|

অলোক কাপালী

১ জানুয়ারি, ১৯৮৪ তারিখে সিলেটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। মাঝারিসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

অনেক উদীয়মান ও প্রতিভাবান বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের ভীড়ে তিনিও নিজেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত করতে পারেননি। টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাট্রিক লাভ ব্যতীত বাংলাদেশ দলে তেমন সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। তাঁর কব্জির কারুকাজ লক্ষ্য করতে অনেকেই অনুশীলন পর্ব দেখতে আসতেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে ২০-এর নীচে রান তুলতে পেরেছিলেন।

২০০০-০১ মৌসুম থেকে ২০২১-২২ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে পূর্বাঞ্চল ও সিলেট বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়াও, বরিশাল বার্নার্স, ঢাকা ওয়ারিয়র্স ও রাজশাহী রয়্যালসের পক্ষে খেলেছেন। ২০০০-০১ মৌসুমে তাঁর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয়। শুরু থেকেই বেশ প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখেন। ব্রায়ান লারা’র ন্যায় অফ-সাইডে পুল ও কব্জির মোচরে বল প্রেরণ করে অনেক দর্শকের মনোরঞ্জন করেছেন।

২০০২ থেকে ২০১১ সময়কালে বাংলাদেশের পক্ষে সব মিলিয়ে ১৭ টেস্ট, ৬৯টি ওডিআই ও সাতটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। তন্মধ্যে, অংশগ্রহণকৃত সবগুলো টেস্টেই তাঁর দল পরাজয়বরণ করে। ২০০২ সালে উদীয়মান ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে এগিয়ে আসেন। ঐ বছর খালেদ মাসুদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দলের সাথে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ১৮ বছর বয়সে ২৮ জুলাই, ২০০২ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। তাপস বৈশ্য ও তুষার ইমরানের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ব্যাট হাতে ৩৯ ও ২৩ রান সংগ্রহের পাশাপাশি বল হাতে ১৭৬ রান খরচায় দুই উইকেটের সন্ধান পান। তবে, মাইকেল ভ্যানডর্টের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ২৮৮ রানে পরাজিত হলে তাঁর দল ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

অল্প কিছুদিন বাদে ৪ আগস্ট, ২০০২ তারিখে একই মাঠে ও একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তাঁর ওডিআই অভিষেক ঘটে। তবে, ঐ খেলায় তেমন সুবিধে করতে পারেননি। মাত্র ২ রান সংগ্রহ করেন ও কোন উইকেট লাভে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। তিন-খেলা নিয়ে গড়া পুরো সিরিজেই তিনি খেলেন। সব মিলিয়ে মাত্র ১৫ রান সংগ্রহ করেন ও একটিমাত্র উইকেট লাভ করেন।

তাসত্ত্বেও দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর উপর আস্থা রেখে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পরবর্তী সিরিজে তাঁকে দলে রাখেন। ২০০২-০৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে খালেদ মাসুদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৮ অক্টোবর, ২০০২ তারিখে ইস্ট লন্ডনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩৫ ও ১০ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/১০৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। গ্রায়েম স্মিথের অনবদ্য দ্বি-শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১০৭ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশের প্রথম বছরেই ঢাকায় অনুষ্ঠিত সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে ৯২ বল মোকাবেলায় ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন। পরের দুই সপ্তাহে অনুষ্ঠিত টেস্টগুলোয় একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আরও দুইটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস হাঁকান। তন্মধ্যে, ঢাকায় প্রথম ইনিংসে ৫২ রান তুলে দলের সংগ্রহকে ১৩৯ রানে নিয়ে যেতে ভূমিকা পালন করেন। ১৬ ডিসেম্বর, ২০০২ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত পরবর্তী টেস্টে স্বীয় প্রতিভার আরও বিচ্ছুরণ ঘটান। ৮৫ রান তুলে দলের পরাজয়কে বিলম্বিত করেন। পরবর্তীতে এটিই তাঁর সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহে পরিণত হয়।

২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও ধারাবাহিকতাহীন খেলেন। এ পর্যায়ে পায়ের কারুকাজে বেশ স্থবিরতা লক্ষ্য করা যায়। তাসত্ত্বেও, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এরপর, পাকিস্তানের বিপক্ষে দুইটি অর্ধ-শতকসহ টেস্টে হ্যাট্রিক করেন। তন্মধ্যে, ২৭ আগস্ট, ২০০৩ তারিখ থেকে শুরু হওয়া পেশাওয়ার টেস্টে লাভ করা হ্যাট্রিকটি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা হিসেবে চিত্রিত হয়ে যায়। এ পর্যায়ে ১৯ বছর ২৪০ দিন বয়স নিয়ে বাংলাদেশের কনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে হ্যাট্রিক লাভ করেন। শাব্বির আহমেদ, দানিশ কানেরিয়া ও উমর গুল তাঁর শিকারে পরিণত হন। ঐ টেস্টে অবশ্য শোয়েব আখতারের দশ উইকেট লাভের কারণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পায়। তবে, পরবর্তী চার বছরে কেবলমাত্র কেনিয়ার বিপক্ষে ৫৫ রানের ইনিংসটি খেলোয়াড়ী জীবনের উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল।

ওডিআই দলে আসা-যাবার পালায় থাকতেন। ১ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ তারিখে নাইরোবির জিমখানায় স্বাগতিক কেনিয়ার বিপক্ষে টি২০আইয়ে প্রথম খেলেন। ১৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলের জয়ে ভূমিকা রাখেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যস্ততার কারণে সিলেটের পক্ষে অনেকগুলো প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অনুপস্থিত ছিলেন। জুন, ২০০৮ সালে এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে শতরানের ইনিংস খেলেন। ৯৬ বল থেকে ১১৫ রানের এ ইনিংসটিই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর একমাত্র শতক হাঁকানোর ঘটনা ছিল। করাচীতে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় অবশ্য বাংলাদেশ দল জয়ের সন্ধান পায়নি। ঐ সময়ে এটিই এশিয়া কাপে যে-কোন বাংলাদেশী খেলোয়াড়ের দ্রুততম শতরান ছিল। পরবর্তীতে, সাকিব আল হাসান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬৩ বলে শতক হাঁকিয়ে রেকর্ডটি নিজের করে নেন।

কিন্তু, কয়েক মাসের ব্যবধানে ২০০৮ সালে অনুমোদনবিহীন ইন্ডিয়ান লীগে অংশ নিলে বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে দূরে সড়ে যান। হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত ঐ প্রতিযোগিতায় ৬০ বলে ১০০ রান তুলে স্কুটার লাভ করেন। তবে, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের পক্ষে অংশ নেয়া খেলোয়াড়েরা পুরো দেশ জুড়ে স্বীয় সমর্থক হারায়। বিসিবি কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন ও জুন, ২০০৯ সালে আইসিএল থেকে ফিরে আসার পর দলে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। এপ্রিল, ২০১১ সালে জাতীয় দলে পুণরায় যুক্ত হন। তবে, আট মাস পর ডিসেম্বর, ২০১১ সালে নিজ দেশে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার পর বাদ পড়েন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের উদ্বোধনী আসরে বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দল সিলেট রয়্যালসের ‘প্রতীকি খেলোয়াড়’ ছিলেন। ৯ খেলা থেকে ১২৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ প্রতিযোগিতার পরবর্তী দুই আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০১৫-১৬ মৌসুমে বিপিএল আসরের চূড়ান্ত খেলায় ৩৯ রান তুলে দলের শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন।

Similar Posts