২ জুন, ১৯৮৭ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, শ্রীলঙ্কা দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
কলম্বোভিত্তিক সেন্ট যোসেফস কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। ২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে কোল্টস ক্রিকেট ক্লাব ও কম্বাইন্ড প্রভিন্সেসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বাসনাহিরা গ্রীনস, বাসনাহিরা নর্থ, কলম্বো কিংস, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, কলকাতা নাইট রাইডার্স, পুনে ওয়ারিয়র্স ও ব্রাদার্স ইউনিয়নের পক্ষে খেলেছেন। ১০ নভেম্বর, ২০০৬ তারিখে কলম্বোর কোল্টসে অনুষ্ঠিত কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব বনাম কোল্টস ক্রিকেট ক্লাবের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।
অত্যন্ত চমৎকার প্রতিভাবান অল-রাউন্ডার হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে। জোরালো ব্যাটিং কৌশলের অধিকারী। মাঝারিসারিতে যে-কোন স্থানে কার্যকর ব্যাটিং করে থাকেন। এছাড়াও, দারুণ মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে পারদর্শীতা প্রদর্শনসহ ফিল্ডিংয়েও চটপটে মনোভাব বজায় রাখেন। সবমিলিয়ে ফুরফুরে মেজাজে নিজেকে শ্রীলঙ্কার অন্যতম সেরা আকর্ষণে পরিণত করেছেন ও দলের সাফল্য অনেকাংশেই তাঁর উপর নির্ভরশীল। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের কারণে তিন ধরনের ক্রিকেটেই শ্রীলঙ্কার নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা লাভ করেছেন। এছাড়াও, নিপুণ দক্ষতার সাথে শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচনালগ্নে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। পরবর্তীতে ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ ঘটান। টেস্ট দলে কার্যতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলছেন। অবিশ্বাস্য রকমের প্রতিভাবান ও বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে অভিজ্ঞতার কমতি থাকা সত্ত্বেও প্রতিকূল পরিবেশের সাথে খুব সহজেই মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা রাখেন। ২০০৫ সালে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো লিস্ট-এ খেলায় অংশ নেন। ১৬ বছর বয়সে শ্রীলঙ্কার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০৬ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন।
নভেম্বর, ২০০৬ সালে কোল্টস ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে প্রথম খেলেন। তবে, কেবলমাত্র ২০০৭-০৮ মৌসুমেই প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কোল্টস সিসি’র পক্ষে ৫৮ গড়ে ৬৯৬ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের পক্ষে তাঁকে যুক্ত করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ২৫০ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে ৯৯ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন ও দলকে বিজয়ী করেন। তাঁর কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহা’র অভিমত, এ ইনিংসটি পরিপক্কতায় ভরপুর ও এ ইনিংস থেকে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের অনেক কিছু শেখার চমৎকার উদাহরণ হিসেবে বিবেচনার যোগ্য। এরফলে, জাতীয় দলের পক্ষে খেলার পথ সহজতর হয়। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১ রান তুলে শ্রীলঙ্কাকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখেন। ঐ খেলায় থিলান সামারাবীরা’র সাথে ১৩৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জয় এনে দেন। পরের খেলায় সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে ভারতের মাঝারিসারিতে ধ্বস নামান। ৬/১৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ও ব্যক্তিগত সেরা বোলিং করেন। এরপর থেকে আর তাঁকে পিছনের দিকে তাকাতে হয়নি।
২০০৮ সাল থেকে শ্রীলঙ্কার পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ২৮ নভেম্বর, ২০০৮ তারিখে হারারে স্পোর্টস ক্লাবে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ধারাবাহিক বোলিং করে ৮ ওভারে ০/২৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ফিল্ডিংয়ে তৎপরতা দেখিয়ে সকলের নজর কাড়েন। কিন্তু, ১৫ বল মোকাবেলা করে শূন্য রানে তাঁকে বিদেয় নিতে হয়। নিজস্ব তৃতীয় ওডিআইয়ে প্রথম অর্ধ-শতক হাঁকান। এরপর থেকে দলে স্থান নিশ্চিত করেন। এর আট মাস পর টেস্টে প্রথমবারের মতো অংশ নেন।
৮ জুন, ২০০৯ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০আইয়ে প্রথম খেলেন। ২ ওভারে ১/১০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ১৫৯ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্বার্থকভাবে অর্জিত হলে তাঁকে ব্যাটিং করার প্রয়োজন পড়েনি। পরের মাসে গলেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ৪ জুলাই, ২০০৯ তারিখে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৪২ রান তুলে শ্রীলঙ্কা দলকে ২৯২ রানে নিয়ে যেতে সহায়তা করেন। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক ইউনুস খানকে বিদেয় করে নিজস্ব প্রথম উইকেটের সন্ধান পান। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস থেকে ১/২৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭ রান তুলে পাকিস্তানের ১৬৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয়। ১১৭ রানে প্রতিপক্ষ গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আবারও ইউনুস খানের উইকেট পেয়েছিলেন।
সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে বেশ কয়েকবার দলের জয়সূচক রানের সাথে নিজেকে জড়িয়েছেন। এ স্তরের ক্রিকেটে তাঁর অল-রাউন্ড দক্ষতা প্রায়শঃই অপরিহার্য্য উপাদান ছিল। ২০০৯ সালের বিশ্ব টি২০ ক্রিকেটে অবিশ্বাস্যভাবে দলের সাফল্যে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। ২০১০ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেন। প্রতিপক্ষের সংগৃহীত ২৩৯ রানের জবাবে দলের সংগ্রহ ১০৭/৮ থাকা অবস্থায় ১২৭ বলে অপরাজিত ৭৭ রানের অসাধারণ ইনিংসটি সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। লাসিথ মালিঙ্গা’র সাথে দশম উইকেটে ১৩২ রানের জুটিটি এ খেলার সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনরূপে বিবেচিত ও নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে। খুবই স্বল্পসংখ্যক খেলোয়াড়দের অন্যতম হিসেবে ভারসাম্য বজায় রেখে উদ্যমতার সাথে ইনিংসের ভিত রচনা করে থাকেন। ক্রমাগত স্ট্রাইক ধরে রাখেন ও ওভারের শেষদিকে রান নিতে থাকেন। পায়ে আঘাত নিয়েও উদ্দীপনা ও উদ্দেশ্য অর্জনের স্বার্থে বোলিং করেছেন। সচরাচর, ইনিংসের মাঝামাঝি পর্যায়ে বোলিং কর্মে অগ্রসর হন। প্রতিপক্ষীয় ব্যাটসম্যানদেরকে কাটারে আটকানোর চেষ্টা চালান। নতুন বলে তেমন আগ্রহ নেই। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল পর্ব থেকে চূড়ান্ত খেলায় ধাবিতকালে প্রথম একাদশে তিনটি পরিবর্তন আনেন। দলের ভারসাম্য আনয়ণে একাকী বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
স্থিরচিত্তে ও মজবুত কৌশল অবলম্বনের ফলে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এরফলে, শ্রীলঙ্কান দল নির্বাচকমণ্ডলী তরুণদের প্রতি মনোনিবেশ ও উত্থানে পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখে। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে নতুন যুগে পদার্পণে সাহসী ভূমিকা পালনে অগ্রসর হন। অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে মাহেলা জয়াবর্ধনে’র পরিবর্তে দলকে নেতৃত্ব দেন। ২৫ বছর বয়সে এ দায়িত্ব লাভের ফলে শ্রীলঙ্কার সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। মাত্র দুই বছর পূর্ব থেকে নিজের আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে থাকার পর এ সম্মাননা পান। সামনে অবস্থান করে দলকে পরিচালনা করে থাকেন।
৮ মার্চ, ২০১৩ তারিখ থেকে ১২ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা দলকে নেতৃত্ব দেন। এ পর্যায়ে তাঁর দল ৩৪ টেস্টে অংশ নিয়ে ১৩ জয়, ১৫ পরাজয় ও ৬টি খেলায় ড্র করে। এ পর্যায়ে দলটি বাংলাদেশের বিপক্ষে দুইবার, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয় করে। এছাড়াও, নিজ দেশে অস্ট্রেলিয়া অস্ট্রেলিয়াকে ৩-০ ব্যবধানে ধবল ধোলাই করেছিল তাঁর দল।
২০১৩-১৪ মৌসুমে শ্রীলঙ্কান দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। সেখানে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অপূর্ব খেলেন। ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৯১ ও ১৫৭* রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ১/৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই সফরের ১৬ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে শারজায় অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৯১ ও ৩১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ০/১৫ ও ১/৪৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, আজহার আলী’র অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় পাকিস্তান দল ৫ উইকেটে জয় পেলে ১-১ ব্যবধানে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। এ সিরিজে ৪১২ রান সংগ্রহসহ দুই উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
প্রায়শঃই ছয় নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নামেন। মাঝারিসারিকে মজবুতকরণে তাঁর এ ভূমিকা পূর্বেকার দূর্বলতাকে অনেকাংশেই ঢেকে দিয়েছে। ওডিআইয়ে দুইটি অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছেন। ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ২০১২ সালে পাকিস্তানের নাকের ডগা থেকে এ জয় অনেকাংশেই চুরি করার শামিল ছিল। এছাড়াও, টেস্ট ক্রিকেটেও নিজের সেরা সাফল্য বহমান রেখেছেন। ২০১৪ সালে ৭৭.৩৩ গড়ে ১১৬০ রান পেয়েছেন।
৪ আগস্ট, ২০১২ তারিখ থেকে ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত ৯৯টি ওডিআইয়ে দলকে পরিচালনা করেছেন। তাঁর অধিনায়কত্বে শ্রীলঙ্কা দল ৪৭ খেলায় জয় পায় ও ৪৬টি পরাজিত হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাজিত করতে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। তন্মধ্যে, ২০১৪ সালে অধিনায়ক হিসেবে সর্বাধিক ওডিআই জয়ে রেকর্ড গড়েন। অংশগ্রহণকৃত ৩২ খেলার ২০টিতে জয় পায় শ্রীলঙ্কা দল। ৩ জুন, ২০১২ তারিখ থেকে ২২ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখ পর্যন্ত ১২টি টি২০আইয়ে দলের অধিনায়ক ছিলেন। এ পর্যায়ে তাঁর দল ৪টিতে জয় ও ৭টি পরাজয়বরণ করেছিল। তন্মধ্যে, অস্ট্রেলিয়ায় দ্বি-পক্ষীয় সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয় পায়। ২০১৬ সালে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৫০টি টি২০আইয়ের কোনটিতেই শূন্য রান না তোলার রেকর্ড গড়েন।
ইন্ডিয়ান টি২০ লীগে তেমন সাড়া জাগাতে পারেননি। শুরুতে ২০১০ সালের আসরে কোলকাতা নাইট রাইডার্স ও পরবর্তীতে পুনের পক্ষে খেলেছেন। নাইট রাইডার্সের পক্ষে ১১ ইনিংস থেকে মাত্র ২৩৩ রান ও বল হাতে নিয়ে ১২ ইনিংসে মাত্র ৮ উইকেট দখল করতে পেরেছেন। এরপর, ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের আসরে পুনে ওয়ারিয়র্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবে, ২০১৪ সালের নিলামে জায়গা পাননি। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লীগে নাগেনাহিরা নাগাসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
২০১৪ সালে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। কুমার সাঙ্গাকারা’র পর সকল স্তরের ক্রিকেটে অংশ নিয়ে ৬১.৭০ গড়ে ২৫৩০ রান সংগ্রহ করেন। মার্চ, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের অংশগ্রহণে শ্রীলঙ্কার পঞ্চম শিরোপা বিজয়ে দলের অধিনায়কত্ব করেন। এরপর, লর্ডস ও হেডিংলিতে উপর্যুপরী শতক হাঁকিয়ে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ বিজয়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন।
২০১৪ সালের গ্রীষ্মে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০২ রান তুলে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করেন। ২২৯ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে ধ্রুপদীশৈলীর শতরানের ইনিংসটি খেলেছিলেন। ১২টি চার ও ১৭২ বল মোকাবেলা করে দলকে প্রথম ইনিংসে ৪৫৩ রানে নিয়ে যেতে অধিনায়ক হিসেবে যথোচিত ভূমিকা রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তেমন সুবিধে করতে পারেননি ও টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়।
অধিনায়ক হিসেবে হেডিংলিতে স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। ১৬০ রান সংগ্রহের পর ৪/৪৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে শ্রীলঙ্কাকে এক বল বাকী থাকতে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন। তাঁর এ ইনিংসটি খেলার গতিধারাকে ভিন্ন পথে ধাবিত করে। ৩০৯ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করেন ও ৬৪.২৫ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেন। রঙ্গনা হেরাথের সাথে ১৪৯ রানে অমূল্য জুটি গড়ে খেলাকে পুরোপুরি উল্টিয়ে দেন। ৩৫০ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে মঈন আলী’র দূর্দান্ত শতরানকে বিফল করে দিয়ে ৫৪ বলে শূন্য রানে থাকা জেমস অ্যান্ডারসনকে শমিন্দা ইরঙ্গা’র পঞ্চম বলে স্কয়ার লেগ অঞ্চলে অবস্থানকারী রঙ্গনা হেরাথের মুঠোয় বিদেয় করেন। ২৪ জুন, ২০১৪ তারিখে ১০০ রানে টেস্ট জয়ের পাশাপাশি ১৯৯৮ সালের একমাত্র টেস্ট ব্যতীত প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে শ্রীলঙ্কা দল সিরিজ জয় করে। এরপূর্বে তিনবার জয়ের চেষ্টা চালালেও প্রত্যেকবারই শ্রীলঙ্কা দল ব্যর্থ হয়েছিল। এছাড়াও, একমাত্র টি২০আই এবং ওডিআই সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে শ্রীলঙ্কা দলকে জয়লাভে সফলতম নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে নিজ দেশে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করান।
নভেম্বর, ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ১৩৯ রান তুলে নিজস্ব প্রথম ওডিআই শতরানের ইনিংস খেলেন। তবে, বিরাট কোহলি’র অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর কাছে তাঁর এ ইনিংসটি ম্লান হয়ে পড়ে ও খেলায় তাঁর দল পরাজিত হয়। এরপর, পাঁচটি ওডিআই নিয়ে গড়া প্রত্যেকটিতেই পরাজিত হয়। দ্বি-পক্ষীয় সিরিজে এটি শ্রীলঙ্কার অন্যতম বড় ধরনের ধবল ধোলাইয়ের ঘটনা ছিল। একই মাসে আইসিসি’র ওডিআই অল-রাউন্ডারের র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে পৌঁছেন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও শোচনীয় পরাজয়ের কবলে পড়ে। এছাড়াও, ওডিআই সিরিজও রক্ষা পায়নি। ফলশ্রুতিতে, তাঁকে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।
তেমন অসাধারণ অবদান না রাখা সত্ত্বেও ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় তাঁকে শ্রীলঙ্কা দলে রাখা হয়। এ বিশ্বকাপে মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান ও বিকল্প সিমার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তবে, সেমি-ফাইনালে ফিল্ডিংকালে উরুতে গুরুতর আঘাত পেলে চূড়ান্ত খেলায় অংশ নিতে পারেননি।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় প্রত্যাশার চেয়েও অধিক ভালো খেলা উপহার দেন। দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধ-শতক হাঁকান। মাত্র ২০ বলে এ মাইলফলকে পৌঁছেন। তবে, কোয়ার্টার-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পরাজিত হলে ১৯৯৯ সালের পর প্রথমবারের মতো এ প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনালে অংশ নিতে পারেনি। ২০১৫ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। এ বছরেই উরুতে আঘাত পান। ফলশ্রুতিতে, প্রায় দেড় বছর বোলিং করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। এ সময়ে পুরোপুরি ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
২০১৫ সালের আইপিএল নিলামে ৭.৫ কোটি ভারতীয় রূপীর বিনিময়ে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস কর্তৃপক্ষ তাঁকে কিনে নেয়। ২০১৫ সালে কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে’র অবসর গ্রহণের পর তাঁকে বেশ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে হয়। নিজ দেশে ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা দল পরাজিত হয়। ইংল্যান্ড সফরেও এ ধারা অব্যাহত থাকে। কোন স্তরের ক্রিকেটেই দলকে জয় এনে দিতে পারেননি। তবে, নিজ দেশে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রুখে দাঁড়ান। ঐ সময়ে বিশ্বের এক নম্বর দলকে টেস্টে ৩-০ ব্যবধানে ধবল ধোলাইয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। এ পর্যায়ে আঘাতের কারণে দলে আসা-যাবার পালায় ছিলেন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে এর অল্প কিছুদিন পরই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে তাঁর দল ৩-০ ব্যবধান পরাজিত হয়েছিল।
ক্রমাগত আঘাতপ্রাপ্তি ও বোলিংয়ে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে না পারলেও বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন। ২০১৬ সালের আসরে পুণরায় অনুপস্থিত থাকেন। ২০১৭ সালের আইপিএল নিলামে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। ২০১৮ সালের আসরে আবারও বাদ পড়েন।
২০১৭-১৮ মৌসুমে দিনেশ চণ্ডীমলের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে ভারত গমন করেন। ২ ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১১১ ও ১ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি’র অসাধারণ ব্যাটিং সাফল্য স্বত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
২০১৯-২০ মৌসুমে ডিমুথ করুণারত্নের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ১৯ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। সফরকারী দল ১০ উইকেটে জয়লাভ করে। প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ২০০ রান সংগ্রহ করেন। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২০-২১ মৌসুমে নিজ দেশে জো রুটের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২২ জানুয়ারি, ২০২১ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। মনোরম শতক হাঁকান। এরফলে, ২০১৫ সালের পর নিজ দেশে প্রথম শতকের সন্ধান পান। ১১০ ও ৫ রান সংগ্রহ করেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
২০২২ সালে দিমুথ করুণারত্নে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে বাংলাদেশ গমন করেন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ২৩ মে, ২০২২ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পেয়ে ১৪৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অসিত ফার্নান্দো’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। এ সিরিজে ৩৪৪ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২২-২৩ মৌসুমে দিমুথ করুণারত্নের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ৯ মার্চ, ২০২৩ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হয়েছিলেন। ১৭ ও ১১৫ রান সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও, ০/১৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ড্যারিল মিচেলের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০২৩-২৪ মৌসুমে নিজ দেশে হাশমতউল্লাহ শহীদি’র নেতৃত্বাধীন আফগান দলের মুখোমুখি হন। ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ১৭ ও ১৪১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, প্রভাত জয়সুরিয়া’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পায়।
একই মৌসুমে ধনঞ্জয় ডি সিলভা’র অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ গমন করেন। দুই টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের প্রথমটিতে তেমন সুবিধে করতে পারেনি। ২২ মার্চ, ২০২৪ তারিখে সিলেটে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে ৫ ও ২২ রান সংগ্রহ করলেও দল ৩৫৮ রানের বিশাল জয় পায়। তবে, ৩০ মার্চ, ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে কিছুটা ভালো খেলেন। ২৩ ও ৫৬ রান সংগ্রহ করে দলের ১৯২ রানের বিজয়ে অংশ নেন।
২০২৪ সালে ধনঞ্জয় ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৯ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ২২ ও ৩৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, গাস অ্যাটকিনসনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৯০ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
২০২৪ সালের নিজ দেশে টিম সাউদি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৮৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, কামিন্ডু মেন্ডিসের অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৫৪ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
২০২৫ সালে নিজ দেশে নাজমুল হোসেন শান্ত’র নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের মুখোমুখি হন। ১৭ জুন, ২০২৫ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩৯ ও ৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের মনোমুগ্ধকর জোড়া শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। এরপর, টেস্ট ক্রিকেট জগৎকে বিদেয় জানান। নভেম্বর, ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার লিভিং সাময়িকী কর্তৃক ‘বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। জুলাই, ২০১৩ সালে কলম্বো গীর্জায় দীর্ঘদিনের বান্ধবী হেশানী সিলভা’র সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।
