বিপক্ষে নিজস্ব তৃতীয় প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। তবে, ঐ খেলায় ডন ব্র্যাডম্যান খেলেননি ও লিন্ডসে হ্যাসেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। জুন মাসে সফরকারীদের বিপক্ষে মাত্র একবার বোলিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন। স্বাগতিক দল মাত্র ১১৯ রানে গুটিয়ে যায়। নর্দাম্পটনশায়ারের সদস্যরূপে ঐ খেলায় তিনি ৩৩ রান তুলে দলের শীর্ষ রান সংগ্রাহক হন। অস্ট্রেলীয় একাদশ ৩৫২/৮ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। এ পর্যায়ে নীল হার্ভে’র উইকেট পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫ রান করেন ও নর্দাম্পটনশায়ার ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হয়।

অক্সফোর্ডের পক্ষে খেলা চলমান রাখেন। বোম্বের সদস্যরূপে সফররত এমসিসি’র বিপক্ষে ৬/৭৪ পেলে টেস্ট দলে খেলার জন্যে মনোনীত হন।

১৯৫১ থেকে ১৯৫২ সময়কালে ভারতের পক্ষে পাঁচটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৫১-৫২ মৌসুমে ইন্ডিয়ান কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ঐ মৌসুমে নিজ দেশে নাইজেল হাওয়ার্ডের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৫১ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। সুভাষ গুপ্তে ও বিজয় মাঞ্জরেকরের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ২৬ রান তুলেন ও ৪ উইকেট পান। তন্মধ্যে, উভয় ইনিংসেই টম গ্রেভনিকে বিদেয় করেছিলেন তিনি। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ০-০ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে। এছাড়াও, একই সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের প্রথম টেস্ট বিজয়ী দলের সদস্য ছিলেন।

ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁর খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন ও শীতকালে দারুণ খেলা প্রদর্শনের সুবাদে ১৯৫২ সালে ইংল্যান্ড সফরে তাঁকে ঠাঁই দেয়া হয়। ওল্ড ট্রাফোর্ডে দীর্ঘ সময় ধরে বোলিং করেন। ৪৬ ওভারে ৩/১০২ পান। তন্মধ্যে, লেন হাটন ও টম গ্রেভনিকে আবারও বিদেয় করেন। তবে, ঐ টেস্ট সিরিজে খুব কমই ভূমিকা পালন করেছিলেন। তুলনামূলকভাবে প্রস্তুতিমূলক খেলাগুলোয় কিছুটা ভালো খেলা উপহার দিয়েছেন। ২৬ গড়ে ৫০ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, ঐ মৌসুমের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ী সারে দলের বিপক্ষে ৬/২৯ পান। এ পর্যায়ে হ্যাট্রিক করেছিলেন তিনি। এছাড়াও, গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে ৮/৭৪ পান।

দূর্ভাগ্যবশতঃ এরপর আর একটিমাত্র টেস্ট খেলতে পেরেছিলেন। ১৯৫২-৫৩ মৌসুমের শীতকালে নিজ দেশে আব্দুল কারদারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২৮ নভেম্বর, ১৯৫২ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ২/৩৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। দুই মৌসুম পর সকল স্তরের ক্রিকেটকে বিদেয় জানান।

ক্রিকেটের বাইরে নির্বাহী হিসেবে চাকুরী করেছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণে পেট্রোলিয়াম সংস্থা বার্মা শেল ও মহীন্দ্র এন্ড মহীন্দ্রতে চাকুরী পেতে সহায়তা করে। সামাজিকভাবে মিশুক প্রকৃতির অধিকারী ছিলেন ও অগণিত বন্ধু-বান্ধব ছিল তাঁর। ডোনাল্ড কার ও তাঁর স্ত্রী স্টেলা’র সাথে আজীবন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। শেষ জীবনে গল্ফের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। সন্ধ্যা নাম্নী কন্যা এবং সুনীত ও শারদ নামীয় পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। দীর্ঘদিন স্মৃতিভ্রষ্ট রোগে ভোগার পর ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ তারিখে ৭৫ বছর ১২৪ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • | |

    তেম্বা বাভুমা

    ১৭ মে, ১৯৯০ তারিখে কেপ প্রভিন্সের কেপটাউনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করছেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করে থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছোটখাটো ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। তাসত্ত্বেও, অপূর্ব ধৈর্য্যশীলতার স্বাক্ষর রেখে খেলায় অংশ নিচ্ছেন।…

  • | | |

    অরবিন্দ ডি সিলভা

    ১৭ অক্টোবর, ১৯৬৫ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতার স্বাক্ষর রেখেছেন। শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। পিতা স্যাম তাঁর উপযোগী বিদ্যালয় খুঁজে বের করতে বেশ হিমশিম খেয়েছিলেন। অবশেষে ডিএস সেনানায়েকে কলেজ আরআইটি অ্যালিসের অধ্যক্ষকে প্রথম গ্রেডে ভর্তি করাতে সক্ষম হন। খুব…

  • | |

    বিনু মানকড়

    ১২ এপ্রিল, ১৯১৭ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের জামনগর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার ছিলেন। নিজের স্বর্ণালী সময়ে যে-কোন বিশ্ব একাদশে ঠাঁই পাবার অধিকারী ছিলেন। পেশাদারী পর্যায়ে…

  • |

    কীর্তি আজাদ

    ২ জানুয়ারি, ১৯৫৯ তারিখে বিহারের পুর্ণিয়া এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৮০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৬-৭৭ মৌসুম থেকে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লির প্রতিনিধিত্ব করেছেন।…

  • |

    চার্লস কভেন্ট্রি

    ৮ মার্চ, ১৯৮৩ তারিখে মিডল্যান্ডসের কেউইকেউই এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। তবে, একদিনের ক্রিকেটে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক ও উইকেট-রক্ষণে পারদর্শী। জিম্বাবুয়ের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুম থেকে ২০১২-১৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে মাতাবেলেল্যান্ড, মাতাবেলেল্যান্ড তুস্কার্স, ওয়েস্টার্নস…

  • |

    ড্যারিল টাফি

    ১১ জুন, ১৯৭৮ তারিখে ওতাগোর মিল্টন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ বোলারের দায়িত্ব পালন করতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। শক্ত মজবুত গড়নের অধিকারী তিনি। পর্যাপ্ত পেস ও নিখুঁতভাব বজায় রেখে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। এছাড়াও, চমৎকার আউট-সুইঙ্গার বোলিং করতে পারতেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম…