| |

অশান্ত ডিমেল

৯ মে, ১৯৫৯ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৮০-এর দশকে শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

শ্রীলঙ্কার প্রথমদিককার প্রাণবন্তঃ ও সেরা ডানহাতি ফাস্ট বোলার ছিলেন। পর্যাপ্ত বাউন্স ও আউট সুইঙ্গার প্রদান সক্ষম ছিলেন। ফলশ্রুতিতে, ব্যাটসম্যানকে বলের কাছাকাছি নিয়ে যেতে প্রলুদ্ধ করতো। ১৯৮০-এর দশকে রুমেশ রত্নায়েকে’র সাথে চমৎকার বোলিং জুটি গড়েছিলেন। রিচি রিডার্সনের মুখে বাউন্সারে আঘাত হানে ও ক্লাইভ লয়েডকে হেলমেট পরিধানে বাধ্য করেছিলেন। ১৯৮১-৮২ মৌসুম থেকে ১৯৮৬-৮৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবের পক্ষে খেলতেন। এ সময়ে শ্রীলঙ্কায় অন্যতম প্রধান বোলারের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।

১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ১৭ টেস্ট ও ৫৭টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮১-৮২ মৌসুমে নিজ দেশে কিথ ফ্লেচারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশ করেন। নিজস্ব প্রথম দুইটি ওডিআই থেকে ৪/৩৪ ও ২/১১ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।

এরপর, একই সফরের ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। কলম্বোর পিএসএসে অন্য সকলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ফলশ্রুতিতে, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন। আইসিসি’র পূর্ণাঙ্গ সদস্যের মর্যাদাপ্রাপ্তির পর শ্রীলঙ্কার প্রধান ফাস্ট বোলার ছিলেন। পাইকিয়াসোথি সারাভানামুত্তু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টর প্রথম ইনিংসে ৪/৭০ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১/৩৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। তন্মধ্যে, জিওফ কুককে উভয় ইনিংসেই বিদেয় করেছিলেন। ঐ খেলায় ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়লাভ করেছিল। তবে, জন এম্বুরি’র অসাধারণ বোলিংয়ের কল্যাণে সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয়।

এরপর পাকিস্তান সফর করেছিলেন। মনেপ্রাণে বোলিং করে নিজ নামের পার্শ্বে ১১ উইকেট লেখান। এছাড়াও, রক্ষণাত্মক ধাঁচের বোলিংয়ের কারণেও পরিচিতি লাভ করেন।

১৯৮২-৮৩ মৌসুমে বান্দুলা বর্ণাপুরা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৮২ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ঐ টেস্টে ১৭৫ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় স্বাগতিক ভারত দল অগ্রসর হয়। এ পর্যায়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৬৮ বোলিং করে খেলায় বিরাট প্রভাব ফেলেন ও খেলাটিকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যান। এরফলে প্রথম শ্রীলঙ্কান হিসেবে ইনিংসে পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্ব দেখান। তবে, দিলীপ মেন্ডিসের জোড়া শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।

ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার তৃতীয় আসরে অংশ নেন। ১৫.৫৮ গড়ে ১৭ উইকেট দখল করে প্রতিযোগিতায় রজার বিনি’র পর মদন লালের সাথে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন। ৬ খেলায় অংশ নিয়ে প্রত্যেক খেলাতেই কমপক্ষে একটি উইকেট লাভ করেছিলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫/৩৯ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫/৩২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এছাড়াও, ১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলীয় তারকা বোলার গ্যারি গিলমোরের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার এক আসরে দুইবার পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছিলেন। এ আসরে প্রতিপক্ষের অনেকের কাছেই তাঁর পেস বোলিং বেশ সমীহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

১৯৮৫ সালে শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্টে জয়সহ সিরিজ বিজয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ভারতের বিপক্ষে ৫/১২৭ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এছাড়াও, ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমের শীতকালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩/৩৮ ও ৩/৭৯ নিয়ে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় টেস্ট বিজয়ের সাথেও নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন।

একই মৌসুমে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে পাকিস্তান গমন করেন। ৭ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৩ ও ১৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৬/১০৯ ও ০/২৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, অরবিন্দ ডি সিলভা’র অসাধারণ শতক সত্ত্বেও স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে ভারত সফরে যান। ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ২৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

দূর্ভাগ্যজনকভাবে ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। ঐ প্রতিযোগিতায় ভিভ রিচার্ডসের ন্যায় বিখ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট তারকার মুখোমুখি হয়েছিলেন। ৫০-ওভারের খেলায় ৯৭ রান খরচ করে তৎকালীন খরুচে বোলারে পরিণত হন।

প্রথম শ্রীলঙ্কান হিসেবে টেস্ট ও ওডিআইয়ের উভয় স্তরের ক্রিকেটে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এছাড়াও, উভয় পর্যায়েই ৫৯ উইকেট পেয়েছিলেন। চামিণ্ডা ভাসরঙ্গনা হেরাথকে পাশ কাটিয়ে টেস্টে শ্রেয়তর ৫৯.৬০ স্ট্রাইক রেটে বোলিং করেন। এছাড়াও, অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলো থেকে ৩১% উইকেট নিজে দখল করেন।

নিচেরসারির মারকুটে ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে একটি শতক হাঁকিয়েছিলেন। তবে, পুণঃপুণঃ হাঁটুর আঘাতের কারণে ২৮ বছর বয়সে অনেকটা আগেভাগেই তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের অকাল সমাপ্তি ঘটে।

ব্যক্তিগত জীবনে কম্পিউটার প্রোগ্রামার ছিলেন। ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি রাগবি খেলায় অংশ নিতেন। এছাড়াও, কমনওয়েলথ গেমসে ব্রিজ বিষয়ে শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সিলন পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সভাপতি, জাতীয় পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যবস্থাপকসহ ২২ মে, ২০০৪ তারিখে দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনা হয়। এরফলে, ২০১০ সালে এ দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়। তবে, জানুয়ারি, ২০১২ সালে পুণরায় স্ব-পদে ফিরিয়ে আনা হয়।

১৯ জানুয়ারি, ২০১২ তারিখে তাঁকে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়। তিনি দিলীপ মেন্ডিসের স্থলাভিষিক্ত হন।

Similar Posts

  • | | |

    গুলাম আহমেদ

    ২৮ জুলাই, ১৯২২ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতের প্রথম সেরা অফ-স্পিনার হিসেবে নিজের পরিচিতি ঘটিয়েছেন। বেশ দেরীতে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে সংযুক্তি ঘটে। ১৯৩৯-৪০ মৌসুম থেকে…

  • |

    প্রসন্ন জয়াবর্ধনে

    ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৯ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা উইকেট-রক্ষকের গুণাবলী নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন। উইকেট-রক্ষণের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ের সমান যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন। ১৯৯৮ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় সেরা উইকেট-রক্ষকের মর্যাদা লাভ করেন। সেন্ট সেবাস্টিয়ান্স কলেজ একাদশের পক্ষে তিন…

  • |

    এনামুল হক, ১৯৮৬

    ৫ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য জেলা সিলেটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামেন। বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। লাফিয়ে ও মিতব্যয়ী বোলিং কর্মে অগ্রসর হন। ২০০১-০২ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন সরব রেখেছেন। ঘরোয়া আসরের…

  • | |

    সলিল আঙ্কোলা

    ১ মার্চ, ১৯৬৮ তারিখে মহারাষ্ট্রের শোলাপুর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দীর্ঘকায় ও সুদর্শন চেহারার অধিকারী ফাস্ট বোলার। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুম থেকে ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…

  • |

    পিটার ফন ডার বিল

    ২১ অক্টোবর, ১৯০৭ তারিখে কেপ প্রভিন্সের কেনিলওয়ার্থ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৯৩০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের শুরুরদিকের অন্যতম তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। বেশ দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী ছিলেন। রন্ডেবশের ডিওসিসান কলেজ থেকে রোডস বৃত্তি লাভ করে অক্সফোর্ডের ব্রাসনোস কলেজে চলে…

  • |

    এস শ্রীশান্ত

    ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে কেরালার কথামঙ্গলমে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ‘গপু’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ২০০২-০৩ মৌসুম থেকে ২০১২-১৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের…